ভিনদেশি হয়েও মেসি আমাদের ঘরের মানুষে পরিণত হয়েছে। এ নামটা যেন পাশের বাড়িরই কারো!
Published : 12 Dec 2022, 11:12 PM
তার পছন্দের রঙ হলুদ। আধো আধো ভাবে বলে ‘লোলো’ (ইয়েলো)। প্রায় এক মাস আগে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৯৫১ কিলোমিটার দূরে যখন ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয় তখন সে আঁচ এসে লাগে বাংলাদেশেও। পছন্দের রঙ অনুযায়ী ওই সময় সে বেছে নিয়েছিল ব্রাজিলের জার্সি।
ওর বেশ কয়েকটা ফুটবল আছে। সেগুলো নিয়ে সে আগে থেকেই খেলতো, কিন্তু বিশ্বকাপ যেন অন্য সবার মতোই তার জীবনেও নতুন রঙ নিয়ে এসেছে। রাস্তায়, ছাদে পতাকা দেখে বলে, ‘খেলার পতাকা’। শুরুর দিকে টেলিভিশনে খেলা চলার সময় নিজের ফুটবল নিয়ে আসতো খেলার জন্য।
এতক্ষণ যার কথা বলছি, সে হচ্ছে রুশদা রহমান সোহা, বয়স সবে তিন পেরিয়েছে৷ পরনে হলুদ জার্সি, তারপরও আর্জেন্টিনার ম্যাচের সময় যখন বল থাকে মেসির পায়ে, সে তখন ‘মেসি...মেসি’ বলে চিৎকার করে ওঠে। আর সেই বলটা যখন জালে গড়ায় তখন শুরু হয় তার আনন্দ তাণ্ডব, সঙ্গে ‘গোল...গোল’ চিৎকার।
মধ্যরাতে যখন খেলা চলে, তখন সোহা চলে আসে টেলিভিশন পর্দার সামনে। চোখে ঘুম নেই।
ভিনদেশি হয়েও মেসি আমাদের ঘরের মানুষে পরিণত হয়েছে। এ নামটা যেন পাশের বাড়িরই কারো! তাইতো এত ছোট ছেলেমেয়েরাও ‘মেসি...মেসি’ বলে সুরধ্বনি তুলতে পারে।
আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ ছিল সৌদি আরবের সঙ্গে। আমরা সবাই আশাবাদী, কিন্তু হয়ে গেলো অঘটন। সেই মন খারাপ ছুঁয়েছিল সোহাকেও। সেই ম্যাচে মেসি যখন প্যানাল্টি থেকে গোল পেলো তখন সে ‘মেসি...মেসি’ বলে মিছিল তুলেছিল। কোন দলকে সে সমর্থন করবে জানতে চাইলে, ‘আর্জেন্টিনা’ শব্দটি উচ্চারণের তার প্রবল ইচ্ছে, কিন্তু ঠিকমতো বোঝাতে পারে না; তাই অকপটে বলে ফেলে ‘নীল’।
মধ্যরাতে যখন খেলা চলে, তখন সোহা চলে আসে টেলিভিশন পর্দার সামনে। চোখে ঘুম নেই। বিরতিতে বলে উঠে, ‘খেলাটা কোথায় চলে গেলো? কেন চলে গেলো?’, খেলা চলছে কীভাবে বুঝলে? প্রশ্নের জবাব দেওয়া মাত্রই তার উত্তর, ‘কেন শব্দ!’
সবকিছুর গল্প শুনতে চায় সোহা। টেলিভিশনে, বইয়ে নতুন কোনকিছু দেখলেই সামনে যাকে পাবে তাকেই সেটার গল্প শোনানোর বায়না করে। কিন্তু এখনো কেন সে মেসির গল্প শুনতে চাইলো না, ওই রহস্য আমরা ভেদ করতে পারিনি। সে বরং মেসির খেলাই দেখছে মুগ্ধ হয়ে।
এবার সোহা আর্জেন্টিনার জার্সি পেয়েছে। খুশি খুব। স্পষ্ট বলে দিচ্ছে তার দল আর্জেন্টিনা। জার্সি গায়ে দিয়ে বলছে, তাকে মেসির মতো লাগছে। মেসির আবেগ ছুঁয়ে গেলো আরেক প্রজন্ম, সেটা পুরনো মেসিভক্ত হিসেবে আমরা দেখছি মুগ্ধ হয়ে।
নেদারল্যান্ডস এক গোল দিয়ে দেওয়ার পর চিন্তিত হয়ে পড়লাম আমরা। সেই চিন্তার ভার নিয়ে সোহা ঘুমাতে গেলো, কিন্তু ঘুমাতে পারছে না।
নেদারল্যান্ডস- আর্জেন্টিনা ম্যাচ, কোয়ার্টার ফাইনাল। আর্জেন্টিনা দুই গোলে এগিয়ে। আমরা ধরেই নিয়েছি, খেলা শেষ হয়ে যাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই। কিন্তু খেলা গড়ালো টাইব্রেকারে। সেদিন সোহা অসুস্থ, তারপরও টানা ৮৫ মিনিট পর্যন্ত সে টিভির সামনে বসে খেলা দেখেছে৷
নেদারল্যান্ডস এক গোল দিয়ে দেওয়ার পর চিন্তিত হয়ে পড়লাম আমরা। সেই চিন্তার ভার নিয়ে সোহা ঘুমাতে গেলো, কিন্তু ঘুমাতে পারছে না। একটু পরপর রুম থেকে দৌড়ে আসে খেলা দেখতে, আবার চলে যায়। বিছানা থেকে বারবার জোরে জোরে বলে, ‘গোল হইছে?’, আর মাকে বলে, ‘আমি যাই একটু মা; খেলা দেখে আসি?’ তার প্রথম বিশ্বকাপ টাইব্রেকারে গিয়ে ট্র্যাজেডি থেকে রক্ষা পেলো। চাচার কোলে উঠে উদ্দাম নেচে সোহা সেই জয়ও উদযাপন করে নিয়েছে।
বয়সের ফলে লিওনেল আন্দ্রেস মেসির ক্যারিয়ার এখন গোধূলিলগ্নে, হয়ত এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। ক্যারিয়ারের সূর্যোদয়ে তিনি অনেক ছোট ছোট ভক্ত পেয়েছেন, যারা এখনো ‘মেসি জাদু’ দেখার জন্য টেলিভিশনের সামনে বসে থাকে- সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু বেলাশেষে পাওয়া এমন ভক্ত তাকে বাঁচিয়ে রাখবে আরও কয়েক প্রজন্ম। সব মেসিভক্তের মতো সোহারও চাওয়া এবারের কাপটা জিতুক মহারাজা।
ক্লাব ফুটবলের হয়ে যা কিছু জেতার আছে সবই জিতেছেন মেসি। পরিসংখ্যানও বলে তিনিই ‘সেরাদের সেরা’, তাই আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপটা জিততে না পারলেও, তার রঙিন ক্যারিয়ারটা বিবর্ণ হয়ে যাবে না। বরং অপূর্ণতা থেকে যাবে সেই সোনালি ট্রফিরই। কেননা সে যে ইতিহাসের মহানায়কের ছোঁয়া পায়নি।
কিডজ ম্যাগাজিনে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected] সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!