Published : 23 Mar 2022, 05:30 PM
এক
ওজনে তিনি কম নন, গুণেও তার খামতি নেই। তার রাজনৈতিক আদর্শে কিছু সন্দেহ থাকলেও থাকতে পারে। কারণ সবার রাজনৈতিক মতাদর্শ এক রকম নাও হতে পারে, এক রকম হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। যুদ্ধের ময়দানে পরস্পরবিরোধী মতাদর্শ নিয়ে লড়াই চলতে পারে। কিন্তু অ-রণক্ষেত্রে মতাদর্শ নিয়ে লড়াই নয়, বাদ-বিতণ্ডা চলতে পারে; এর বেশি কিছুতেই নয়। একেই বলা যেতে পারে 'গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা'। পশ্চিমা বিশ্বে- এটা এখন খুব দুর্লভ। দে বিলিভ ইন ওনলি লিপ-সার্ভিস, যাকে বলে বাকোয়াজি। এটা তিনি মানেন না। তার নাম পল ক্রেইগ রবার্টস।
পল ক্রেইগ রবার্টস একজন আমেরিকান অর্থনীতিবিদ এবং লেখক। রোনাল্ড রিগ্যানের আমলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বাণিজ্য দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (ইকোনমিক পলিসি) ছিলেন। বেশ কয়েকটি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। বর্তমানে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কঠোর সমালোচক। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার ডক্টরেট। ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেসে অ্যানালিস্ট ও অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন। সরকারি চাকরি ছাড়ার পর ১০ বছর সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টান্যাশনাল স্টাডিজে অর্থনীতির 'উইলিয়াম ই সিমসন চেয়ার' পদে ছিলেন। বেশকিছু করপোরেট বোর্ডে কাজ করেছেন। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে অ্যাসোসিয়েট এডিটর ছিলেন। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, হারপারর্সসহ বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেছেন। ডজন খানেকের উপরে বই লিখেছেন ও গবেষণাপত্র রিভিউ করেছেন। ১৯৮৭ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর কাছ থেকে 'লিজিয়ন অব অনার' খেতাব নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বাণিজ্য দপ্তরের 'মেরিটরিয়াস সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড' পেয়েছেন। মেক্সিকো প্রেস ক্লাব থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য 'ইন্টান্যাশনাল জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড' পেয়েছেন।
পল ক্রেইগ রবার্টসের বিরুদ্ধে অবসরের পর থেকে অ্যান্টি-সেমিটিজমের অভিযোগ তোলা হয়েছে এবং এখনো তোলা হচ্ছে। তিনি প্রথাগত ভাষায় একজন 'কনজারভেটিভ'; রিপাবলিকান-লিবারেটারিয়ান। তবে নিওকন (নিও-কনজারভেটিভ) নন; বরং 'নিওকন'দের কঠোর সমালোচনা করেন।
তার উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে 'প্রেস্টিটিউট' পরিভাষা আবিস্কার। ৯৫ ভাগ মার্কিন ও ব্রিটিশ মিডিয়াকে এবং তাদের সহযোগী মার্কিন ও ইউরোপীয় মিডিয়াকে এবং এতদ্রুপ অন্যান্য দেশের মিডিয়াকে তিনি 'প্রেস্টিটিউট' নামে অভিহিত করেন। ক্রেইগের সারকথা হলো- সারা দুনিয়ার আইএস (ইসলামিক স্টেট), আল-কায়দা, আল-নুসরা, ফাতাহ আল-শাম প্রভৃতি জঙ্গি-সমর্থক এবং মার্কিন নীতির বিশেষ করে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সমর্থক তথা তোতার বুলি আওড়ানো মিডিয়াকে তিনি 'প্রেস্টিটিউট' (প্রেস+প্রস্টিটিউট) বলেন। পল ক্রেইগ রবার্টসের কয়েকটি আর্টিকেলের শিরোনাম নিম্নরূপ:
So Biden, Sullivan, Stoltenberg, UK PM & defense officials, presstitutes, where is the "Russian Invasion?, February 15, 2022 ;
Can America Survive Its Racial Double-Standard and Sordid Presstitutes?, March 28, 2021 ;
US Pledges Presstitutes $300 Million for a Propaganda Campaign Against China, April 27, 2021|
Paul Craig Roberts Institute for Political Economy- এর নামে তার একটি অফিশিয়াল হোমপেইজ আছে (https://www.paulcraigroberts.org/)।
