Published : 07 Jun 2012, 12:50 PM
প্রতিবছরের মতো এবারও অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন। এই বাজেটের একটি বিশেষ পটভূমি আছে। সংক্ষেপে এর একটি হলো ঘাটতির চাপ, অন্যটি হলো নির্বাচনী জনপ্রিয়তা বজায় রাখার চাপ। যেহেতু আর মাত্র দেড় বছর পরই নির্বাচন, তাই সরকার এমন কোনও কর্মসূচি দেবেন না যা নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সুতরাং জনপ্রিয় কর্মসূচিগুলোই অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যদিকে সেটার জন্য অর্থের জোগান দিতে হবে। সাধারণত নির্বাচনের আগের বাজেটগুলো হয় একটু বৃহৎ বাজেট। মানে, একটু স্ফীতিমূলক বাজেট। এই ব্যাপারটা বর্তমানে অর্থমন্ত্রীকে সামাল দিতে হবে।
কিন্তু গত বছর এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেছে যে কারণে সরকারকে সম্পদের ঘাটতি নিয়েই যাত্রা শুরু করতে হচ্ছে। সরকার অনুমান করেছিলেন, ফার্নেস অয়েল, ডিজেল বা পেট্রোলিয়াম ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে যে ব্যয় হবে তা বাজেটে যে ভর্তুকি দেয়ার কথা ছিল, সেই ভর্তুকি দিয়েই মেটানো সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম আগে যা ছিল তা বহাল রাখা যাবে। পাশাপাশি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাবে।
কিন্তু এখানে একটু ভুল হয়ে গেছে। কারণ বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়াম, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের দাম বৃদ্ধির ফলে ১৮,০০০ কোটি টাকা ছিল সমগ্র বাজেটের ভর্তুকি বরাদ্দ। বছর শেষে দেখা গেল সেটা প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই যে বাড়তি প্রায় ২২,০০০ কোটি টাকা সরকারকে জোগার করতে হয়েছে, সেটার ব্যবস্থা করার সবচেয়ে সহজ উপায় ছিল বিদেশি সাহায্য। কিন্তু বিদেশি দাতারা ভর্তুকির বিরুদ্ধে। তাছাড়া সাহায্যের পেছনে তাদের কঠিন কিছু শর্তও থাকে। তাই বাড়তি টাকাটা সঠিক সময়ে পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সঙ্গে অনেক দরকষাকষির পর তারা ১ বিলিয়ন ডলারের মতো দিয়েছে বটে, এর পেছনে শর্ত ছিল অনেক কঠিন। শর্তটা হলো, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রেট্টোলিয়ামের দাম বাড়লে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুতের দামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। তার মানে, বিদেশি সাহায্য অব্যাহত রাখতে হলে একটা ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক হিসাব নিয়ে সরকারকে আগামী অর্থবছর শুরু করতে হবে।
এখন বিদেশি সাহায্য অব্যাহত রাখা ছাড়া কোনও উপায়ও নেই। গত অর্থবছরে বিদেশি সাহায্য না পেয়ে দেশীয় উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিলে সে অর্থের জোগানটা জনগণের কাছ থেকেই আসে। এর ইনফ্লেশনারি ইফেক্ট অনেক বেশি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকেই সরকার ঋণ নিয়েছে বেশি। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঋণের জোগান দিতে গিয়ে নতুন টাকা ছাপায়। এর ফলে নেট মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির এই চাপ সরকারকে সামলাতে হবে। তা না হলে নির্বাচনী জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কঠিন। এমনিতেই আমাদের রাজনীতি যেহেতু এখন সাংঘর্ষিক পর্যায়ে চলে গেছে তাতে বিরোধী দলের আন্দোলন-বিক্ষোভ জাতীয় কর্মসূচিগুলোর আশংকা এড়ানো যায় না। ওদিকে সাধারণ জনগণের মধ্যে একটা ক্ষোভ তৈরি হতে পারে যেটা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। কাজেই এ বছর আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার বাস্তবতা নেই।
