নামের মিল থাকায় ছাত্রলীগের এক নেতার বদলে পেশাদার এ সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের দাবির বিষয়ে ডিএমপির ডিসি (জনসংযোগ) বলেন, “এখন ওরা (ঢাকা ট্রিবিউন) যেটা ক্লেইম করেছে, সেটা যাচাই-বাছাই চলছে।”
Published : 31 Oct 2024, 10:05 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগে ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের একজন ফটোসাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে নামের মিল থাকায় ভুল করে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি সহকর্মীদের।
রাজধানীর কাকরাইল থেকে ফটো সাংবাদিক মেহেদি হাসান সাগরকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশের গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
পুলিশের ভাষ্য, মেহেদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলার আসামি।
তবে তার সহকর্মীদের দাবি, যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটির আসামি মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান সাগর। তবে পুলিশ ধরেছে একই নামের ফটোসাংবাদিক মেহেদিকে যিনি ওই হলের ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। তবে পূর্ণকালীন এই পেশাদার ফটো সাংবাদিক হলে সিট পাওয়ার জন্য একসময় ‘নামেমাত্র হল’ শাখা ছাত্রলীগে নাম লিখিয়েছিলেন।
ঢাকা ট্রিবিউনসহ মেহেদির অন্য সহকর্মীরা বলছেন, মেহেদি জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের পুরোটা সময় দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের পাশাপাশি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার হয়ে কাজ করেন।
সাগরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের পাঠানো বার্তায় বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব হল ছাত্রলীগ শাখার তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান সাগরকে রাজধানীর কাকরাইল থেকে আজ সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।”
পরে ভুল ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে ঢাকা ট্রিবিউনের সহকর্মী ও বন্ধুদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেহেদির নামে শাহবাগ থানায় মামলা আছে। এখন ওরা (ঢাকা ট্রিবিউন) যেটা ক্লেইম করেছে, সেটা যাচাই-বাছাই চলছে।”
নিউ ইয়র্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা এপির ঢাকা অফিসের একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক বলেন, মেহেদি তাদের সঙ্গে খণ্ডকালীন (স্ট্রিংগার) হিসেবে কাজ করেন। জুলাই-আগস্টে এপির টেলিভিশনের জন্য তার কাছ থেকে ভিডিও ফুটেজ নিয়েছিলেন তারা।
ছাত্র আন্দোলনের ছবি তুলে আলোচিত হওয়া ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ মেহেদির গ্রেপ্তারের বিষয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন, “যে ছেলেটি জুলাইয়ে ক্যামেরা হাতে ছোটাছুটি করত, আজ সেই ছেলেটা হত্যা মামলার আসামি!”
ঢাকা ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আলী আসিফ শাওন বলেন, মেহেদি ছাত্র অবস্থা থেকেই পূর্ণকালীন ফটো সাংবাদিকতায় যুক্ত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৌদ্ধ ও পালি বিভাগের ছাত্র, পড়াশোনা প্রায় শেষ। ছাত্রজীবনের শুরুর দিকে হলে ওঠার প্রয়োজনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন। ঢাকা ট্রিবিউনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাতেও কাজ করেন তিনি।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৯১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে শাহবাগ থানায়। এতে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে মেহেদি হাসান সাগরকে আসামি করা হয়। সেই মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
তবে গ্রেপ্তার মেহেদির হলের একজন বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, ওই মামলায় ১৩৪ নম্বর আসামি হচ্ছেন মুজিব হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান সাগর। আর গ্রেপ্তার ফটোসাংবাদিক সাগর একই হল শাখার ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন।
তার দাবি, আন্দোলনের পুরোটা সময় ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছেন মেহেদি। অপরদিকে ওই সময় সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদিকে ক্যাম্পাসে রাম দা হাতে দেখা গেছে, যার ছবি ও ফুটেজও রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক সাগরকে ধরিয়ে দিতে পোস্টারও করা হয়।