যারা আগ্রহী তারা রাশিয়া-ইউক্রেইন ইস্যুতে তার হোমপেইজটি দেখে নিতে পারেন।
দুই
পূর্ব ইউক্রেইনের মারিউপল শহরে এখন স্ট্রিট ফাইটিং চলছে। দনেৎস্কের মিলিশিয়ারা এবং রাশিয়ার বাহিনী মারিউপল শহরকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করছে। এ শহরে ইউক্রেইনের ন্যাশনাল গার্ডের অধীন আজভ ব্যাটালিয়নের হেড-কোয়ার্টার। অবশ্য আজভকে এখন ব্যাটালিয়ন বলা ঠিক নয়, আজভ এখন ব্রিগেড। ইউক্রেইনে যাদের নব্যনাৎসি বলা হয় তাদের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটেল ফরমেশন হচ্ছে 'আজভ'। আজভ উপসাগরীয় এলাকার নামে এর নাম।
আজভ ব্যাটালিয়ন এবং তাদের সহযোগী অন্যান্য ফরমেশনের শহরকেন্দ্র রক্ষা করার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তারা এখন বেসামরিক পোশাকে রণক্ষেত্র থেকে পালানোর পাঁয়তারা করছে, কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে খুবই কম। দনেৎস্ক ও রাশিয়ার বাহিনী তাদের গতিরোধ করছে। মারিউপলের পতন হলেই ফ্রন্টলাইন যৌথবাহিনীর দখলে চলে আসবে। শহরের বেশকিছু এলাকা আগেই মুক্ত হওয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য এক্সিট করিডোর খুলে দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেইনের তথাকথিত জাতীয়তাবাদীদের জন্য এটা অশনিসংকেত। কারণ মুক্ত বেসামরিক নাগরিকরা আজভ ব্যাটালিয়নের কুকীর্তি ফাঁস করে দিচ্ছে। শহর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুক্ত করাই দনেৎস্ক মিলিশিয়াদের মূল লক্ষ্য, কারণ যেসব বেসামরিক নাগরিক এখনো জিম্মি অবস্থায় আছে তাদের মেরে ফেলতে পারে আজভ ব্যাটালিয়ন এবং জাতীয়তাবাদীরা।
সম্প্রতি মুক্ত হওয়া মারিউপলের একজন নারী বলেছেন (সাউথফ্রন্ট থেকে উদ্ধৃতি)-
They gather people into a large group, they say that there will be a humanitarian corridor. People are gathering. They destroy them there, they kill them there. This is done by the Azov. There is no one else. We don't have Russian troops, we don't have the DPR, we don't have anyone. They and only they. With blue armbands.
আজভ ব্যাটালিয়নটা কী জিনিস? কখন-কীভাবে এটি সক্রিয় হলো?
ইউক্রেইনে একটা নিও-নাজি এজেন্ডা আছে। এর ডকুমেন্টেশন হয়েছে। ''আমাদের (কানাডার) সরকার এবং মিডিয়া উভয়েই তা একদম অস্বীকার করছে। পরিহাসের বিষয় হল, ইউক্রেনেরই মেইনস্ট্রিম মিডিয়া 'কিয়েভ পোস্ট' নিও-নাজি সামার ক্যাম্পের বাচ্চাদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টারির বিস্তারিত খবর ছেপেছে। সম্প্রতি এটিরই ফুটেজকে, যাতে ইউক্রেইনের বাচ্চাদের সামনে ভয়ঙ্কর অপরাধের দৃশ্য দেখানো হয়েছে, বলা হচ্ছে প্রো-ক্রেমলিন প্রোপাগান্ডা।'' খসুদভ্স্কি বলেছেন-
We are at a dangerous crossroads. What is happening in Ukraine has serious geopolitical implications. It could lead us into a World War III Scenario. The use of nuclear weapons are contemplated. … . It is important that a peace process be initiated with a view to preventing escalation. … . Global Research does not support Russia's invasion of Ukraine. A bilateral Peace Agreement is required." (Michel Chossudovsky, February 27, 2022)
কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এমেরিটাস অধ্যাপক মিশেল খসুদভ্স্কি আজভ ব্যাটালিয়ন বিষয়ে প্রথম লেখাটি লিখেছিলেন ২০১৫ সালের ৯ অগাস্ট। ২০২২ সালের পয়লা মার্চ ইউক্রেইনে রাশিয়ার স্পেশাল অভিযান শুরুর পর লেখাটি আবার প্রকাশ করা হয়েছে; শিরোনাম: ''ইউক্রেইন'স 'নিও-নাজি সামার ক্যাম্প': মিলিটারি ট্রেইনিং ফর ইয়ং চিলড্রেন/রিক্রুটমেন্ট অব ইউক্রেইন'স 'চাইল্ড সোলজার্স' ফাইনান্সড বাই ইউএস 'ননলেথাল' মিলিটারি এইড?''
