কনট্যাক্ট লেন্সের খুঁটিনাটি

আধুনিক নারীদের সাজসজ্জায় কনট্যাক্ট লেন্স একটি জনপ্রিয় উপকরণ। পাওয়ারফুল লেন্সের পাশাপাশি কসমেটিকস লেন্সেরও কদর বেড়েছে। বাংলাদেশে ‘ফ্রেশলুক’, ‘ইগো’র লেন্সগুলোর জনপ্রিয়তা বেশ। দামেও সস্তা। তাই দেদার বিক্রিও হচ্ছে।

মরিয়ম সেঁজুতিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2013, 01:14 PM
Updated : 31 August 2013, 01:14 PM

এটা সত্যি, ফ্যাশন লেন্সের বদৌলতে আপনার চোখ জোড়া হচ্ছে মোহনীয়। সেই সঙ্গে অনেকের দৃষ্টিকেড়ে নিচ্ছেন। তবে সব কিছুরই সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও আছে।

পাওয়ারফুল লেন্স ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা হয়। তবে বিভিন্ন রংয়ের কন্ট্যাক্ট লেন্স আমরা নিজের পছন্দমতো কিনে থাকি। এই লেন্স পাতলা গোলাকার প্লাস্টিক ডিস্ক যা কর্নিয়া ঢেকে রাখে। কালারফুল লেন্স শুধু চোখের সৌন্দর্যে পরিবর্তন আনে। চোখের দৃষ্টির উন্নতি ঘটায় না।

কনট্যাক্ট লেন্সের ক্ষতিকর দিকসহ আরও খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানাচ্ছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টার ডা. এম আমিনুল ইসলাম।

কনট্যাক্ট লেন্স পরার সঠিক নিয়ম

লেন্সটি আঙুলের ডগায় নিয়ে কাপের মতো শেইপ বানান। এবার আঙুলটিকে সরাসরি চোখের সামনে নিন। এমন ভাবে তাকান যেন আপনি ওই কাপের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারপর চোখ বড় বড় করুন আর লেন্সটি দ্রত পরে ফেলুন।

কনট্যাক্ট লেন্সের ক্ষতিকারক দিক

ডেকোরেটিভ কনট্যাক্ট লেন্সের সঠিক ব্যবহার না করলে চোখে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে চোখের ইনফেকশন ও কর্নিয়াল আলসার অন্যতম। এ ছাড়া কর্নিয়াল অ্যাবরাশন, অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন, অন্ধত্ব এমন কি দৃষ্টিশক্তিও লোপ পেতে পারে।

সারাক্ষণ লেন্স পরলে চোখে এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন।

যদি চোখে অস্বস্তি হয়, অতিরিক্ত পানি পড়ে চোখ দিয়ে, লাল হয়ে ফুলে যায় অথবা ব্যথা করে তাহলে বুঝবেন চোখের ইনফেকশন হয়েছে।

অ্যালার্জিক কনজাংটিভিটিজ

অ্যালার্জির কারণে জ্বালা-যন্ত্রণা হয়। আর কনজাংটিভা হল একটি পর্দা যা চোখের সাদা অংশকে ঢেকে রাখে। এটি সাধারণত থায়োমারসালের (লেন্স সংরক্ষণের জন্য এক ধরনের প্রিজারভেটিভ) কারণে হয়ে থাকে। লেন্স পরার পর যদি চোখ লাল হয়ে যায় বা চুলকায়, তাহলে তাড়াতাড়ি কোনো চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

কর্নিয়াল হাইপোকসিয়া

হাইপোকসিয়া মানে অপর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন। লেন্স থেকে যে অক্সিজেন তৈরি হয় তা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিফিউজ না হয়, তাহলে কর্নিয়াল হাইপোকসিয়া দেখা দিতে পারে। ব্লাড ভেসলের মাধ্যমে শরীর এ সময় ওই কর্নিয়ার পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেয়। এই অতিরিক্ত ব্লাড ভেসল কর্নিয়াল নিয়োভাসকুলারাইজেশন বলে। ফলে চোখ থেকে পানি পড়ে, লাল হয়ে যায়, আলো সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায়। তাই সব সময় ভালো মানসম্পন্ন লেন্স কেনা উচিত।

মাইক্রোবিয়াল কেরাটাইটিস

দীর্ঘদিন বা দীর্ঘ সময় ধরে লেন্স পরলে মাইক্রোবিয়াল কেরাটাইটিস হয়। প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে দু-চারজনের হয়ে থাকে। অনেকক্ষণ লেন্স পরে থাকলে জবাণু কর্নিয়াল সারফেসে আটকে যায়, ফলে মাইক্রোবিয়াল কেরাটাইটিসের আশঙ্কা থাকে।

