কৃষক সংগঠনগুলোর ডাকে ‘ভারত বনধ’

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের করা তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে ‘বনধ’ পালন করছে কৃষি সংগঠনগুলো। এসব আইন কৃষি খাতকে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন করে ফেলবে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 06:38 AM
Updated : 27 Sept 2021, 06:54 AM

কৃষিখাত উদারীকরণের লক্ষ্যে ওই আইনগুলো করার এক বছর পর সোমবার ফের দেশজুড়ে ‘বনধ’ এর ডাক দিয়েছে তারা, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

এই আইনের বিরোধিতা করে প্রায় লাখো কৃষক ১০ মাস ধরে রাজধানী নয়াদিল্লির আশপাশের প্রধান মহাসড়কগুলোতে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এই প্রতিবাদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে চলমান সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

“বৃহৎ বেসরকারি কর্পোরেশনগুলোকে ‍সুবিধা দিতে করা আইনগুলো বাতিল করার বিষয়টি সরকারের মনে করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশজুড়ে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালান করা হচ্ছে। ধর্মঘট নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার কৃষক অবস্থান নিয়েছে,” রয়টার্সকে বলেছেন ভারতের বিশিষ্ট কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা গেছে, ৪০টিরও বেশি কৃষি ইউনিয়নের জোট সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা (এসকেএম) স্থানীয় সময় ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্থায়ী এ বনধের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

তারা জাতীয় মহাসড়কগুলোর কিছু অংশে গাড়ি চলাচল করতে দেবে না বলে জানিয়েছে। সোমবার সকালে দিল্লি-মিরাট এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেয় তারা। কৃষকরা পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যবর্তী শম্ভু সীমান্তও অবরোধ করে রেখেছে। 

এসকেএম জানিয়েছে, এদিন সারা দেশজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি দপ্তর, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, দোকান, শিল্প কারখানা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

তবে জরুরি পরিষেবা বনধের আওতার বাইরে থাকবে বলে জানিয়েছে তারা।

পাঞ্জাবে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি নভজোত সিং সিধু দলীয় কর্মীদের কৃষকদের প্রতিবাদে সমর্থন জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তর প্রদেশের বহুজন সমাজবাদী পার্টির প্রধান মায়াবতী জানিয়েছেন, তার দল শান্তিপূর্ণ ‘ভারত বনধ’ এ সমর্থন দেবে। 

জাতীয় কংগ্রেস তাদের সব কর্মী, রাজ্য ইউনিটগুলো প্রধানদের এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রধানদের ভারত বনধে অংশ নিতে বলেছে।      

চলতি মাসে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে একটি সমাবেশে পাঁচ লাখেরও বেশি কৃষক জমায়েত হয়েছিল। কৃষি আইনবিরোধী প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পর এটিই এ ধরনের বৃহত্তম সমাবেশ ছিল।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে করা এই আইনগুলোতে ভারতের কৃষি খাতকে নিয়ন্ত্রণহীন করে সরকার-নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারগুলোর বাইরে অন্যান্য ক্রেতাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করার জন্য কৃষকদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার-নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারগুলোতে কৃষকরার তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য একটি সর্বনিম্ন মূল্যের নিশ্চয়তা পেতেন।

ক্ষুদ্র কৃষকরা বলছেন, এই পরিবর্তনের ফলে তারা বৃহৎ ব্যবসায়ীদের অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে গেছেন।

অপরদিকে সরকার বলছে, এই সংস্কারের ফলে কৃষকদের সামনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাবেন।

ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং দেশটির ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ।

সাধারণভাবে এই প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ হলেও জানুয়ারিতে নয়াদিল্লিতে ট্র্রাক্টর নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ মিছিলের সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছিল এবং এক বিক্ষোভকারী নিহত ও ৮০ জনের বেশি আহত হয়েছিল।