এ লেখা থেকেই জানা যায়-
ইউক্রেইনে একটা নিও-নাজি এজেন্ডা আছে। এর ডকুমেন্টেশন হয়েছে। ''আমাদের (কানাডার) সরকার এবং মিডিয়া উভয়েই তা একদম অস্বীকার করছে। পরিহাসের বিষয় হলো, ইউক্রেইনেরই মেইনস্ট্রিম মিডিয়া 'কিইভ পোস্ট' নিও-নাজি সামার ক্যাম্পের বাচ্চাদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টারির বিস্তারিত খবর ছেপেছে। সম্প্রতি এটিরই ফুটেজকে, যাতে ইউক্রেইনের বাচ্চাদের সামনে ভয়ঙ্কর অপরাধের দৃশ্য দেখানো হয়েছে, বলা হচ্ছে প্রো-ক্রেমলিন প্রোপাগান্ডা।''
অনেকের কাছেই অজানা, মার্কিন সরকার এই নিও-নাজি বা নব্যনাৎসি উদ্যোগের (এন্টিটি) জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, সমরাস্ত্র দিচ্ছে এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর নাম 'আজভ ব্যাটালিয়ন' (বাতালিয়ন আজোভ)। এটি ইউক্রেইনের ন্যাশনাল গার্ডের অংশ। কানাডা এবং ব্রিটেনও ন্যাশনাল গার্ডকে প্রয়োজনীয় সহায়তা জোগাচ্ছে।
'আজভ ব্যাটালিয়ন' অফিশিয়ালি নাজি (নাৎসি) এসএস প্রতীক ব্যবহার করে। ন্যাশনাল গার্ড ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন (আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সমতুল্য)। অফিশিয়ালি এর অবস্থান বারদিয়াঙ্কে, আজভ উপসাগরের পারে। এর লক্ষ্য দনবাস এলাকার বিদ্রোহ দমন করা (ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল)।
শুধু প্যারা-মিলিটারি কর্মকাণ্ডেই তারা জড়িত নয়, পশ্চিমা সহায়তায় ইউক্রেইনে (কিইভ পোস্টের বিবরণ অনুযায়ী) তারা শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য সামার ক্যাম্প পরিচালনা করে। ছয় বছরের বাচ্চারাও তাতে অংশ নিয়েছে। তাদের অনেকেই এখন বেশ বড় হয়ে গেছে।
মার্কিন কংগ্রেসে 'ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস্ অ্যাক্ট অব ২০১৫'- এ সংশোধনী এনে আজভ ব্যাটলিয়নের নব্যনাৎসিদের প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে বলা হলেও বাস্তবে অর্থসহায়তা চুঁইয়ে পড়ার রীতি অনুসরণ করেছে। পেন্টাগনের চ্যানেল দিয়ে চুঁইয়ে পড়া বন্ধ করা যায়নি। ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে ইউক্রেইনের ন্যাশনাল গার্ডের পার্টনারশিপ তৈরি হয়েছে, তাতে আজভ ব্যাটালিয়নও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আমেরিকার ন্যাশনাল গার্ডের কোনো ইউনিটে নব্যনাৎসিদের কি কল্পনা করা যায়! সম্ভবত যায় না। কিন্তু আমেরিকা ইউক্রেইনে নব্যনাৎসীদের বিকশিত হতে দিয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি ইউক্রেইনে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন কিইভ সরকারকে 'ডি-নাজিফাই' (নাৎসিমুক্তকরণ) করার জন্য। আর পশ্চিমা কর্মকর্তারা- যেমন রাশিয়ায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফাউল- পুতিনের একথাকে 'বিশুদ্ধ প্রোপাগান্ডা' আখ্যায়িত করে বলেছেন, 'ইউক্রেইনে কোনো নাৎসি নেই।'
