Published : 08 Feb 2022, 08:25 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক পর্যায়ে নির্ধারিত আসন সংখ্যার পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি ডিন কমিটি একসভায় একটি সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। এই সুপারিশ অনুযায়ী বর্তমান আসন সংখ্যা ৭১২৫ থেকে ৬১১০ এ দাঁড়াবে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তাদের সামর্থ্য আর অবকাঠামোগত ধারণক্ষমতা মোতাবেক চাহিদা জানাতে বলা হয়েছিল। তাদের কাছে থেকে প্রস্তাব এসেছিলো মোট ৬০৭৩ আসনের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের চাপ কমাতে বিভাগ পরিবর্তনের 'ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আর নেবে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় আগে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।
আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাসের এই উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা কোনো কোনো বিভাগে কেবল পছন্দের মানুষদের চাকরি দেওয়ার হীন খায়েশ থেকে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে যাতে করে শিক্ষক এবং অন্যান্য পদের সংখ্যা বাড়ানো যায়। স্বায়ত্ত্বশাসনের সুবিধা কারো কারো স্বার্থে সুদে আসলে উসুল করার যে কায়েদা ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাস্টাররা দেখিয়ে থাকেন। তার আগে বলে নিতে চাই ঘটা করে আসন পুনর্বিন্যাসের কেন এই উদ্যোগ।
এখানে উল্লেখ্য যে, গতমাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে আচার্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। তার কথার কয়েকটি ছিল এরকম: 'পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইয়ুব খান সরকার ১৯৬১ সালে 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স'জারি করে, যা 'কালা কানুন' হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতা পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই অর্ডিন্যান্স বাতিল করেন এবং 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩' জারি করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত হয়।'
আর সেই স্বায়ত্ত্বশাসনের মুসাবিদায় চিন্তার স্বাধীনতার জায়গায় কখনো স্থান করে নিয়েছে স্বার্থপরতার স্বাধীনতা আর মুক্তবুদ্ধির জায়গায় স্বার্থবুদ্ধি চর্চা। এর অন্যতম উদাহরণ হলো সান্ধ্যকালীন কোর্সের নাম উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের মাতৃবিশ্ববিদ্যালয়টির কোচিংসুলভ দোকানদারি শিক্ষার প্রবর্তন। এই কুৎসিত চর্চার বিরুদ্ধে স্বয়ং আচার্য মুখ খুলেছেন আর আহ্বান জানিয়েছেন এই সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের।
রাষ্ট্রপতির আহ্বানগুলোর মধ্যে অনেক চমকপ্রদ কথা ছিল, ছিল দিকনির্দেশনাও। তার থেকে কয়েকটা লাইন এরকম: "অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটের সম্প্রসারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণার মানই মূল সূচক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি আশা করব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাত্রাপথে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে।"
আচার্যের এই কথার তাৎপর্য ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নিয়ে থাকে, তাহলে সাধুবাদ। তবে গণমাধ্যমকে দেওয়া উপাচার্যের বক্তব্যে অবশ্য এমনকিছু প্রতিফলিত হয়নি বলেই আমরা দেখলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আসন পুনর্বিন্যাসই শেষ কথা নয়। গোটা ভর্তি প্রক্রিয়া, কোর্স বিন্যাস, পরীক্ষা ও মূল্যয়ন প্রক্রিয়া, পাঠদান পদ্ধতি, গবেষণার প্রায়োগিক বিন্যাস আর তর্কবিতর্কের সুযোগ অবারিত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে নোবেল বিজয়ী অৰ্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত সমাবর্তন বক্তব্যে কিছুটা আলোকপাত করেছেন।
মুখস্থনির্ভর পাঠদান আর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আধুনিক বিশ্বের কোথাও আর ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না। খোঁজ নিয়ে দেখুন আফ্রিকা, এশিয়া ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আমাদের মাস্টারদের অনেকে বিদেশের অনেক নামি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন, গবেষণা করেছেন এমন কি পাঠদান করেছেন। ওই অভিজ্ঞতার কিছুটাও যদি আপন দেশের উচ্চশিক্ষার পুনর্গঠন আর আধুনিকায়নে কাজে খাটানো হতো তাহলে তো সান্ধ্যকালীন কোর্স চালুর মতো নির্লজ্জ উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হতো না। আত্মমর্যাদা এক জিনিস সেটা যদি আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের পণ্ডিতমহোদয়দের না থাকে, তা বড়ই দুর্ভাগ্যের। আমরা এই দুর্ভাগ্যের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আর সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের জন্যে আচার্যসহ আমরা আমআদমিরা আকুতি করে যাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের উচিত ছিল প্রথমেই সান্ধ্যকালীন কোর্স বিলুপ্তির উদ্যোগ নেওয়া। সান্ধ্যকালীন কোর্সের এই আপত্তিকর চর্চা এখন বন্ধ করা না গেলে, ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বড় এক মহামারী হিসেবে আবির্ভুত হবে। যার কলঙ্কজনক দায়ভার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে। আমি আরো একটু পরিষ্কার করে বলতে চাই।
