অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা চালুর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

করোনাভাইরাস শনাক্তে স্বীকৃত আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষাও চালুর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2020, 04:55 PM
Updated : 5 July 2020, 04:58 PM

রোববার বিকালে হেলথ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ এর আয়োজনে ‘অ্যাপ্লিকেশন অব অ্যান্টিবডি টেস্ট টু মনিটর, ট্রিট অ্যান্ড প্রিভেন্ট স্প্রেড অব কোভিড-নাইনটিন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক অনলাইন আয়োজনে তারা এ পরামর্শ দেন।

আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ, বিএসএমএমইউ’র ওষুধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সায়েদুর রহমান, বারডেম হাসপাতালের ল্যাবরেটরি মেডিসিন শাখার পরিচালক শওকত হাসান।

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ বলেন, “আমরা যখন লাল-সবুজ জোনে করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি, তখন খুব দ্রুত অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করা উচিৎ বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। তবে আগে অ্যান্টিজেন টেস্টটা চালু করা উচিৎ।”

আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি কেন অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করা উচিৎ, তার কারণও ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক বে-নজির।

“এখন এই অবস্থায় ঘরে ঘরে টেস্ট করা উচিৎ। নমুনা সংগ্রহের পর কোনো পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করিয়ে এনে তারপরে রিপোর্ট দেওয়া… লং প্রসেস। এর চেয়ে আমরা অ্যান্টিজেন টেস্টটা ঘরেই করতে পারব। যাকে ট্রেস করা দরকার, টেস্ট করা দরকার তাকে আমরা ওই জায়গায় বসেই টেস্ট করতে পারি।

“এছাড়া এখন তো দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালগুলোতে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের করোনা পরীক্ষা ছাড়া চিকিৎসা দিতে দ্বিধা থাকছে। সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা যেতে পারে।”

বে-নজির আহমেদ জানান, কোনো একটা অ্যান্টিজেন প্রাকৃতিকভাবে বা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে যদি মানবদেহে প্রবেশ করানো হয়, তখন দেহে যে ইমিউনুকমপিটেন্ট সেলগুলো আছে, তাদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি।

অ্যান্টিবডি টেস্টের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যদি সেরোসার্ভিল্যান্স করতে চাই, কমিউনিটির স্ন্যাপশট নিতে চাই, তাহলে আমাদের অ্যান্টিবডি টেস্ট করাতে হবে।

“এই টেস্টের মাধ্যমে আমরা ভিন্ন সময়ে বা ভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানে শতকরা কত ভাগ লোক আক্রান্ত তা জানতে পারব। অ্যালাইজা টেস্টের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি টেস্ট করলে সেখানে প্রটেকটিভ লেভেলটা আসলে তা আমরা জানতে পারব।”

অ্যান্টিজেন নির্ণয়ের জন্য অধ্যাপক বে-নজির আরডিটি বা ক্রোমোটোগ্রাফি টেস্টের পরামর্শ দিয়েছেন।

“এ টেস্টটা খুব দ্রুত করা যায়। পেশেন্টের বেডের কাছেই এ টেস্টটা করা যেতে পারে। শুধু কোভিডে না, গত দুই দশকে সংক্রামক রোগ নির্ণয়ে এই পরীক্ষার ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। এটার সুবিধা হল, এটা খুব সস্তা, এটা যে কেউ যেকোনো জায়গায় করতে পারে। এটার জন্য কোনো যন্ত্রপাতি লাগে না, বায়োসেফটিও লাগে না।”

তবে আরডিটি বা ক্রোমোটোগ্রাফি টেস্টের মাধ্যমে মানবদেহে কতটুকু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তা জানা যাবে না। সেক্ষেত্রে অ্যালাইজা টেস্টের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি টেস্ট করালে আক্রান্ত হওয়ার অষ্টম দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডি কোন মাত্রায় আছে তা জানা যাবে।

ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম বলেন, “অ্যান্টিবডি টেস্ট হচ্ছে সেরোসার্ভিল্যান্স। আমরা অ্যান্টিবডি টেস্ট করলে দেখতে পারব, আমাদের এ পরিমাণ জনগণের বিপদটা কত? যদি কোনো পাবলিক হেলথ প্রোগ্রাম করি তাহলে এই তথ্যগুলো আমাদের দরকার।”

অ্যান্টিবডি টেস্ট করাতে পারলে ভ্যাক্সিনের অযথা প্রয়োগও কমবে বলে মনে করেন তিনি।

“আমাদের দেশে অনেক লোক অ্যাসিমটপিক্যালি ইনফেকটেড হচ্ছে, তারা রিকভার করে যাচ্ছে। অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করে যাচ্ছে। এমনটা হতে থাকলে তাদের আর ভ্যাক্সিনের প্রয়োজন পড়বে না। ভ্যাক্সিন খুব খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার হবে। ভ্যাক্সিন দেওয়ার আগে আমরা যদি অ্যান্টিবডি টেস্ট করে নেই, তাহলে ওখানে আমাদের সুবিধা হবে আমরা অনেক টাকাপয়সা সেভ করব। ভ্যাক্সিনের অপপ্রয়োগও কম হবে।”

আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নানা অসুবিধা নিয়ে বলেন ডা. শওকত হাসান।

“আরটি-পিসিআরে ন্যাজুফেরেঞ্জিয়াল সোয়াবে ভাইরাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা হচ্ছে, কেউ রিপোর্ট করেছে ৪২ শতাংশ, কেউ ৬০ শতাংশ। তাহলে আমরা বাকি ৬০ শতাংশ হারাচ্ছি। এভাবে ন্যাজুফেরেঞ্জিয়াল সোয়াব দিয়ে মুশকিল।

“সবচেয়ে বড় কথা হল যারা নমুনা সংগ্রহ করছে। তার ঠিকমতো সংগ্রহ করতে পারছেন তো? তারা যে মিডিয়াতে করে নমুনা পাঠান…স্যালাইনে করে…তা উচিৎ না। নমুনা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আমরা এমটি ও ভিটিএম মিডিয়াতে নমুনা পাঠানোর পরামর্শ দেই। এ মিডিয়াগুলো নমুনাকে জীবাণমুক্ত করে রাখে।”