Published : 07 Mar 2021, 06:55 PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার সীমা ছাড়িয়ে এখন বিশ্বসভায় সমাদৃত। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানে সীমাহীন ত্যাগ, বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে শুধু নয় বরং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্রের ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়ায় এর মাহাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি জেকোভ এফ. ফিল্ডের গ্রন্থে প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতা, রাষ্ট্রনায়ক ও মিলিটারি জেনারেলদের উদ্দীপনামূলক বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়েছে। তার দৃষ্টিতে সেরা ৪০টি ভাষণ এতে সংকলিত হয়েছে। গ্রন্থের শিরোনাম নির্বাচন করেছেন "We Shall Fight on the Beaches: The Speeches that Inspired History"। এর অর্ধেকটা জুড়ে আছে উইনস্টন চার্চিল-এর বিখ্যাত ভাষণ, বাকিটায় স্থান পেয়েছে অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ভাষণ।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও শাসনতন্ত্র অর্জন করে। এর পূর্বে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির চরম ক্রান্তিকালে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন। আজকের ৭ মার্চ ২০২১ সেই ভাষণের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীও উদযাপিত হচ্ছে এ বছর। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে রেসকোর্স ময়দানে ১০ লক্ষ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালজয়ী ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণ ছিল সংগ্রাম ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য ব্যাপক উদ্দীপনার স্মারক।
বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ তখনই বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হয়। তাকে 'রাজনীতির কবি' হিসেবে আখ্যায়িত করে 'Newsweek' সাময়িকী ১৯৭১-এর এপ্রিল সংখ্যার কভার স্টোরি করা হয়। সেখানে বলা হয়, "Sketch a Simillar Emotive figure and and Artistic altrurism of Sheikh Mujib by terming him a 'Poet of Politics." তার এ ভাষণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, এ যেন রাজনীতির অমর কবিতা। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণে অনন্য স্থান পাওয়ায় শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব গবেষণার উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে পরিবিধিত। বহু গবেষণাপত্রে ও গ্রন্থে এককভাবে ৭ মার্চের ভাষণটি নানাভাবে আলো ছড়িয়েছে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এ মহামানবের জন্মশতবর্ষে দাঁড়িয়ে ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণের কয়েকটি দিকের বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্যেই লেখা।
১১০৫ শব্দের প্রায় ১৮ মিনিটের কোনো প্রকার শব্দের পুনঃউচ্চারণ ও বাহুল্যবর্জিত প্রদত্ত এ ভাষণটি ঐতিহাসিক। রাজনৈতিক ক্যারিশমেটিক উপস্থাপনা, শব্দচয়ন ও স্বতঃস্ফূর্ত বাক্য বিন্যাসে গাঁথা একটি মহাকাব্য। ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে রচিত কবি নির্মলেন্দু গুণের 'স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো' কবিতার উদ্ধৃতি টেনে বলা যায় 'একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প…/শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন/কে রোধে তাহার বজ্রকন্ঠ বাণী?/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর কবিতাখানি/এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম/সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের'। বঙ্গবন্ধু কোন প্রকার লিখিত পাণ্ডুলিপি বা কোনো নোটস ছাড়া অবলীলায় ধারাবাহিক রাজনীতির কবিতাই যেন পাঠ করলেন সেদিন।
