পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষায় আরও এক মাস

হাই কোর্টের নির্দেশে বাজারে থাকা সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধ নিরাপদ কি না তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরিতে আরও এক মাস সময় পেয়েছে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে গঠিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2018, 03:48 PM
Updated : 26 June 2018, 03:48 PM

গত ২১ জুন আদালত এক মাসের সময় বেঁধে দিয়ে খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব ও বিএসটিআই-এর মহাপরিচালককে বাজারের সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষার নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলে।   

তবে এই সময়ের মধ্যে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চে ওই পরীক্ষার প্রতিবেদন দিতে ছয় মাস সময় চাওয়া হলে আদালত পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষার জন্য ৩০ দিন সময় দেয়।

এ সময় আদালতে রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদের সঙ্গে ছিলেন আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কমিটি সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২১ মে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল বাজারের পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে একটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য।

“কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত এক মাসে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। সেটিই তারা আদালতকে অবহিত করে প্রতিবেদন তৈরির জন্য ছয় মাস সময় চায়। আদালত আজ থেকে ৩০ দিন সময় দিয়েছেন। বাজারের সকল পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে এই সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে হবে।”

পাস্তুরিত দুধে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির খবরে উদ্বেগ জানিয়ে তানভীর বলেন, “দুধ এমন একটি খাদ্য যেটি সব বয়সী মানুষের জন্যই আদর্শ খাদ্য, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। এমন একটি খাদ্যে যদি ভেজাল থাকে বা মানসম্পন্ন না হয় তবে তা অনিবার্যভাবেই জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। ফলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই খাদ্যটি নিরাপদ করা দরকার।”

আদালতে দেওয়া কমিটি সংক্রান্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “হাই কোর্টের আদেশ মোতাবেক খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২১ জুন এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাজারে প্রচলিত সকল পাস্তুরিত দুধের মান যাচাইয়ের নিমিত্তে একটি কমিটি গঠনের কার্যপরিধি নির্ধারণ করে।

“কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, এই কমিটি বাজারের সকল পাস্তুরিত দুধের অস্তিত্ব ও উৎস চিহ্নিতকরণ এবং এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরূপণ, বাজারে পাস্তুরিত দুধ বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার ত্রুটি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।”

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের এই কমিটির সদস্যরা হলেন-খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ডেইরি মাইক্রোবায়োলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রতিনিধি, ফুড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের সহযোগী গবেষক ও প্রধান ড. মো. আমিনুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ডা. কুলসুম বেগম চৌধুরী এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপসচিব আবু সহিদ ছালেহ মো. জুবেরী।

এই কমিটিকে আনুসঙ্গিক সহায়তা দেবে বাংলদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) একটি গবেষণা প্রতিবেদন গত ১৬ মে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

সেখানে বলা হয় বাংলাদেশে পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে নিরাপদ পাস্তুরিত দুধের নিশ্চয়তায় সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।

জনস্বার্থে করা ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ২১ মে রুল জারি করে এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়।

আরও খবর-