ছড়াগল্প: টুকটুকি আর ড্রাগন-রাজা

আহমাদ স্বাধীনআহমাদ স্বাধীন
Published : 6 Feb 2019, 07:11 AM
Updated : 6 Feb 2019, 07:25 AM

একটা ছিলো ড্রাগন রাজা

আর ছিলো এক খুকি

হাসি খুশি সেই খুকিটার নাম ছিলো টুকটুকি

পাহাড় ঘেরা গহিন বনে ড্রাগন রাজার দুর্গ

অচেনা বন

নয়তো কাছে

অনেক অনেক দূর গো।

টুকটুকিটার বাপ ছিলো না

মা’ও ছিলো না কাছে

গ্রামবাসীরা বলতো-

‘তারা হয়তো বেঁচেই আছে’।

কিন্তু কোথায়?

টুকটুকি তা, জানতে চাইতো যেই

তখন কারো মুখেই কোনো কথার জবাব নেই।

ফিসফিসিয়ে বলতো সবাই,

‘বলিস না কেউ চুপ’

খুকির চোখে জলের ধারা বইতো টাপুর টুপ।

২.

দাদির সাথে থাকতো খুকি

করতো পড়াশোনা।

সবাই তাকে বাসতো ভালো

এইটুকু স্বান্তনা।

টুকটুকিদের গাঁয়ের সবাই কাজে ছিলো পাকা

পাহাড় কেটে তাহার বুকে ফসল বুনে রাখা,

কঠিন সে কাজ বেশ

তবু তারা কাজের মাঝেই খুঁজতো খুশির রেশ।

সবার প্রতি ছিলো সবার ভালোবাসা-বাসি

তবু কারোর মুখে তো নেই একটুখানি হাসি।

সবার মনে সারাটাক্ষণ কিসের যেন ভয়

টুকটুকি তা যেইভাবে হোক জানবেই নিশ্চয়।

৩.

তাই তো সেদিন রাতে

শোবার আগে বসলো সে তার বুড়ো দাদির সাথে।

দাদিকে সে বললো

আমায় বলতে হবে সব

নেই কেনো আমাদের গাঁয়ে খুশির কলরব?

আমার মা আর বাবা কোথায়

সবার কিসের ভয়?

বলো আমার চারপাশ এতো

কেনো আঁধারময়?

৪.

আচলে মুখ ঢেকে দাদি বললেন, ওরে বাছা

আমাদের এই গ্রামটা হলো একটা সবুজ খাঁচা!

কারণ গাঁয়ের চতুর্পাশে ড্রাগন রাজার চর

গ্রাম পাহারা দিচ্ছে ওরা বসে নিরন্তর।

কেউ যেন এই গাঁয়ের থেকে

অন্য কোথাও না যায়,

তাই পাহারা বসিয়েছে পাজি ড্রাগন রাজায়।

ফসল ফলাই আমরা তবে

ভাগ দিতে হয় তাকে

নইলে গাঁয়ের মানুষ ধরে বন্দি করে রাখে।

যেমন করে হলুদ মরিচ বাটে শিলের পাটায়

তেমন করেই ধরে নিয়ে ইচ্ছেমতো খাটায়।

ড্রাগন রাজার নিঃশ্বাসে বিষ

আগুন বেরোয় তাতে

লম্বা ভীষণ ধারালো নখ,

তার বারো পাও-হাতে।

৫.

ড্রাগন রাজার রানী আছে,

ডিম পাড়ে রোজ ভোরে

বিকেলে তার বাচ্চা ফুটে পাখনা মেলে ঘোরে।

ড্রাগন রাজার হাজার হাজার বিশাল ছেলে-পেলে

বাবার মতো সুযোগ পেলেই

আস্ত মানুষ গেলে।

ড্রাগন রাজার হুঙ্কারে বন, নদী, পাহাড় কাঁপে

তার প্রাসাদেই বন্দি আছে তোমার মা আর বাপে।

৬.

টুকটুকি সব শোনার পরে বললো

শোনো তবে

আমার হাতেই ড্রাগন রাজার উচিত বিচার হবে।

আমার বাবা মা-সহ সব বন্দি যারা আছে

মুক্ত করে আনতে যাবো ড্রাগন রাজার কাছে।

পেরিয়ে যাবো পাহাড়, নদী দুর্গে দেবো হানা

ছোট্ট বলে তোমরা আমায় কেউ করো না মানা।

শিউরে উঠে বললো দাদি,

পারবে না টুকটুকি

ড্রাগন রাজা মস্ত বড়

তুমি তো এক খুকি।

হোক, তাতে কী

সাহস ভরা আমার এ বুক খানি

মারবো আমি ড্রাগন রাজা, মারবো ড্রাগন রানী।

৭.

ছোট্ট খুকি চললো হেঁটে, শুনলো না আর কথা

ভাঙলো তখন বনের পশু-পাখির নিরবতা।

গাঁয়ের মানুষ ভয়কাতুরে বনের পশু তা না

ড্রাগন রাজার অত্যাচারের কথা সবার জানা।

তাই তো ওরা খুকির সাথে যুদ্ধে যেতে রাজি

ড্রাগন মারার জন্য সবাই ধরবে জীবন বাজি।

টুকটুকি যেই ডাক দিয়েছে

আসলো বনের হাতি

বোলতা এসে চাইলো হতে যুদ্ধ জয়ের সাথী।

ঝাঁক বেধে সব কাঁকড়া এলো

নদীর থেকে উঠে

ড্রাগন মারার কথায় ওদের ঘুম গিয়েছে ছুটে।

বন পাহারার বুড়ো ছিলেন

সাথে এলেন তিনি

বললেন, ‘আমি ড্রাগন রাজার দুর্বল দিক চিনি’।

খুকি তোমার যুদ্ধ জয়ের জন্য আমি যাবো

তোমার সাথে ড্রাগন রাজার ঘাড়খানি মটকাবো।

বোলতা, হাতি, কাঁকড়া, বুড়ো চললো হেঁটে পথ

খুকির যুদ্ধ যাত্রা রোখার, নেই কারো হিম্মত।

৮.

সঙ্গি নিয়ে গ্রাম পেরিয়ে ছুটছিলো টুকটুকি

গ্রাম পাহারার ড্রাগন বলে,

‘যাচ্ছো কোথায় খুকি?’

যাচ্ছি ড্রাগন রাজার বাড়ি,

করবো ভীষণ মারামারি-

মা-বাবাকে মুক্ত করে আনবো নিজের ঘরে

মারবো পাজি ড্রাগনটাকে আচ্ছা মতো করে।

খুকির কথা শুনেই ড্রাগন রাজার ছেলের দল

বললো খুকি ছোট্ট তুমি, খুব বেশি দুর্বল।

যুদ্ধ করার ভাবনা রেখে মাঠেই খেলা করো

তা না হলে এই আমাদের নখের থাবায় মরো।

৯.

বন পাহারার বুড়ো তখন দৌড়ে এলো কাছে

বললো দেখি কার ঘাড়ে

কয়খানা মাথা আছে?

টুকটুকিকে মারতে এলে কাটবো তোদের ডানা

ডানা কাটার মন্ত্র আমার অনেক ভালো জানা।

এই বলে সে মন্ত্র পড়া করে দিলেন শুরু

ড্রাগনগুলো বললো পালাই

রক্ষা করো গুরু

বন্ধ করো মন্ত্র পড়া, চাই না ডানা ঝরুক

এই খুকিটা যুদ্ধে যাবে?

যা খুশি ওর করুক।

১০.

গ্রাম পেরিয়ে চললো ওরা

হাতির পিঠে খুকি

ভাট শালিকের ঝাঁক বলে

তোর জয় হবে টুকটুকি।

সবুজ ঘাসের লাল ফড়িং আর

প্রজাপতির সারি

বললো পাজি ড্রাগনটাকে

মারো তাড়াতাড়ি।

কত্ত নদী বন ও পাহাড় ডিঙিয়ে অবশেষে

আসলো ওরা অত্যাচারি ড্রাগন রাজার দেশে।

১১.

এসেই হাতি এক নদী জল

করে নিলো সাবাড়

বললো খুকি জমাও পেটে, লাগবে এ জল আবার।

কাঁকড়া এবং বোলতাদেরকে

বললো খুকি শোনো

তোমরা কোথাও লুকোও যেন

শব্দ না হয় কোনো।

ডাকবো যখন তখন এসে

করবে তুমুল লড়াই

যুদ্ধ করে ভাঙতে হবে ড্রাগন রাজার বড়াই।

বনবুড়ো আর খুকি দুজন

ডাকলো ড্রাগনটাকে

হাজার হাজার ড্রাগন ছুটে আসলো ওদের ডাকে।

১২.

কে রে তোরা

কোথার থেকে এসে ড্রাগন রাজ্যে

লড়াই করার সাহস দেখাস

মারবো তোদের আজ যে।

এই বলে সব ড্রাগনগুলো উড়তে চাইলো যেই

দেখলো ওদের দুই বাহুতে পাখনা জোড়া নেই!

হায় কী করে এমন হলো

করলো কে এই জাদু?

ওদের দেখে হাসছে তখন বন পাহাড়ার দাদু।

মন্ত্র পড়ে বুড়ো ওদের পাখনা দিলো ফেলে

পাখনা ঝরার কষ্টে তখন

কাঁদছে বসে ড্রাগন রাজার

হাজার ছেলে পেলে।

১৩.

এই কী হলো হচ্ছে কিসের এত্তো কানাকানি

প্রসাদ থেকে আসলো রাজা আসলো ড্রাগন রানী।

এসেই দেখে হাতির পিঠে বসে ছোট্ট খুকি

ডানা ভাঙা ড্রাগনরা সব দিচ্ছে উকিঝুকি।

কেমন করে এমন হলো

ভাঙলো কে সব ডানা?

বুড়ো বলে ডানা ভাঙার মন্ত্র আমার জানা।

টুকটুকিটা তখন

ড্রাগন রাজার সামনে গিয়ে

বললো কোথায় বাপ-মা আমার জলদি আসো নিয়ে।

তা না হলে আমরা তোমায় দেবো এমন সাজা

ধ্বংস হবে রাজ্যসহ তুমি ড্রাগন রাজা।

১৪.

আয় তবে লড় আমার সঙ্গে

দেখি কেমন জোর

আগুন ছুড়ে শরীর কাবাব করবো আমি তোর।

এই বলে যেই ঘাড় উঁচালো

ডাকলো খুকি কাঁকড়া

পিলপিলিয়ে বেড়িয়ে এলো লাল কাঁকড়ার ঝাঁক রা।

এসেই দিলো রাজার পায়ে কুটুর কুটুর চিমটি

ড্রাগন রাজা যায় গুটিয়ে

যেন ভিতুর ডিমটি।

কাঁকড়া-বিছে চিমটি কাটে ড্রাগন রাজার মাজায়

এই কে আছো কাঁকড়া তাড়াও

চেঁচায় ড্রাগন রাজায়।

১৫.

ডানাভাঙা ড্রাগনগুলোও আসলো এবার তেড়ে

নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে আগুন দিচ্ছে ওরা ছেড়ে।

‘কইরে হাতি’ বললো খুকি

এবার হাতির পালা

নদীর পানি তোমার পেটে, ছোটাও পানির নালা।

হাতির সুড়ের ডগায় তখন নদীর পানির ধারা

ড্রাগন যতই ছুড়ছে আগুন সব নিভে হয় সারা।

আগুন পানি আগুন পানি তুমুল রকম যুদ্ধ

একটা হাতির সাথে লড়ে ড্রাগন শহর সুদ্ধ

ছুড়তে ছুড়তে শেষ হয়ে যায়

হাতির পেটের পানি

এমন সময় বললো হঠাৎ ড্রাগন রাজার রানী

ঝাঁপিয়ে পরো ওদের উপর

জলদি করে সবাই

নইলে ছোট খুকির হাতেই আজকে হবে জবাই।

১৬.

এবার খুকি বোলতাদেরকে ডাকলো

কোথায় তোমরা

ফুল ফুটিয়ে দেখাও কেমন

বিষ তোমাদের ভোমরা।

ড্রাগন রানী ছেলে-পেলে সবার নাকে হুল

বোলতা লড়াই করছে এবার তুমুল হুলুস্থুল

একটা দুইটা করে সবার ঢুকলো নাকের ফাঁকে

লাফ দিয়ে সব ড্রাগন

ওরে বাপরে’ বলে ডাকে।

বাঁচাও খুকি থামাও ওদের

নইলে মরেই যাবো

বললো খুকি

‘আগে বলো যা চাই তা কি পাবো’?

বলো কী চাই দিচ্ছি তোমায় বোলতা তবু থামাও

নাকের থেকে যাচ্ছে মাথায়

জলদি ওদের নামাও।

আমার বাবা-মা সহ সব বন্দিদেরকে ছাড়ো

নইলে দেখি বোলতার হুল কত্ত খেতে পারো

ড্রাগন রাজা খুলে দিলো বন্দিশালার তালা

মা-বাবাকে পেয়ে খুকির

খুশি হবার পালা।

মুক্তি পেলো বন্দি যারা ছিলো পাশাপাশি

কাঁকড়া, হাতি, বোলতা, বুড়ো সবার মুখে হাসি

বোলতাগুলো সরাও এবার

বললো ড্রাগন রাজা

ভুল করেছি তাই তো পেলাম

এমন কঠিন সাজা।

১৬.

টুকটুকি ওর মা বাবা আর সঙ্গী-সাথী সব

সঙ্গে নিয়ে ফিরলে গাঁয়ে

‘সব কিছু সম্ভব’

এমন কথাই বললো সবাই-

ও খুকি তুই বীর

তোর সাহসে গাঁয়ের সবার উঁচু রবে শির।

বুদ্ধি-সাহস থাকলে পরে সকল কাজেই জয়

তখন থেকে গাঁয়ের সবাই বিজয়ী-নির্ভয়।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!