তিনি বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।
কিন্তু আজভ বাহিনীতে নব্যনাৎসিদের থাকাটা স্পষ্ট, থাকাই স্বাভাবিক। আজভ ব্যাটালিয়নের ২০-২৫ শতাংশ হার্ডকোর নিও-নাৎসি। বাকীরা সমমনা এবং নাৎসি-শুভানুধ্যায়ী। রাশিয়ার অভিযানের পর বিষয়টা আরো পরিষ্কার হলো। রাশিয়া বলছে, ন্যাটোর প্রচার-প্রচারণা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। আর ন্যাটো-ইইউ নাৎসিদের বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চাইছে।
প্রচারণার মাধ্যমে পাশ্চাত্য এবং তার ইউক্রেইনি মিত্ররা ইউক্রেইনের চরম ডানপন্থিদের সুযোগ করে দিচ্ছে এবং ক্ষমতায়িত করছে। প্রথমে তারা ২০১৪ সালে একটা অভ্যুত্থান ঘটানোর সুযোগ নিয়েছে। পরে তারা নব্য-নাৎসিদের পূর্ব ইউক্রেইনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করার কাজে ব্যবহার করেছে এবং এখনো করছে। ইউক্রেইনের নিও-নাজি পার্টি সভোবোদা এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ওলেগ তিয়াখ্নিবক ও আন্দ্রেই পারুবিয়ী ২০১৪ সালের মার্কিন-সমর্থিত অভ্যুত্থানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তৎকালীন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড এবং ইউক্রেইনে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিয়াট উল্লেখ করেছেন, ''তিয়াখ্নিবক অন্যতম নেতা, তারা ক্যু- এর আগে থেকেই সক্রিয়। যদিও ক্যু-এর পরে তাকে সরকারি পদ থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। ফাঁস হওয়া ফোন কলে তা পরিস্কার করা হয়েছে (ন্যুল্যান্ড ও পিয়াটের ফোন কল)।''
২০১৪ সালে তারা কিইভে শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে পুলিশের সাথে দাঙ্গা বাঁধাতে গেছে, ব্যারিকেড ভাঙার জন্য সশস্ত্র মার্চ করেছে, পার্লামেন্ট ভবনে হাজির হয়েছে, সভোবোদার ক্যাডাররা এবং নবঘটিত রাইট সেক্টরের মিলিশিয়ারা দিমিত্রি ইয়ারোশ- এর নেতৃত্বে পুলিশের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
২০১৪ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি নাগাদ রাইট সেক্টরের নেতারা সশস্ত্র হয়ে ময়দানের নেতায় পরিণত হয়। মার্কিন ভূমিকা এবং চরম ডানপন্থিদের অংশগ্রহণ ছাড়া শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সশস্ত্র আন্দোলন হতে পারত কি! ইয়ারোশ ময়দানের মঞ্চে উঠে ফ্রেঞ্চ, জার্মান ও পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত চুক্তি (২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪) নাকচ করে দিয়েছিলেন।
ইয়ারোশ এবং রাইট সেক্টর অস্ত্র ত্যাগ করতে অস্বীকার করে এবং তারা পার্লামেন্ট অভিমুখে মার্চ করেছিল। এর ধারাবাহিকতাতেই ইয়ানুকোভিচ্ সরকারের পতন ঘটে।
