সমালোচকদের একহাত, সহযোগীদের ধন্যবাদ দিলেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান

চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশের সঙ্গে নেপিডো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2023, 08:18 AM
Updated : 4 Jan 2023, 08:18 AM

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যেসব দেশ ‘নাক গলাচ্ছে’ তাদের কড়া সমালোচনা করার পাশাপাশি জান্তাপ্রধান মিন অংশ হ্লাইং ‘ইতিবাচকভাবে’ সহযোগিতা করা অনেক দেশকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।

চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নেপিডো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

দুই বছর আগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নোবেলজয়ী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটি থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়েছে।

“যত চাপ, সমালোচনা ও আক্রমণ সত্ত্বেও যে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক দেশ, সংগঠন ও ব্যক্তিরা আমাদেরকে ইতিবাচকভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে চাই আমি,” মিয়ানমারের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে হ্লাইং এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রাজধানী নেপিডোতে জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ থেকে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি আরও বলেন, “আমরা চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, লাওস ও বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।”

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সু চির সরকারকে সরিয়ে সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা নেওয়ার পর সু চি ও অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়, জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ ও ভিন্নমত কঠোরভাবে দমন শুরু হয়, ঘরবাড়ি ছাড়া হয় লাখ লাখ মানুষ।

নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক দমনপীড়নের মুখে মিয়ানমারে এখন দৃশ্যত সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দেখা না গেলেও দেশটির সামরিক বাহিনীকে এখন বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র বাহিনী ও গণতন্ত্রে ফিরতে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে।

গত বছরের শেষভাগে সু চির বিরুদ্ধে আনা সর্বশেষ অভিযোগগুলোর বিচার সম্পন্ন হয়েছে; দোষী সাব্যস্ত হওয়া সব অভিযোগ মিলে নোবেলজয়ী এ নেত্রীকে সর্বমোট ৩৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে জান্তার আদালত।

সু চি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থাও তার মুক্তি চেয়েছে। অন্যদিকে সামরিক বাহিনী বলছে, নিয়ম মেনেই সু চির সব মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার দিন উপলক্ষে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ সাধারণত কিছু বন্দিকে মুক্তি দেয়। কিন্তু এবার সামরিক বাহিনী কোনো রাজনৈতিক বন্দিকে ছেড়েছে কিনা, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, তাদের কর্মকর্তা এবং যারা তাদের ক্ষমতায় যেতে বা থাকতে সহায়তা করেছে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

গত মাসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও মিয়ানমার প্রসঙ্গে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে যেখানে সহিংসতা বন্ধ এবং সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি চাওয়া হয়েছে। ৭৪ বছরের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদ এবারই প্রথম মিয়ানমার বিষয়ক কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করল।

আন্তর্জাতিক এসব চাপকে ‘বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার দিক থেকে বাধা’ হিসেবে উল্লেখ করে ওই দেশ ও সংস্থাগুলো মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন হ্লাইং।

বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশের মিয়ানমার প্রসঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় একইরকম হলেও দেশটির সামরিক জান্তা একেবারেই বন্ধুহীনও নয়।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এখনও মিয়ানমার বিষয়ক ব্যবস্থা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। দেশটির শাসকদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়া বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত মাসে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তাতে এই দুই দেশের পাশাপাশি ভারতও ভোট দেয়নি।

থাইল্যান্ড গত মাসে মিয়ানমার সংকট নিয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনারও আয়োজন করেছে, যেখানে জান্তার বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর উপস্থিতিও দেখা গেছে। সেই আলোচনায় অবশ্য দক্ষিণপূর্ব এশিার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের যেসব দেশ মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ তাদের অনেকেই অংশ নেয়নি।

আসিয়ানই মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। সু চির ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা শুরুসহ শান্তি প্রতিষ্ঠায় আসিয়ানকে বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জান্তা; কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা সেসব প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান না দেখানোয় জোটের উচ্চপর্যায়ের অনেক বৈঠকে তাদের জেনারেলদের উপস্থিত হতে নিষেধও করা হয়েছে।