শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ থামাতে ‘যা দরকার, তাই করার’ নির্দেশ সেনাবাহিনীকে

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালানোর পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর দখলে নিয়ে বিক্ষোভকারীদের চলমান আন্দোলন থামাতে সেনাবাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2022, 12:31 PM
Updated : 14 July 2022, 05:12 AM

বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার এক টেলিভিশন বক্তৃতায় বিক্ষোভকারীদের ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে তিনি এ নির্দেশ দেন।

সেনাবাহিনীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার, তাই করুন। আমরা আমাদের সংবিধানকে ছিন্ন করতে পারি না।

“আমরা ফ্যাসিস্টদের ক্ষমতা দখল করতে দিতে পারি না। আমাদের গণতন্ত্রের জন্য এই ফ্যাসিবাদী হুমকির অবসান ঘটাতে হবে।”

ছবি: রয়টার্স

রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ভবন দখলকারী বিক্ষোভকারীদের সেগুলো ছেড়ে যেতে বলেন এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

কলম্বোতে বিবিসির এক সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বিক্রমাসিংহের সর্বশেষ বিবৃতির ফলে রাজধানী কলম্বোতে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার করা হতে পারে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পালিয়ে মালদ্বীপে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বুধবার মিছিল করে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের দপ্তরের দখল নেয় হাজারো বিক্ষোভকারী।

বিক্ষোভকারীরা টিয়ার গ্যাস উপেক্ষা করে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা দেয়াল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের গেইট খুলে ফেলার চেষ্টা করে।

বিবিসি জানিয়েছে, চরম উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে তার দপ্তরে নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ থেকে সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি এবং পশ্চিম প্রদেশে কারফিউ জারির পাশাপাশি কিছু আদেশ জারি করেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

ছবি: রয়টার্স

শনিবার হাজারো বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার বাসভবন দখল করলে সেসময় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। যদিও তিনি তার পদত্যাগের সময় জানাননি। বিক্ষোভকারীরা তার ব্যক্তিগত বাড়িতে আগুন দেয় সেই রাতে।

মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া মালদ্বীপে পালিয়ে গেলে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে রনিলকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। অন্যদিকে তার পদত্যাগের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর দখল করে নেয় বিক্ষোভকারীরা।

এস শশীধরন নামে ৩০ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, “আমরা চাই রনিল পদত্যাগ করুক। যারা গোটাকে পালাতে সাহায্য করেছে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করুন। আমরা আমাদের চুরি হওয়া টাকা ফেরত চাই।”

স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কা। ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মুখে পড়ে দেশটি বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধেও ব্যর্থ হয়েছে।

ছবি: রয়টার্স

এক সময়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটিতে চলছে খাদ্য সংকট। জ্বালানি তেল কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের। ওষুধসহ নিত্যপণ্যের সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত।

দেশের এ পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে এবং তার পরিবারকে দায়ী করে আসছে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা। গত দুই দশক ধরে এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির ক্ষমতায় রয়েছে রাজাপাকসে পরিবার, যাদের উৎখাতে এবার উঠেপড়ে লেগেছে হাজারো বিক্ষোভকারী।