দণ্ডিত হওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে রাহুল, ‘মোদীর চোখে ভয় দেখেছি’

“আমার নাম সাভারকার নয়, আমি গান্ধী, ক্ষমা চাইবো না,” লন্ডনে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে ‍ক্ষমা চাইবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন কংগ্রেসের এই সাবেক সভাপতি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2023, 09:19 AM
Updated : 25 March 2023, 09:19 AM

মানহানির মামলায় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একহাত নিয়ে বলেছেন, লোকসভার সদস্য হিসেবে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলেও তিনি পিছু হটবেন না।

“প্রধানমন্ত্রী যখন পার্লামেন্টে আমার পরবর্তী বক্তব্য নিয়ে ভীত, তখন আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হল। আমি তার চোখে ভয় দেখেছি। এ জন্যই তারা আমাকে পার্লামেন্টে বলতে দিতে চায় না,” সংবাদ সম্মেলনে সাবেক কংগ্রেস সভাপতি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকে এক সমাবেশে রাহুল ‘সব চোরের পদবি মোদী হয় কী করে?’ মন্তব্য করেছিলেন।

ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুর্নেশ মোদীর করা মানহানির মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয় সুরাটের এক আদালত।

সাজা দিলেও রাহুলকে জামিন দেন বিচারক, উচ্চ আদালতে আপিল করতে, তার সাজা ৩০ দিনের জন্য স্থগিতও রাখা হয়।

ওই সাজার ওপর ভিত্তি করে পরদিনই লোকসভা সচিবালয় কেরালার ওয়েনাড আসন থেকে নির্বাচিত রাহুলকে পার্লামেন্টে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এসব নিয়ে দেশজুড়ে কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে কংগ্রেস, তার মধ্যেই শনিবার ইন্দিরাপৌত্র সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

তিনি বলেন, তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হোক, কিংবা জেলেই পাঠানো হোক, তিনি তার কাজ চালিয়ে যাবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বারবারই মোদী-আদানি সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, আদানির শেল কোম্পানিতে ঢোকা ২০ হাজার কোটি রুপি কোথা থেকে এলো, এ নিয়ে প্রশ্ন এড়াতে এবং দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেই বিজেপি সরকার বিরোধীদের ওপর দমনপীড়নে নেমেছে।

লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি ভারতে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ চেয়েছেন, বিজেপির এমন অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।

ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, “আমার নাম সাভারকার নয়, আমি গান্ধী, ক্ষমা চাইবো না।”

লন্ডনে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে পার্লামেন্টে বলতে স্পিকারকে অনুরোধ করার কথাও জানান সাবেক এই কংগ্রেস সভাপতি।

“আমার পদক্ষেপ কেবল একটিই, তা হলো- সত্যের জন্য লড়া এবং দেশের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে রক্ষা করা। আজীবনের জন্য আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করুক, আজীবনের জন্য জেলে পাঠাক, আমি লড়ে যাবো,” বলেন রাহুল গান্ধী।

দণ্ডিত হওয়ায় ভীত কিনা,এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,“আমাকে কি উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে? আমি উৎফুল্ল।”

মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে তার তোলা প্রশ্নে সরকারের ‘আতঙ্কিত প্রতিক্রিয়া’ বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাহুল বলেন, ভারতের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত চলছে; প্রতিদিনই তার নজির দেখা যাচ্ছে।

“পার্লামেন্ট থেকে আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরে লোকসভার স্পিকারকে আমি বিস্তারিত জবাব দিয়েছি। কয়েকজন মন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছেন। আমি নাকি বিদেশি শক্তির সহযোগিতা চেয়েছি। এমন কিছুই আমি করিনি। আমি কেবল প্রধানমন্ত্রী মোদী আর আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। আসল প্রশ্নটা হলো, আদানির শেল কোম্পানিতে ২০ হাজার কোটি রুপি কে বিনিয়োগ করেছে?

“আমি ভারতের জনগণের গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বরের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য এখানে এসেছি। এটাই করে যাবো। আমি কারো ভয়ে ভীত নই,” বলেছেন রাহুল।