টাইট লেন্স সিনড্রোম

টাইট লেন্স সিনড্রোম তখনই হয়, যখন সফট কনট্যাক্ট লেন্স চোখের কর্নিয়ার সঙ্গে টাইট বা শক্ত হয়ে আটকে থাকে। যদি সারা রাত লেন্স পরে থাকেন তাহলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লেন্স সারা রাত কোনো নড়াচড়া করে না, ফলে কর্নিয়ায় আটকে যায়। লেন্স শুষ্ক হয়ে গেলেও টাইট লেন্স সিনড্রোম হতে পারে। সফট কনট্যাক্ট লেন্স অনেকদিন ধরে ব্যবহার করলে ময়েশ্চার কম জমে। সেক্ষেত্রেও এই অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। আবার যদি লেন্স সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করা না হয়, তাহলেও লেন্স শুষ্ক হয়ে যায়।

কনট্যাক্ট লেন্সের যত্ন

কসমেটিক লেন্সের আর সলিউশনের অপর্যাপ্ত যত্ন চোখের রোগসংক্রমণের আশঙ্কা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। এ অবস্থা খুব তাড়াতাড়ি এবং মারাত্মক আকারে ধরা দেয়।

১. প্রথম এবং প্রধান ধাপ হচ্ছে লেন্স পরিষ্কার রাখা। জীবণুমুক্ত করা। পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে শুধু মাত্র সুপারিশকৃত সলিউশন ব্যবহার করবেন।

২. যদি আপনি ‘ডিসইনফেকশন কেইস-জি’ লেন্স ভালোভাবে মুছে নেন তাহলে মাইক্রো অরগানিজমের আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়। ফলে ইনফেকশন হওয়ার চান্স কম থাকে।

৩. প্রতিবার ব্যবহারের পর নতুন সলিউশনের মধ্যে ডুবিয়ে রাখবেন। অনেকেই একই সলিউশনে বারবার ব্যবহার করেন। এটা একদম ঠিক না। লেন্স ব্যবহার করার আগে ‘ডিসইনফেকশন কেইস’ পরিষ্কার করবেন। শুকিয়ে নেবেন। তারপর নতুন সলিউশন দিয়ে লেন্স সংরক্ষণ করবেন।

৪. লেন্স সংরক্ষণের জন্য কখনওই ডিস্টিলড ওয়াটার, ট্যাপের পানি অথবা ঘরে বানানো স্যালাইন ব্যবহার করবেন না। এতে করে ‘Acanthamoeba keratitis’ হয়, যার কোনো চিকিৎসা নেই।

৫. মেয়াদোত্তীর্ণ হলে লেন্স আর ব্যবহার করবেন না। অনেকে ভাবেন- ‘এত টাকা দিয়ে কিনে ছয় মাস বা এক বছর হলে ফেলে দেব? থাক আর কটা দিন, কী আর হবে?’

যদি আপনি এমনি ভেবে থাকেন তাহলে খুব ভুল করছেন। কারণ এ কটা দিনেই আপনার চোখের চরম ক্ষতি হতে পারে। এমনকি মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সলিউশনও ফেলে দেবেন।

সতর্কতা

আপনি যেমন আপনার দাঁতের ব্রাশ কারো সঙ্গে ভাগভাগি করেন না, তেমনি কনট্যাক্ট লেন্সও অন্যকে ধার দেবেন না। কারণ ‘মাইক্রো-অরগানিজম গ্রোথ’ এভাবেও হয়।

  • লেন্স ছোঁয়ার আগে হাত অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নেবেন। কারণ হাতের জীবাণু লেন্সে লেগে আপনার চোখের ক্ষতি করবে।
  • লেন্স পরার পর চোখের মেইকআপ নেবেন। আর মেইকআপ তোলার আগে লেন্স খুলে ফেলবেন।
  • দেখেশুনে বুঝে ভালো দোকান থেকে লেন্স কিনবেন।
  • দীর্ঘ সময় ধরে লেন্স পরে থাকবেন না। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় তো অবশ্যই খুলে রাখবেন।
  • লেন্স পরার পর যদি চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা হয় বা চোখ লাল হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলুন। কারণ ফ্যাশনের চেয়ে চোখ রক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য রংবেরঙের লেন্সের ব্যবহার করুন। তবে সাবধান। কারণ মানুষের চোখ খুব নাজুক। এর একবার কোনো ক্ষতি হলে হাজার ক্ষতিপূরণ দিয়েও চোখের আলো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না।

তাই সময় থাকতেই সচেতন হোন। সম্ভব হলে লেন্স কেনার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর চোখের কোনো সমস্যা দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে ডাক্তারের কাছে চলে যান।

এ পরামর্শগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। আশা করা যায় লেন্স ব্যবহারজনিত অনেক সমস্যা থেকে আপনি দূরে থাকতে পারবেন।

ছবি কৃতজ্ঞতায় : তাজিন আহমেদ