ওদিকে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও অভিযোগ করছেন যে সরকার ঋণ নেয়ার ফলে তারা ঋণ নিতে পারছেন না। এতে তাদের বিনিয়োগ কমেছে। আমাদের শতকরা আশি ভাগ বিনিয়োগকারী দেশীয় উদ্যোক্তা; তাই আমরা নিজেরাই যদি বিনিয়োগ কমিয়ে দিই, তাহলে কী হবে? কারণ, বিনিয়োগ তো শুধু ঋণের অভাবের কারণে কমছে না, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণেও কমছে।
তাই প্রাইভেট সেক্টর সরকারকে সতর্ক করে বলতে চাচ্ছে যে, সরকার যদি আর ঋণ না নিয়ে তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করে, তাহলে বিনিয়োগ বাড়বে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি কমাতে হবে। তাতে অর্থনীতিতে একটা স্থিতিশীলতা আসবে। বিনিয়োগ বাড়লেই প্রবৃদ্ধি বাড়বে। গত বছর সরকার ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির টার্গেট ঘোষণা করেছিলেন। অর্জিত হয়েছে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এটা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য অনেক দেশের তুলনায় মোটামুটি ভালোই।
এ বছর সরকার প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ নির্ধারণ করতে যাচ্ছেন। এটা অর্জন করতে হলে দুটো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সমস্যা দুটো সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। মুদ্রাস্ফীতি ও প্রবল ঘাটতি। এই দুটোই বর্তমান বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তাহলে অর্থনীতি কীভাবে গতিশীল হবে? এ জন্য সরকারের সামনে পথও রয়েছে দুটো। গতানুগতিক ধারায় অথবা কিছু নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে। গতানুগতিক পথে হাঁটলে সরকার বিদেশি সাহায্য ও ভ্যাটের ওপর নির্ভর করবেন। আমার মতে, এ দুটোই হবে বিপজ্জনক। বিদেশি সাহায্য নেয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হল দাতাদের কিছু পলিসিগত চাপ মেনে নেয়া। যেমন, কৃষি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে দিতে হবে। তাতে প্রবৃদ্ধি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মুদ্রাস্ফীতিও কমবে না। এই মুদ্রাস্ফীতি যদি কস্ট-পুশ মুদ্রাস্ফীতি হয়, তাহলে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়লে সবকিছুর উৎপাদন খরচ বাড়বে। তাই বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর করলে আম-ছালা দুটোই হারাতে হবে। পাশাপাশি, সরকারের ভোট ব্যাংক হারানোর ঝুঁকি তো থাকবেই।
ওদিকে সরকার যদি ভ্যাট বাড়ানোর চিন্তা করেন তাতেও সমস্যা। ইতিমধ্যেই ভ্যাটের পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। সরকার অবশ্য বলছেন, রাজস্ব খাতে অপচয় কমাবেন। মানে, অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ কমবে। সেটাও প্রায় অসম্ভব। কারণ আমলাতন্ত্র ব্যয় সংকোচন নয়, ব্যয় বৃদ্ধিতে অভ্যস্ত। তবে একটা উপায় আছে। যদি সরকার তৃণমূল পর্যায়ে, অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ বা জেলা পরিষদ পর্যায়ে বাজেটের অর্ধেক টাকা দিয়ে দেন, তাহলে অপচয় কমানো যেতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের অবশ্য প্রতিশ্রুতিও আছে।
