‘সীমিত আকারে’ এই পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা সোমবারই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
গত মার্চে দেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর এখন পর্যন্ত কেবল রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) পদ্ধতিতেই নমুনা পরীক্ষা চলছে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে আরটি-পিসিআর পরীক্ষাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
তবে এই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের পর ফল পেতে একদিনের মতো সময় লেগে যায়। সেখানে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে আধা ঘণ্টার মধ্যে ফল জানা যায় বলে বিশ্বের নানা দেশই এর দিকে ঝুঁকেছে।
বাংলাদেশেও অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আগে অ্যান্টিজেন টেস্ট চালুর পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
আরটি-পিসিআর বনাম অ্যান্টিজেন
আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে রোগীর নাসারন্ধ্রের পেছন থেকে মিউকাস সংগ্রহ করে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বিকল্প হিসেবে কখনও মুখবিবরের পেছন থেকেও নমুনা নেওয়া হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সংগৃহীত নমুনা থেকে পরীক্ষাগারে প্রথমে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভাইরাসটির আরএনএ আলাদা করে ফেলা হয়। আরটি-পিসিআর মেশিন পৃথক করা আরএনএকে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় ডিএনএতে রূপান্তরিত করে। এরপর ডিএনএর অংশ বিশেষকে পলিমার্স চেইন রিয়েকশনের সাহায্যে বহুগুণে বর্ধিত করে এর মাত্রা এমন একটি পর্যায়ে উন্নীত করে, যা মেশিন শনাক্ত করতে সক্ষম।
বিপরীতে অ্যান্টিজেন টেস্টেও নাক কিংবা মুখবিহ্বরের শ্লেষ্মা ব্যবহার করা হয়, তবে আরএনএ বিশ্লেষণের পরিবর্তে এখানে ভাইরাসের প্রোটিন শনাক্ত করা হয়। আবার রক্ত পরীক্ষা করেও অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্ভুলতার কারণে বরাবরই আরটি-পিসিআরের পক্ষে বলে আসছে।
কেননা আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় ভাইরাসের জৈব রাসায়নিক উপাদানটি বিবর্ধিত করে বলে সংগৃহীত নমুনায় ভাইরাসের পরিমাণ নগন্য হলেও শনাক্ত করতে পারে।
পক্ষান্তরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ভাইরাসের প্রোটিনকে বিবর্ধিত করার কোনো ব্যবস্থা নেই বলে নমুনায় ভাইরাসের পরিমাণ কম হলে তখন আর তা শনাক্ত হয় না।
ফলে রোগী সংক্রমিত হলেও তা অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ আসতে পারে, যাকে বলা হয় ‘ফলস নেগেটিভ’। তখন আবার লক্ষণ থাকলে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করতে হয়।
এছাড়া রয়েছে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, যাতে সংক্রমণের ফলে দেহে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়, তা থেকে ধরে নেওয়া হয় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেও অ্যন্টিবডি টেস্টে পজিটিভই দেখাবে।
তবে আরটি-পিসিআর ও অ্যান্টিজেন টেস্টে নিশ্চিত হওয়া যায়, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না?
অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়ছে?
কোভিড-১৯ শনাক্তে সম্প্রতি অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করেছে ভারত। কিটের দাম তুলনামূলক সস্তা ও সময় কম লাগে বলেই এই পদক্ষেপ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যান্টিজেন পরীক্ষা পদ্ধতিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে ফল জানা গেলেও ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা ৫০ শতাংশেরও কম।
এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও বেলজিয়ামের তৈরি অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটের অনুমোদন দিয়েছে ইনডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)।
ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক কে শ্রীনাথ রেড্ডি বিবিসিকে বলেন, “অ্যান্টিজেন টেস্ট আক্রান্ত রোগীর অর্ধেক শনাক্ত করতে ব্যর্থ হবে।”
আক্রান্তদের শনাক্ত করতে কয়েকটি কারণে ব্যর্থ হতে পারে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। এর মধ্যে রয়েছে- সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ না হওয়া, আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসের আধিক্য না থাকা কিংবা কিটের মান ভালো না হওয়া।
যুক্তরাজ্যেও এক ধরনের র্যাপিড টেস্ট হচ্ছে, তবে তাতে ভুলের মাত্রা অনেক কম। অবশ্য এই পদ্ধতিতে তারা অ্যান্টিজেন টেস্ট না করে ভাইরাসটির আরএনএ বিশ্লেষণ করছে।
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমোদন দিয়েছে।
তবে এফডিএর নীতিমালায় অ্যান্টিজেন টেস্টের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কিটের মানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো এফডিএও পরামর্শ দিয়েছে, অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় কারও যদি ফল ‘নেগেটিভ’ আসে, তাহলে নিশ্চিত হওয়ার যেন আরটি-পিসিআর টেস্ট করে নেওয়া হয়।