ক্যু-র পরে সরকারে সভোবোদাকে তিনটি মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়, ২৫টি প্রদেশের মধ্যে তিনটির গভর্নরশিপ দেওয়া হয়। সভোবোদার আন্দ্রেই পারুবিয়ী পার্লামেন্টের স্পিকার নিযুক্ত হন, তিনি পাঁচ বছর স্পিকার ছিলেন। মে মাসের ২ তারিখে ৪২ জন ক্যু-বিরোধী প্রতিবাদকারীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, ওদেসার ট্রেড ইউনিয়ন হাউসে। রাইট সেক্টরের আলাদা ব্যাটলিয়ন আছে। নব্যনাৎসীরা আজভ ব্যাটালিয়নের মূল শক্তি। একথা আমেরিকান অর্ধসাপ্তাহিক 'কাউন্টারপা'- এ বলা হয়েছে (কাউন্টারপা ডটওআরজি/হাউ দ্য ইউএস হ্যাজ এম্পাওয়ার্ড অ্যান্ড আর্মড্ নিও-নাজিস ইন ইউক্রেইন)।
আমেরিকার কনসোর্টিয়ামনিউজে বলা হয়েছে, ''ন্যাটোর ডি-ফ্যাক্টো থিংক ট্যাংক দ্য আটলান্টিক কাউন্সিল ২০১৪ সালের এক প্রবন্ধে কুখ্যাত নব্যনাৎসি আজভ ব্যাটালিয়নকে প্রশংসা করে লিখেছে, তারা 'অ্যান্টি-রাশিয়ান হিরো'।'' দ্য আটলান্টিক কাউন্সিল ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রভাবশালী থিংক ট্যাংক। তারা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থসাহায্য পায়, অনেক পশ্চিমা সরকারের অনুদান পায়। ন্যাটো এবং অস্ত্র কম্পানির টাকা পায়। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রণয়নে (বিশেষ করে রাশিয়ার বিষয়ে) তাদের বিশেষ ভূমিকা আছে।
"The Atlantic Council published a report in June 2014 titled "The Battle For Mariupol." It was little more than a press release for Azov, written by a reporter who embedded inside the neo-Nazi militia. … . Azov preaches a white supremacist Nazi ideology that portrays Ukrainians as a pure white race fighting "Asiatic" Russians in a war to maintain racial purity. The battalion uses explicit Nazi symbols, including the German Wolfsangel and Black Sun. … . After a 2014 U.S.-sponsored coup d'etat in Ukraine, in which far-right extremist groups played a leading role, Azov was officially incorporated into the country's National Guard. 27, 2022"
কিইভে এখন কার্যত কোনো সরকার নেই। একটা অ-সরকার বসে আছে। মার্কিন 'অধি-কর্তৃপক্ষ' এ সরকারের কারো সাথে মধ্যস্থতার ক্ষমতা অবশিষ্ট রাখেনি। কারো জন্যই তারা এ ধরনের ক্ষমতা অবশিষ্ট রাখে না। কোনো নজির তাদের পক্ষে দাঁড় করানো যাবে না। এখন তারা উন্মাদনা রোগে ভুগছে। কেউ তাদের এ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারবে বলে মনে হয় না। দে আর সাফারিং ফ্রম ওয়েস্টার্ন হোয়াইট সুপ্রিমেসি। আজভ ব্যাটালিয়নের, রাইট সেক্টর ব্যাটালিয়নের লোকজনও একই রোগে ভুগছে। কে তাদের রক্ষা করবে?