গণমাধ্যমের খবর ২০০২ সালে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম সান্ধ্য কোর্স চালু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের চারটি বিভাগে সান্ধ্য কোর্স চালু করা হয়। তারও কয়েক বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ শুক্রবারে টাকার বিনিময়ে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোচিং চালু করে।
বর্তমানে দেশের কমপক্ষে ২০টি রাষ্ট্রায়ত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায়িক সান্ধ্যকোর্স চালু রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ইভিনিং মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, স্পেশালাইজড মাস্টার্সসহ বিভিন্ন নামের সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার নামে মাস্টারদের টাকা বানানোর অতিমারী রোগের কাছে জাতিকে বড় রকম মাশুল দিতে হবে।
আর টিউশন ফির নামে নেওয়া হয় কাড়ি কাড়ি টাকা। কোর্স ফির পরিমাণ ক্ষেত্র বিশেষে দুই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর এ টাকার বেশির ভাগ যায় শিক্ষকদের পকেটে। যে কারণে নিয়মিত কোর্সের চাইতে সান্ধ্যকালীন বাণিজ্যিক কোর্সে শিক্ষকদের আগ্রহ থাকে বেশি। আবার এই বাস্তবতায় কেবল আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আর গবেষণার মান পুনরুদ্ধার করার স্বপ্ন অলীকই থেকে যাবে। পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রায়ত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এরকম নির্লজ্জ বাণিজ্যিক চর্চা আছে কি না আমার জানা নাই।
আধুনিক সময়ে দর্শন, ইতিহাস, ভাষা, সাহিত্য ও কলাবিদ্যাসহ বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের সবর্ত্র প্রায়োগিক চর্চাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। শুনলে অবাক হবেন কোনো কোনো দেশে নিম্নমাধ্যমিকের পর্যায়ে কমপক্ষে একসপ্তাহের জন্যে শিক্ষানবিশী হিসেবে কর্মক্ষেত্রে পাঠানো হয়। আর আমাদের এখানে বছরের পর বছর শ্রেণীকক্ষ আর পরীক্ষার হলের গণ্ডির মধ্যে আমাদের উচ্চ শিক্ষা সীমাবদ্ধ থাকে।
ইতিবাচক দৃষ্টান্ত আমাদের ঘরের মধ্যেই আছে, বেশি দূরেও যেতে হবে না। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন যে প্রক্রিয়া প্রবর্তন করে গেছেন চারুকলা শিক্ষায়, সেখান থেকে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো যেতে পারে। চারুকলা অনুষদের একজন শিক্ষার্থী প্রথম দিন থেকেই প্রায়োগিক চর্চায় হাত দেন।
এবার গবেষণা বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই। অনেক দেশেই এম ফিল এবং পিএইচডি গবেষকরা পাঠদান এবং পরীক্ষা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। গবেষণাকালীন সময়টা তারা গবেষণা সংশ্লিষ্ট কোর্সে পাঠদান আর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গেও জড়িত থাকেন। গবেষণার আদ্যোপান্ত সময়ে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ পেতে থাকে।
আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো একজন গবেষক যিনি একজন অধ্যাপকের অধীনে গবেষণা করবেন, তিনি তার কাছে অনেকটা জিম্মি। এই জিম্মিদশার ভেতর দিয়ে ডিগ্রি জোটে বটে, গবেষণার কল্যাণকর ধারা বা চিরচরিত প্রায়োগিক যে লক্ষ্য তা কতটা কি হয় তা তো বর্তমান বাস্তবতাই বলে দিচ্ছে। এহেন প্রেক্ষাপটে আচার্যের আহ্বান আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পরামর্শ মেনে অনতিবিলম্বে সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিলুপ্তি করতে হবে। তারপর ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে পাঠদান পদ্ধতি, মূমূল্যায়ন প্রক্রিয়া, গবেষণার পরিকাঠামো, নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ সামগ্রিক বিষয় পুনর্গঠনের জন্যে একটা কমিশন গঠন করা। এই কমিশন প্রয়োজনে দেশি বিদেশী সংশ্লিষ্ট পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটা সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা আর নমুনা বাতলে দিতে পারে।
একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান পরিকাঠামো আর অবকাঠামোর দিকেও নজর দিতে হবে। গবেষণাকেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম অনেকটা স্তিমিত, গবেষণাপত্রিকাগুলোর সংকটা নিয়মিত প্রকাশিত হয় না, সাহিত্যপত্রিকাও বন্ধ হয়ে আছে, অনুবাদ ব্যুরো ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও গত সাড়ে চার দশকে উল্লেখ করার মতো ছিটেফোঁটা কার্যক্রমও নাই, প্রকাশনা সংস্থাটিও অনেকটা নামক ওয়াস্তে। আমরা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বলি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থাকে যুৎসই কার্যকর করা হলে এশিয়ার প্রকাশনা শিল্পের নেতৃত্বের জায়গায় উত্তীর্ণ করা সম্ভব, এখানেই সঙ্গত বাণিজ্যিক দিক নিহিত ছিল, সান্ধ্যকোর্সে নয়। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ে অনুবাদ ব্যুরো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অনুবাদ চর্চা আর অনুবাদ বিদ্যায় ঈর্ষণীয় সৃষ্টান্ত স্থস্পন করা সম্ভব।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায় থেকেই শিক্ষানবিশী প্রথা চালু করতে বাঁধা কোথায়? প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষানবিশী শিক্ষাক্রম আবশ্যক করা যেতে পারে।
ভাষার ব্যাপারে কিছু কথা বলা যায়। আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে অনেক গদগদ। আমাদের আহ্লাদেরও শেষ নাই। অথচ খোদ মাতৃভাষার ব্যবহারটা আমরা ঠিক মতো করি না বা জানি না। খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষীয় পর্যায়ের ভাষা ব্যবহারের নমুনা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক অনেক রসালো কথাবার্তা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটিও বাংলায় করতে পারলো না এখনো। অন্যদিকে সরকারের প্রায় প্রতিটি দফতরের ওয়েবসাইট বাংলা ও ইংরেজি দুটি ভাষায়, চমৎকার রুচিসম্মত উপস্থাপনায়। এখান থেকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা ধারণা নিতে পারতেন।
অন্যান্য দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা সাহায্যকেন্দ্র নামে একটা দপ্তর থাকে। এখানকার দপ্তরের কর্মরত উপদেষ্টা বা পরামর্শক প্যানেলের কাজ হলো পরীক্ষার অ্যাসাইনমেন্ট এর ভাষাগত উৎকর্ষতা সাধনের জন্যে সাহায্য করা বা পরামর্শ দেওয়া। স্নাতক থেকে গবেষণা পর্যন্ত যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষার্থী এই ভাষা সাহায্যকেন্দ্র থেকে ভাষাগত উৎকর্ষতা অর্জনের জন্যে সহযোগিতা নিতে পারে বিনামূল্যে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি এরকম ব্যবস্থা চালু করতে পারে না? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রউপদেষ্টাদের কাজ কী আদতে? এটাও আরো পরিষ্কারভাবে বিধিবদ্ধ হওয়া দরকার।
বিদেশের এমন কি নিজ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যাসালয়ের সঙ্গে আন্তঃবিভাগীয় শিক্ষাবিনময় কার্যক্রম চালু হওয়া দরকার। স্বায়ত্ত্বসশাসন কেবল শিক্ষকদের সুযোগসুবিধা আর দৌড়াদৌড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ না, এখানে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ভালোমন্দের বিষয়াটিও মুখ্য। আধুনিক অগ্রসরমান সময়ে বহুমুখী নানা গবেষণা ও শিক্ষা কর্মূসূচি ও প্রকল্প নেবার অবারিত সুযোগ রয়েছে। অর্থের অভাব বড় কোনো অজুহাত না। দেশি এবং বিদেশি নানা উৎস রয়েছে উপযুক্ত গবেষণা ও কার্যক্রমের জন্যে।
এবারে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার হালহকিকত নিয়ে কয়েকটি কথা বলে লেখাটির ইতি টানতে চাই।
অসমর্থিত সূত্রের দুটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই।
ঘটনা এক: একবার এক উপাচার্য তার এক আত্মীয়কে এক বিভাগে শিকক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিবেন। কিন্তু সব প্রক্রিয়ায় তার সেই আত্মীয় তৃতীয় হয়েছেন। শেষতক উপাচার্য মহোদয় তিনজনকেই নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন।
ঘটনা দুই: একবার অন্য একটি নিয়োগে এক উপাচার্যের আত্মীয় সপ্তম হয়েছেন। শেষতক উপাচার্য মহোদয় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের নির্দেশ দিয়ে সাতজনকে নিয়োগ দেওয়া যায় যাতে সেরকম উদ্যোগ নিতে বলেছেন।
এইভাবে বছরের পর বছর ধরে নিয়োগের কারণে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষেত্রবিশেষে আত্মীয় পরিজন পুনর্বাসনের এক অবাধ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই বিষয়টা নিয়েও রীতিমত গবেষণা হওয়া দরকার।
আঞ্চলিক প্রীতি আরেক চিত্র। দেখা গেলো বিশ্যবিদ্যালয় বড় কর্তা পূর্বাঞ্চলের, অদৃশ্য এক কারণে চতুর্থ শ্রেণির লোকবল থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলের মানুষদের মেধা ও যোগ্যতা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আবার দেখা গেল বড় কর্তা নিয়োগ পেয়েছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে, তাহলে আর কথা নাই, দক্ষিণাঞ্চলের চাকরি প্রত্যাশীদের মেধা ও চাকচিক্য বেড়ে গেছে। কী থেকে কী- আমার মাথায় ঢুকে না।
দেশের উচ্চশিক্ষার মর্যাদা রক্ষা করতে হলে এইসব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। হুটহাট করে ক্ষমতার উপর মহলের মানুষদের নেকনজরে আসার সহজ ও সংক্ষিপ্ত উপায় খোঁজার অভিপ্রায় থেকে সংশ্লিষ্টদের বেরিয়ে আসতে হবে। সময়টা এখনই।