পোশাক কারখানায় মায়েদের স্তন্যদানের সুবিধা ‘উৎপাদনও বাড়াবে’

বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর ৮০ শতাংশ শ্রমিক নারী। কিন্তু এসব কারখানায় মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সুব্যবস্থা নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2023, 03:20 PM
Updated : 8 August 2023, 03:20 PM

দেশে পোশাক কারখানাগুলোতে নারী শ্রমিকদের জন্য যদি সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুব্যবস্থা করা যায়, তাতে দক্ষ নারী শ্রমিকদের ঝরে পড়ার হার কমার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়বে বলে মত এসেছে এক সেনিমারে। 

‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ উপলক্ষে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সেমিনার হয়। জাতীয় পুষ্টি সেবা (এনএনএস), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (এমওএইচএফডব্লিউ), সুইডেন সার্ভিস, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে জাতীয় পুষ্টি সেবার প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর ৮০ শতাংশ শ্রমিক নারী। কিন্তু এসব কারখানায় মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সুব্যবস্থা নেই। 

২০২২ সালের বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইসএস) বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর হার ছিল ৬৫ শতাংশ। কিন্তু ২০২২ সালে তা ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছে। 

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীদের ১০ শতাংশ কাজ করেন প্রতিষ্ঠানিক খাতে। আর ৯০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। 

“এইসব নারীদের যদি বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে নারীরা সন্তান জন্মদানের পর চাকরি ছাড়বে না। পাশাপাশি, একজন দক্ষ নারী কর্মী চাকরি ছাড়ার পর প্রতিষ্ঠানকে ওই পদে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ঝামেলাও পোহাতে হবে না,” বলেন বুলবুল।

তিনি বলেন, “এটা করা হলে কোম্পানির কর্পোরেট ইমেজ যেমন ভালো হবে, তেমনি মায়ের বুকের দুধে ম্যাটারনাল অ্যান্টিবডি থাকায় তা শিশুকে বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকেও রক্ষা করবে।” 

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দেওয়া শুরু করা গেলে তা নবজাতকের মৃত্যু ২২ শতাংশ পর্যন্ত ঠেকাতে পারে। শিশুদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য শিশুদের জীবনের প্রথম ছয় মাসে তাদের সমস্ত পুষ্টির চাহিদা মেটাতে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।  

এ দুটি বিষয় পুষ্টি বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় কর্মপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হলেও সারা দেশে মায়েদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এখনও এ চর্চার বাইরে। বিশেষ করে, কর্মজীবী মায়েদের ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রযোজ্য বলে জানান বুলবুল।

ইউনিসেফ-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, মায়ের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ, সুস্থ মস্তিষ্কের বিকাশ এবং মায়ের সঙ্গে মানসিক বন্ধনকে উদ্দীপ্ত করে। 

“বিশ্বের যেসব দেশে বেসরকারি খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আর যেহেতু এখানে কর্মরত জনবলের একটা বড় অংশ নারী, তাই আমাদের কর্মজীবী মায়েদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছু নিয়োগকর্তা ইতোমধ্যে স্তন্যদাতা মায়েদের সহায়তা করার জন্য নীতিমালা তৈরি করেছেন, তবে আরও অনেক কাজ করা দরকার। 

“ইউনিসেফ কর্মক্ষেত্রে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টিকে তুলে ধরার জন্য নীতিমালা জোরদার করতে বাংলাদেশ সরকার ও অংশীদারদের সহায়তা করছে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, “টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার জন্য আমাদেরকে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। এমনকি কারখানাগুলোতে ডেলিভারির ব্যবস্থাও রাখতে হবে। জানি এটা ব্যয়বহুল এবং কঠিন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য, সহযোগিতা করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইউনিসেফ প্রস্তুত।”

কর্মজীবী মায়েরা তাদের কাজ ও নবজাতকের যত্ন নেওয়ার মধ্যে ভারসাম্য রাখার ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন, তা মোকাবিলার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা, আইন ও বিধির আলোকে ‘মাদারস অ্যাট ওয়ার্ক’ শীর্ষক একটি উদ্যোগ নিয়েছে এমওএইচএফডব্লিউ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। 

এ উদ্যোগের লক্ষ্য হল, কর্মজীবী নারীরা যাতে তাদের মাতৃত্বের অধিকার উপভোগ করতে পারেন। পাশাপাশি, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে তৈরি পোশাক শিল্পসহ সকল কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

এ বছর বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য হল, ‘কর্মজীবী মা-বাবার সহায়ক পরিবেশ গড়ি, মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করি’।