তিন
সিআইএ এত বছর ধরে 'কনস্পিরেসি থিওরি' বলে গলাবাজি করেছে কিন্তু ফ্যাক্ট চেকের প্রয়োজন বোধ করেনি। এখন ইউক্রেইনে তা ঘটছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারভা বলেছেন, 'তোমাদের কী উৎপাদন (প্রোডাক্ট) আমরা তা দেখতে পেয়েছি, আমরা তোমাদের বায়োলজিক্যাল ম্যাটেরিয়াল পেয়েছি।'
ইউক্রেইনের বায়োল্যাবে ব্যাট-করোনা ভাইরাসের স্যাম্পল এবং আরো অনেক নমুনা পাওয়া গেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে যাতায়াতকারী বাদুড় ব্যবহার করে দেশ দুটিতে করোনার নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট ছড়ানোর পরিকল্পনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের- এমন কথাও উঠেছে। চীন ইউক্রেইনের বায়োল্যাবে প্রাপ্ত নমুনার যথাযথ ব্যাখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সাবেক প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য (কংগ্রেসওমেন, রিপ্রেজেন্টেটিভ) তুলসি গ্যাবার্ডও এ প্রশ্ন তুলেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এবং সিনেটর মিট রমনি এ জন্য তাকে 'ট্রিজনাস লায়ার' বলেছেন। রমনি বলেছেন, তিনি (তুলসি) রাশিয়ার প্রোপাগান্ডা তোতাপাখির মত আওড়াচ্ছেন। এটা বিশ্বাসঘাতকতা। জবাবে তুলসি বলেছেন, ইউক্রেইনে মার্কিন অর্থসহায়তায় ২৫টি বায়োল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দরকার। নব্যনাৎসিদের হাতে পড়লে কী বিপদ হতে পারে তা সবার অনুধাবন করা দরকার।
প্রসঙ্গত, বাইডেনের আন্ডার সেক্রেটারি (পলিটিকেল অ্যাফেয়ার্স) ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড কার্যত এগুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের 'বায়োলজিক্যাল রিসার্চ ফ্যাসিলিটিজ' হিসেবে।
নব্যনাৎসি বিষয়ক শংকা সবার মধ্যেই কাজ করছে। ইউক্রেইনের ল্যাবে রাখা জীবাণু ধ্বংসের পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'যুদ্ধের সময় মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে ইউক্রেইনের পরীক্ষাগারগুলোতে সংরক্ষিত উচ্চঝুঁকির প্যাথোজেন বা জীবাণুগুলো' ধ্বংস করে ফেলার পরমর্শ দিয়েছে।
মারিয়া জাখারভা জানিয়েছেন, ইউক্রেইনে রুশ বাহিনী যেসব নথি উদ্ধার করেছে তাতে দেখা গেছে, পরীক্ষাগারের নমুনা ধ্বংস করার মাধ্যমে "সামরিক জীবাণু কর্মসূচি পরিচালনার প্রমাণ তড়িঘড়ি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।"
জবাবে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেছেন, "ইউক্রেইন এ অভিযোগ নাকচ করছে।" পরিস্থিতি যথেষ্ট গোলমেলে তাতে সন্দেহ নেই।
এ কারণেই রাশিয়া ইউক্রেইনে সামরিক অভিযানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, 'অসামরিকীকরণ' তথা ডিমিলিটারাইজেশন এবং 'নাৎসিনির্মূলকরণ' তথা ডিনাজিফিকেশন। ইউক্রেইনের বর্তমান সরকার যে নব্যনাৎসি-অধ্যুষিত এটা রাশিয়া এবং পুতিন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। বিভিন্ন লেখায়, দলিলে এই নব্যনাৎসিদের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ক প্রমাণের কোনো অভাব নেই।
রাশিয়ার হিসেবেও বেশকিছু ভুল ছিল। কিইভের এবং ইউক্রেইনের রণাঙ্গনের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা ছিল না। চতুর্থ দিনে তারা ভুল শুধরেছে। ততদিনে তাদের ৪৯৮ জন সেনা নিহত হয়েছে। বড় বড় শহর ঘেরাও করলেও সরেজমিনে তাদের অভিযান কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফল হয়নি। তাদের এগোতে হচ্ছে ধীরে। বড় কোনো হুমকি আপাতত নেই। তবে দনেৎস্ক অঞ্চলে আজভ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক বেসামরিক নাগরিকদের জিম্মি করার হুমকি আছে। নব্যনাৎসিরা আটকেপড়া বেসামরিক নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এমন সমস্যার কথা রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর সময়ে ভাবেনি। এতে তাদের গতি ধীর হয়েছে।
পল ক্রেইগ রবার্টসের লেখাতেও নব্যনাৎসিদের কথা খোলামেলাভাবেই বলা হয়েছে। এধরনের কভার্ট-ওভার্ট সমর্থনের কারণেই মূলধারার মিডিয়াকে তিনি 'প্রেস্টিটিউট' আখ্যা দিয়েছেন। রাশিয়ার কথায় নয়, নিজের বিবেচনাতেই তিনি এ কাজ করেছেন, জন্ম দিয়েছেন নতুন টারমিনোলজির তথা পরিভাষার। আজভ ব্যাটালিয়ন ধামাচাপা দেওয়ার মতো বিষয় নয়। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না।