‘শিশুদের জন্য’ নোবেল পদক বেচে দেন যে সাংবাদিক

১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলারে বিক্রি হয়ে যায় তার নোবেল পুরস্কার।

রায়হান আহমেদ তামীমরায়হান আহমেদ তামীম
Published : 20 March 2024, 09:36 AM
Updated : 20 March 2024, 09:36 AM

নোবেল পুরস্কার পাওয়া প্রথম সাংবাদিক হলেন জার্মানির কার্ল ফন অসিয়েতস্কি, ১৯৩৫ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পান। তারপর ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান দুই সাংবাদিক, রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাতভ এবং ফিলিপাইনের মারিয়া রেসা।

 মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াইয়ে ‘সাহসী’ ভূমিকার স্বীকৃতিতে তাদের নাম ঘোষণা করে নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউট। মারিয়া রেসা হলেন ফিলিপিন্সের অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম র‌্যাপলারের সহপ্রতিষ্ঠাতা। অন্যদিকে দিমিত্রি মুরাতভ রাশিয়ার অনুসন্ধানী সংবাদপত্র নোভায়া গেজেটার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৩ সালে প্রকাশের পর থেকেই তিনি এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ দারুণ প্রভাব ফেলে দিমিত্রি মুরাতভের মনে। কিছুদিনের মধ্যেই যুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিশ্বজুড়ে হৈ-চৈ পড়ে যায়। যুদ্ধে ঘরবাড়ি-বসতভিটা হারায় ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষ, উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে শিশুরা। সেই বিপন্ন শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন দিমিত্রি মুরাতভ। তিনি তার নোবেল পুরস্কার নিলামে তোলার ঘোষণা দেন।

১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলারে বিক্রি হয়ে যায় তার নোবেল পুরস্কার। সেই অর্থ ইউক্রেনের যুদ্ধে অসহায় শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য দান করা হয় মানবাধিকার সংস্থা ইউনিসেফের কাছে। এর আগে নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে পাওয়া ৫ লাখ ডলারের নগদ অর্থও দান করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুরাতভ।

তার পুরো নাম দিমিত্রি আন্দ্রেইভিচ মুরাতভ। ১৯৬১ সালের ৩০ অক্টোবর রাশিয়ার সামারায় জন্ম তার। সামারা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন। কলেজে পড়া অবস্থাতেই তিনি সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহবোধ করতেন। তখন থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় সংবাদপত্রে নানা প্রতিবেদন লিখতেন তিনি।

নোবেল পদক বেচে দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ১৯৬২ সালে ডিএনএ-র গঠন আবিষ্কারের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন। ২০১৪ সালে এসে নিজের নোবেল পদক বিক্রি করে দেন তিনি, জানান পদক বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ দাতব্য কাজ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য দান করার পরিকল্পনার কথা। অবশ্য তার কয়েক মাস পরই ওয়াটসনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিনে পয়সায় মেডেল ফেরত দেন ক্রেতা।

১৯২২ সালে নোবেল পান পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর। ১৯৩৯ সালে নিজের নোবেল মেডেলটি বিক্রি করেন তিনি। অজানা এক ক্রেতা সেটি কেনেন এবং পাওয়া অর্থ যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিনল্যান্ডের শরণার্থীদের সেবায় দান করেন বোর। যুদ্ধ শেষে সেই অচেনা ক্রেতা ডেনমার্কের ফ্রেডারিকসবর্গ জাদুঘরে বোরের মেডেলটি দান করেন, এখনও সেটি সেখানে প্রদর্শনীতে রয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ জানান, মানবতার সেবায় নোবেল বেচে দেওয়ার অনুপ্রেরণা তিনি বোরের কাছ থেকেই পেয়েছেন।

তথ্যসূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট