শীতে ত্বকের বিশেষ পরিচর্যা

এই ঋতুতে শুষ্ক পাতার মতো আমাদের ত্বক ও চুল হারায় সতেজতা। তাই চাই বাড়তি যত্ন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2016, 09:50 AM
Updated : 7 Jan 2016, 10:36 AM

এই সময় অনেকরই নানা ধরনের ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, খসখসে ও মলিন হয়ে যাওয়া, চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, ঠোঁট ফাটা, পা ফাটা ইত্যাদি বেশ সাধারণ কিছু সমস্যা। তাই বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই মৌসুমে ত্বক ও চুলের বাড়তি যত্ন নিতে হবে।

রূপচর্চাবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে শীতে ত্বক ও চুলের জন্য ঘরোয়া কিছু যত্নের বিষয় উল্লেখ করা হয়।

মুখের ত্বকের জন্য তেল: ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে এই মৌসুমে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার বাদ দিয়ে বেছে নেওয়া যেতে পারে তেল।

শুনতে অদ্ভূত শোনালেও সত্যি যে, তেল সব ধরনের ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। কিছু তেলে রয়েছে অ্যন্টিএইজিং উপাদান যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার পাশাপাশি ত্বক টানটান করতেও সাহায্য করে। অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল ইত্যাদি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপকারী। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য টি-ট্রি অয়েল, সুইট আমন্ড অয়েল এবং গ্রেপ সিড অয়েল বেছে নেওয়া যেতে পারে।

শরীর স্কাব করতে ‘বাথ সল্ট’: সারা বছর যে বডি স্ক্রাবগুলো ব্যবহার করা হয় এই মৌসুমে সেগুলো সরিয়ে রেখে বেছে নিন বডি সল্ট। কারণ বাথ সল্ট, ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে এবং শীতে নিস্তেজ হয়ে পড়া ত্বকে জেল্লা ফিরিয়ে আনে। তাছাড়া কুসুম গরম পানিতে বাথ সল্ট ছড়িয়ে কিছু গা এলিয়ে থাকা যায়। এতে পায়ের ফোলাভাব কমবে, ক্লান্তি দূর হবে এবং পিঠে ব্যথাও উপশম হবে। তাছাড়া এতে রয়েছে তৈলাক্ত উপাদান যা ত্বক শুষ্ক করবে না বরং নমনীয় রাখতে সাহায্য করবে। 

ঠোঁটের বাড়তি যত্ন: ত্বকের অন্যান্য অংশের তুলনায় ঠোঁটের চামড়া অনেকটাই পাতলা। তাই শুষ্ক মৌসুমে ঠোঁট খুব দ্রুত আর্দ্রতা হারায়। তাই প্রয়োজন এর বিশেষ যত্ন। সব সময় সঙ্গে লিপ বাম বা লিপ বাটার রাখতে হবে। প্রতি ঘন্টায় একবার করে লিপ বাম লাগিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া লেবু ও চিনি আর সামান্য মধু মিশিয়ে ঠোঁট স্ক্রাব করে নিতে হবে সময় করে।

হাতের যত্নে হ্যান্ড ক্রিম: দিনে বেশ কয়েকবার হাত ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর একবার হাত ধোয়ার পরই হাত শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই হাতের যত্নে সব সময় সঙ্গে হ্যান্ড ক্রিম রাখা উচিত। দুধ বা দুধজাতীয় উপাদান আছে এমন হ্যান্ড ক্রিম সবচাইতে উপকারী। আর এই মৌসুমে হালকা হ্যান্ড ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।

হাত মোজা পরা উচিত: অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় হাতের ত্বকের ক্ষতি হয়। তাই শীত বেড়ে গেলে হাত মোজা পরা যেতে পারে। বিশেষ করে রাতে, মোটরবাইকে ভ্রমনের সময় বা ঘরের বাইরে থাকা অবস্থায় থাকে মোজা পরে থাকা উচিত। এতে শীত কম লাগবে। তবে মোজা পরার আগে হাতে লোশন লাগানো উচিত হবে না। মোজা খুলে ফেলে তারপর হাতে ক্রিম বা লোশন লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।

চুলের যত্নে ‘হট অয়েল’ মালিশ: এতে চুল হারানো আর্দ্রতা ফিরে পায় এবং চুল নরম ও মসৃণ হয়ে ওঠে। ভালো ফলাফলের জন্য দুই থেকে তিনটি তেল যেমন- ক্যাস্টর অয়েল, আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল এবং নারিকেল তেল নিয়ে পরিমাণ মতো মিশিয়ে হালকা গরম করে চুলের গোড়ায় মালিশ করতে হবে হালকা হাতে। প্রতিবার শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

কুসুম গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা:
কুসুম গরম পানিতে খানিকটা শ্যাম্পু বা বডি ওয়াশ এবং কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল তেল মিশিয়ে নিয়ে পা ডুবিয়ে রাখতে হবে। এ সময়টুকু আরাম করে বসে কাটান। প্রতিদিন খানিকটা সময় বের করে এ প্রক্রিয়ায় পায়ের যত্ন নিন। মাঝে মাঝে পা স্ক্রাব করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এতে পা ফাঁটার সমস্যা কমবে। পা পরিষ্কার করার পর ভালোভাবে লোশন লাগিয়ে উলের মোজা পরে নিতে হবে।

চুল ও ত্বকের জন্য মধু: ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে মধু। পাকাকলা ভালোভাবে ভর্তা করে তার সঙ্গে খানিটা অলিভ অয়েল ও মধু মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রণটি শ্যাম্পু করার আগে মাথায় ও পুরো চুলে মেখে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। শুষ্ক তালু ও চুলের জন্য এই মিশ্রণ দারুণ। ত্বকের জন্য কয়েক ফোঁটা গোলাপ জলের সঙ্গে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে তা ত্বকে হালকাভাবে ঘষে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। 

ফল দিয়ে ফেইশল: ত্বক পরিষ্কারের জন্য ফেইশল বেশ উপকারী। পার্লারে বিভিন্ন ধরনের ফ্রুট ফেইশলের তালিকা দেওয়া থাকে। তবে এই শীতে ঘরেই করা যেতে পারে। অ্যাভাকাডো, আপেল, কমলা, আঙুর, পেঁপে, কলা ইত্যাদি ফলের মধ্য থেকে সুবিধা মতো কয়েকটি ফল নিয়ে ভর্তা করে নিন। এই মিশ্রণটি ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বক কোমল ও মশ্রিণ হবে।

ডিমের প্যাক: ডিম ত্বক ও চুলের জন্য সমান উপকারী। একটি পাত্রে শুধু ডিমের সাদা অংশ নিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিতে হবে যেন ফোমের মতো হয়। এই ফোম ত্বকে মেখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ডিমের সাদা অংশের এবং দই মিশিয়ে একটি চুলের মাস্ক তৈরি করা যায়। এটি দারুণ একটি কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে।

ছবির মডেল: মীম। ছবি: দীপ্ত।