বাঙালির স্বাধীনতার উষালগ্নে প্রদত্ত এ ভাষণে ৭ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, মানসিক প্রস্তুতির সকল দিক-নির্দেশনামূলক এ কালজয়ী ভাষণ প্রদানের দিন ৭ মার্চ। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণ, অত্যাচার, নিপীড়ন ও বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনীহা ও কালক্ষেপণ, উপরন্তু বাঙালি হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নের প্রাক্কালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। যে কোনো পরাধীন জাতির জাতীয় ক্রান্তিকাল ও পরিকল্পনায় যুগে-যুগে দেশে-দেশে জাতীয় নেতারা ভাষণ ও অভিভাষণ প্রদান করার ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাসের সেই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ ভাষণ"Government of the people, by the people, for the people, Shall not perish form the earth." মানুষের অধিকার আদায়ে আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ ও মানবাধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং এর "I have a dream", অন্যদিকে মাহাত্মা গান্ধীর Quit India- "Ours is not a drive for power but purely a non violent fight for India`s independence" এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষের অধিকার আদায়ের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার "I am prepared to die" প্রভৃতি কালজয়ী ভাষণ পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
ইতালির জাতীয়তাবাদ ও একত্রিতকরণের নেতা জেনারেল Giuseppe Garibaldi (১৮০৭-১৮৮২) এর জ্বালাময়ী বক্তব্য "To arms, then, all of you! all of you!" এবং একই গ্রন্থে গণচীনের প্রধানমন্ত্রী Chou En Lai (Zhou EnLai) যিনি ২৬ বছর চীনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার কালজয়ী ভাষণ "We must hold aloft the great red banner" – (আমাদের অবশ্যই দুর্দান্ত লাল ব্যানারটি ধরে রাখতে হবে) ভাষণটি গ্রন্থিত হয়েছে। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের "This time the struggle is for our freedom. This time the struggle is for our independence." `lash extract give us an insight into the leaderships of war and the fight for courage' সে বইয়ের ব্যবহৃত উদাহরণগুলো কীভাবে শব্দের অনুপ্রেরণা হৃদয়স্পর্শী দর্শক-শ্রোতাদের উদ্বেলিত করার শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে উল্লেখিত ভাষণে সেটাই প্রতীয়মান।
আব্রাহাম লিংকন, চার্চিল, গান্ধী বা মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো মহান নেতাদের ভাষণের প্রেক্ষাপটের মতো বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রেক্ষাপটও ভিন্ন। একমাত্র গান্ধী ছাড়া সবাই স্বাধীন দেশে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন। জোসেফ গ্যারিবল্ডি সামরিক জেনারেল হিসেবে ইতালি একত্রীকরণের নেতৃত্ব দিয়েছেন আর চার্চিল একটি বিশ্বযুদ্ধের জয়ের আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেলিত। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র আমেরিকার কালো মানুষের অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আর গণচীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই তাদের "লাল পতাকা শক্তভাবে আকড়ে ধরে রাখতে" বললেন। বিশ্বব্যাপী মহান নেতাদের বক্তব্য মূল্যায়ন আমাদের এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। আমরা আলোচনা করতে চাই কোন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু তার কালজয়ী ভাষণ দিলেন।
মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম ও সামরিক অভিযানের উপর্যুক্ত মহান নেতাদের কালজয়ী ভাষণ প্রদত্ত হলেও ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির চিরলালিত স্বপ্ন স্বাধীনতার পূর্বক্ষণে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ প্রদান করেন তা ছিল ব্যতিক্রম। কারণ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যেমন ছিল ৭ কোটি বাঙালির বাঁচার প্রশ্ন তেমনি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সরাসরি রোষানলে না পড়ে প্রয়োজনে সংগ্রামের পরিকল্পনা তুলে ধরা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ৭ কোটি বাঙালির বেঁচে থাকার স্বপ্ন চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা প্রদান করলেন। তিনি সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন না বটে, তবে স্বাধীনতা ঘোষণার সকল উপাদান তার ভাষণে নিহিত ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে এ ভাষণ দিয়েছিলেন। একদিকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, অন্যদিকে তাকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিহিত করা না হয়, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি ছিল। তার বিচক্ষণতার জন্যেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই জনসভার ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিলেও তা পরিচালনা করতে পারেনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও বঙ্গবন্ধুকে 'চতুর' হিসেবে উল্লেখ করে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, "শেখ মুজিব কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেল, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারলাম না।"