বিদেশি সাহায্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে জিনিসটি দরকার তা হলো, এই সাহায্য ডিসবার্স করে দেয়া। নতুন সাহায্য তো দরকার নেই, আমাদের পাইপলাইনে যে সাহায্যগুলো আছে সেগুলোরই সদ্ব্যবহার দরকার। এটাও সম্ভব হচ্ছে না হয় আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতার জন্য, নয় তো অডিট আপত্তির জন্য। তাছাড়া আমলাতন্ত্রের ভেতরে যে দুর্নীতি রয়েছে, সেটাও বিদেশি সাহায্যের সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তার মানে খুব স্পষ্ট। গতানুগতিক পথে সমাধান নেই। এখন নতুন বা অ-গতানুগতিক পথ খোঁজার ব্যাপারেও সরকার কিছুটা বলেছেন। সেটা সম্ভব করার পথেও অনেক বাধা। সরকারের যে শ্রেণীগত ভিত্তি, সেই শ্রেণীর যে রাজনৈতিক অর্থনীতি, সেটাই এখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যাহোক, অ-গতানুগতিক পথে হাঁটতে গেলে সরকারের উচিত হবে, কালোটাকার মালিক ও দুর্নীতিবাজদের তালিকা করা। তারপর তাদের মধ্যেও যারা রাঘব বোয়াল তাদের আলাদা করা। এই সব রাঘব বোয়ালরা তো আবার সরকারের আশেপাসেই রয়েছে। সরকারকে তাই নিজের ঘরেই উদাহরণ তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা যেতে পারে যে, তাদের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে যে ২৩ হাজার কোটিপতির নামের তালিকা আছে, সেটা সরকারকে দিতে। সেখান থেকে এই কোটিপতিদের কর ইনটেলিজেন্স দিয়ে তাদের প্রকৃত সম্পদের হিসাব বের করা যেতে পারে। আমি নিশ্চিত যে তাতে তাদের সম্পদ দুই কোটি টাকার অনেক বেশি হবে। যেহেতু দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলেই কর দিতে হয়, তাই এই তালিকাটা দরকার। তাহলে এদের কাছ থেকে কর আদায় করা গেলে সেটা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।
একটা কথা স্পষ্ট যে, ক্ষমতাশালীদের একটা অংশ যদি সৎ ও উৎপাদনশীল পুঁজিবাদের পক্ষে দাঁড়ায়, লুটেরা পুঁজিপতিদের রুখে দেয় তাহলে এই সব গতানুগতিক লুটপাট, কর ফাঁকি, কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া এইসব বন্ধ হবে। যদি এটা করা সম্ভব হত, মানে অ-গতানুগতিক বা নতুন পথে সরকার হাঁটার চেষ্টা করতেন, তাহলে স্থানীয় সম্পদ মোবিলাইজ করে বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যাবে। আর বিদেশি সাহায্য নেয়া কমলে আমাদের পলিসিগুলোও আমরা স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারব।
দ্বিতীয়ত হলো, বিদেশি সাহায্য যেটুকু আছে, সেটাকেই নেগোশিয়েট করে পাইপলাইন থেকে বের করে নিয়ে আসা দরকার। পাশাপাশি বিদেশি সাহায্যের উৎস বাড়ানো। আজ বিশ্ব ব্যাংক টাকা না দিলে মালয়েশিয়া বা চীনের কাছে যাও এভাবে নিজেদের সাহায্যের উৎস বাড়াতে হবে। আবার সাহায্য যেটুকু পাওয়া যাবে, তারও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
এ জন্য দক্ষ আমলা, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও সমাাজবিজ্ঞানীদের একটি সেন্ট্রাল কমিটি গঠন করা দরকার যারা নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে সাহায্যটা ঠিকঠাক বের করে আনবেন। এই সেন্ট্রাল কমিটির ভিজিলেন্স থাকবে সব মন্ত্রণালয়ে। এখন কোনও মন্ত্রণালয় যদি কমিটির কাছে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে কেন্দ্রীয় কমিটিই তাদের পক্ষে নেগোশিয়েট করবে। এটাই বিদেশি সাহায্যের সদ্ব্যবহারের সঠিক প। সরকার অবশ্য এই ধরনের অদক্ষ মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য একটা সতর্কবাণী দিয়েছেন যাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকাই বেশি। সরকার বলেছেন, যারা বিদেশি সাহায্য নিতে পারবে না, তারা স্থানীয় উৎস থেকে অর্থ পাবে না। তাহলে কী হলো? কোনও মন্ত্রণালয়ের যদি বিদেশি সাহায্য সংগ্রহের দক্ষতা না থাকে, আবার সে দেশীয় উৎস থেকেও অর্থ পেলো না তাহলে তো পুরো উন্নয়ন বাজেটই ব্যর্থ হবে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে না। কাজেই এখানে দক্ষতা বৃদ্ধি করে সমাধান করতে হবে।
