শিশু ধর্ষণ: মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে

একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল ভারতে সরকার নারীদের সুরক্ষায় যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে করছেন নাগরিকরা।

>>রয়টার্স
Published : 17 April 2018, 05:17 PM
Updated : 17 April 2018, 05:17 PM

জম্মু ও কাশ্মিরে জানুয়রিতে আট বছরের এক মুসলিম যাযাবর শিশুকে অপহরণের পর সাত দিন আটকে রেখে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে গত সপ্তাহ থেকে ভারতে গণবিক্ষোভ চলছে।

শিশুটি মুসলিম এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হিন্দু হওয়ায় (যে মন্দিরে আটকে রেখে শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল সেটির পরিচালক এ মামলার অন্যতম আসামি) সম্প্রতি তাদের মুক্তির দাবিতে জম্মুর কয়েকটি হিন্দু অধিকার রক্ষা সংগঠন বিক্ষোভ শুরু করে।

ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা স্থানীয় রাজ্য সরকারের দুই মন্ত্রী ওই বিক্ষোভে সমর্থন দিলে দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। সমালোচনার মুখে ওই দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।

২০১৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নারীদের অধিকার রক্ষায় ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ স্লোগান শুরু করেছিলেন।

অথচ সরকারি হিসাবমতে,  ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ভারতে ধর্ষণের হার ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে। যা নিয়ে জনগণের মনে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে।

সমালোচকদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর নীরবতার কারণেই দেশে ধর্ষণের মত অপরাধ দ্রুত বাড়ছে। যদিও জম্মু ও কাশ্মিরের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন মোদী।

দেশটির রাজনীতি বিষয়ক কলামনিস্ট নীরা চৌধুরি বলেন, “সেখানে রাজনৈতিক পতন হবেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।”

নিজ দলের নেতাদের ধর্ষণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পরও এর বিরুদ্ধে মোদীর কথা না বলা ‘সবচেয়ে উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।

বিজেপি’র জ্যেষ্ঠ নেতা এবং দলটির আগের মেয়াদের  অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা মঙ্গলবার খোলা চিঠিতে মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন।

চিঠিতে তিনি লেখেন, “অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে ভারতে বর্তমানে নারীরা সবচেয়ে অরক্ষিত। ধর্ষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে আমরা তদের হয়ে সাফাই দিচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের লোকেরাই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে।”

এর একদিন আগে অবসরে যাওয়া ৫০জন সরকারি কর্মকর্তা যাদের মধ্যে রাষ্ট্রদূত, পুলিশ প্রধান এবং জ্যেষ্ঠ সচিব আছেন, মোদী সরকারের সমালোচনা করে চিঠি পাঠান।

তাদের একজন মহারাষ্ট্রের সাবেক পুলিশ প্রধান ভাপ্পালা বালাচন্দ্র রয়টার্সকে বলেন, “সব সরকারের আমলেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। কিন্তু একজন নেতা এর বিরুদ্ধে কথা বলবেন, এমনটিই সবাই আশা করে।”

আগামী বছর ভারতের জাতীয় নির্বাচন।

জম্মুর শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দিল্লিতে হওয়া প্রথম প্রতিবাদ মিছিলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি রাহুল গান্ধী।

তার মা দলের সাবেক সভাপতি সোনিয়া গান্ধী এবং বোন পিয়াংকা গান্ধীও ওই প্রতিবাদে অংশ নেন।

জম্মুর ঘটনায় বিক্ষোভ হলেও ২০১২ সালে দিল্লিতে বাসে নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর ভারত জুড়ে যত বড় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল এবার সেই তুলনায় মানুষের অংশগ্রহণ কম।

এর কারণ ব্যাখ্যায় নীরা বলেন, আগেরবার বিক্ষোভে অনেক মানুষ অংশ নিয়েছিল, কিন্তু এবার অনুপস্থিত থাকা ব্যক্তিরা খুব সম্ভবত বিজেপি’র সমর্থক।

“বিজেপি’র ওইসব নারী সমর্থক যারা প্রায়ই গদা হাতে বিক্ষোভে নেমে পড়েন, তারা নারী অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে বিক্ষোভে বরাবরই চ্যাম্পিয়ন। এবার তাদের চুপ থাকতে দেখে আমি অবাক এবং কৌতুহলি হয়ে পড়েছি। কেন? এবার শিশুটি মুসলিম বলে? ”

বিজেপি সরকারের চুপ থাকা নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী মানেকা গান্ধী এরই মধ্যে ১২ বছরের কম বয়সের শিশু ধর্ষণে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আবেদন করেছেন।

বিক্ষোভের মধ্যেও থামছে না শিশু ধর্ষণ:

শিশু ধর্ষণ নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যেও গত রোববার মোদীর রাজ্য গুজরাটের সুরাটে রাস্তার পাশে ১১ বছরের এক শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়, যার শরীরে ৮৬টি আঘাতের চিহ্ন ছিল।

ময়নাতদন্তে অন্তত সাতদিন ধরে শিশুটিকে ধর্ষণ ও মারধরের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা যায়।

এছাড়া, উত্তর প্রদেশে সোমবার সন্ধ্যায় বাবা-মার সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা আট বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।