পশ্চাতে বলা যায়, বঙ্গবন্ধু তার সংক্ষিপ্ত জীবনে শিখেছেন দেশবন্ধুর সম্প্রীতি, নেতাজীর সংগ্রাম ও গান্ধীজির অহিংস অসহযোগ। এমনকি রবীন্দ্রনাথের দেশাত্ববোধ ও নজরুলের বিদ্রোহে অনুপ্রাণিত ছিলেন তিনি।
১৯৪৭ সালে সুদীর্ঘ একটি উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে কীভাবে বাঙালি আর একটি পাকিস্তানি উপ-উপনিবেশে শোষিত ও বঞ্চিত হলো; ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পূর্ব-পাকিস্তানের মুক্তিকামী জনগণকে হত্যার নীল-নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করে আসন্ন সংগ্রামের প্রস্তুতির দিকে দিকপাত করেন বঙ্গবন্ধু। "আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়/বাংলার মানুষ অধিকার চায়/আমি যদি হুকুম দিবার না পারি/ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো/যার যা কিছু আছে তা দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না/কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না/ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"।
মূলত ১৯৭১-এর মার্চ থেকে পূর্ব-পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুর আহবানে সর্বাত্মক অসহযোগ শুরু হয়। তৎকালীন এক সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন "অপেক্ষা করুন। আমার জনগণ আমার সঙ্গে আছে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। আমরা ভালোর আশা করছি, তবে মন্দের জন্যও প্রস্তুত আছি। জনগণের অধিকার অর্জনের লড়াই চলবে। বাংলাদেশের মুক্তির জন্য কোনো ত্যাগই বড় নয়।" তিনি আরো বলেন "কাল থেকেই কর্মসূচি চলবে", ৭ মার্চ পরবর্তী কর্মসূচি জানাবেন রেসকোর্সের জনসভা থেকে এমনকি নেতাকর্মীদের তিনি বলতেন "সবকিছু ৭ মার্চের জনসভায় বলবো"। পূর্ব-পাকিস্তানের প্রায় প্রত্যেক জেলা, মহকুমা, শহর থেকে বাঙালি সেদিন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উপস্থিত হয়েছিল। পাকিস্তানি জান্তাদের আক্রমণের শঙ্কা, মাথার উপরে সামরিক হেলিকপ্টার, দশ লক্ষ সমবেত জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন কৌশলী রাজনৈতিক নেতার মতো অবলীলায় যেন সবকিছুই বলে গেলেন। কোনো বিছিন্নতাবাদী হতে চাননি। লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে সম্মুখ মহাবিপদে ফেলতে চাননি অথচ সবকিছুই বলে গেলেন একটি কবিতার মতো করে। ৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ মাত্র ১৯ দিন। পাকিস্তানিদের নিরীহ বাঙালির উপর গণহত্যা "অপারেশন সার্চ লাইট" ২৫ মার্চ আর গ্রেফতারের আগে স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন তিনি।
৭ মার্চের ভাষণটি ইউনেস্কোর মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্রের ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর পূর্বে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও কানাডায় বসবাসরত রফিক ও শফিক-এর উদ্যোগে ২১ ফেব্রুয়ারিও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা পায়। ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ৩০ অক্টোবর ২০১৭ সালে প্যারিসে অবস্থিত সদর দপ্তরে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে "ডকুমেন্টারি হেরিটেজ" (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ৭ মার্চ একটি অবিস্মরণীয় দিন। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার এই দিকনির্দেশনায় ছিল বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। কালজয়ী এ ভাষণ বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত ও মুক্তিকামী মানুষকে সবসময় প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ও বহু ত্যাগের বিনিমিয়ে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। কোনো জাতিকে তার আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। বন্দুকের নল কিংবা অস্ত্রের মুখে দাবায়ে রাখা যায় না। একটি ভাষণ কীভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তারই উদাহারণ। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের 'ছয় দফায়' বাঙালিকে স্বাধিকারের সাঁকো দিয়েছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণের অমর বাণীতে বঙ্গবন্ধু সেই সাঁকোকে স্বাধীনতার স্বপ্নসেতুতে রূপান্তরিত করলেন।