আরেকটা উপায় হলো, সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিটি খাতের প্রাপ্ত অর্থ ও তার ব্যবহারের হিসাব দিয়ে দেওয়া। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে এমন একটি ব্যাপার ঘটেছে। সেখানে ই-মার্কেটিং সিস্টেম চালু করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে একজনকে বেছে নিয়ে তার বাসায় ই-মার্কেটিং সিস্টেম চালু করা হলো। প্রতি সন্ধ্যায় এলাকার কৃষকরা তার কাছে এসে পণ্যের দাম জেনে নিয়ে পণ্য বিক্রি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। ই-মার্কেটিং করছেন যে কৃষক, তিনি আবার ই-মেইল করে পণ্যের ক্রেতাদের তা জানিয়ে দেন। এই পদ্ধতিতে ওখানে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতাপ কমে গেছে।
আমার মতে, সরকার যদি এসব অ-গতানুগতিক বা নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করেন তাহলে, দুর্নীতি, অপচয়, বিদেশি হস্তক্ষেপ ও স্থানীয় সম্পদের অচপয় কমবে। এটা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ও ঘাটতির যে চাপ রয়েছে, তাকে অতিক্রম করা যাবে। পাশাপাশি সরকার নির্বাচনী জনপ্রিয়তা অক্ষুন্ন রাখার আশা করতে পারবেন।
তবে বাজেটে আমার ধারণা, গতানুগতিক পদক্ষেপগুলোই নেয়া হবে বেশি। সরকার ইতিমধ্যেই বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। এর মানে যদি ভর্তুকি কমানো হয় – তাহলে বিদ্যুতের দামও কমবে না আর জনগণও অসন্তষ্ট হবেন। বরং যত দ্রুত সম্ভব বিকল্প জ্বালানি মানে, গ্যাসের দিকে যেতে হবে। আর কুইক রেন্টাল বন্ধ করতে হবে। গত বছর এটা চালুর সময়ই আমরা বলেছিলাম যে এটা সরকারের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে গলার ফাঁস হবে। জ্বালানি উপদেষ্টা এ জন্য আমাদের দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী কিন্তু ঠিক হয়েছে। অর্থমন্ত্রীও পরে কুইক রেন্টাল প্রসঙ্গে বলেছেন যে, একটু চিন্তাভাবনা করে আমাদের এই পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল। তাহলে প্রকারান্তরে উনি আমাদের কথাই মেনে নিচ্ছেন। এ সব কারণে আমার মনে হয় সরকারের মধ্যেও একটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে।
শিক্ষা খাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য রয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান বেড়েছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে শিক্ষকের মান বাড়াতে হবে। আর এ জন্য এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এমনিতেও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কম। শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন সেটা। এ জন্য এ খাতে বাজেট বরাদ্দ ১২ ভাগ থেকে ২৫ ভাগ করা দরকার।
ওদিকে কৃষিতে ভতুকি অব্যাহত রাখতে হবে। তার মানে যত্রতত্র ভর্তুকি নয়। রেশনালাইজড টার্গেটেড ভর্তুকিতে নাকি দাতাদের আপত্তি নেই। তাহলে আমরা তাদের বলে দিই না কেন যে ডিজেল, সার বা কৃষি উপকরণে ভর্তুকি চলবে। কারণ এগুলো উৎপাদনশীল খাত। আমরা তো আরেকটা কাজ করতে পারি। বিদ্যুতের সাধারণ গ্রাহকের জন্য রেন্ট না বাড়িয়ে শুধু বড় গ্রাহকদের জন্যই দাম বাড়াই না কেন।
শেষ করব কৃষিপণ্যের দামের প্রসঙ্গ দিয়ে। কৃষিপণ্য বিশেষ করে চালের দাম আর বাড়ানো যাবে না। আবার কৃষক যাতে দাম পান সেটাও দেখতে হবে। এখন যে ১৮ টাকা চালের প্রকিউরমেন্ট প্রাইস সেটা একটু বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি কৃষক যাতে দামটা পান।
এভাবেই নির্বাচিত কিছু খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। হঠাৎ করে সব ভর্তুকি তুলে নেয়া যাবে না। আরেকটা কথা, টাকা ছাপানো যাবে না।
এস এম আকাশ: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।