অঙ্কনে, সংগীতে একটি বাড়ির শেষ বিদায়

১৯৬২ সালে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের নকশায় নির্মিত ধানমণ্ডির ৭৬৫ নম্বর বাড়িটি দেশের শিল্প-সংস্কৃতির একটি খোলা জানালা হয়ে ছিল।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2022, 05:43 AM
Updated : 14 August 2022, 05:43 AM

ঢাকার ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডে শিক্ষাবিদ খান সারওয়ার মুরশিদের ৭৬৫ নম্বর বাড়িটি বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের নানা ইতিহাসের সাক্ষী; ষাটের দশকের পুরনো সেই বাড়িটি ভেঙে তৈরি হচ্ছে নতুন ভবন।

দেশের শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত এ বাড়ির বিদায়যাত্রায় শনিবার দিনভর চলে আর্ট ক্যাম্প ও গানের অনুষ্ঠান।

সারওয়ার মুরশিদের পুত্রবধূ শামীম সুব্রানার গড়া চিত্রশালা ‘গ্যালারি ২১’ এর আয়োজনে দিনভর সেখানে ছবি আঁকেন শিল্পীরা। জনপ্রিয় গানের দল ‘জলের গান’ এবং শিশুদের গানের দল ‘লাল খাতা’র পরিবেশনায় মুখরিত হয়ে ওঠে বাড়িটি।

১৯৬২ সালে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের নকশায় নির্মিত বাড়িটি দেশের শিল্প-সংস্কৃতির একটি খোলা জানালা হয়েই ছিল। শনিবার সেই স্মৃতিকে স্মরণ করেই গান পরিবেশন করেন রাহুল আনন্দ, কনক আদিত্যসহ জলের গানের সদস্যরা।

রাহুল আনন্দ গ্লিটজকে বলেন, “এই বাড়িতে জন্ম নিয়েছে অনেক সাংস্কৃতিক ইতিহাস। সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আড্ডায় মুখর হয়েছে বাড়িটি। বিখ্যাত এই বাড়িটি কদিন পর ভেঙে ফেলা হবে। ঢাকা শহরের শিল্প সংস্কৃতির দীর্ঘকালের সাক্ষী এই বাড়ি। খুব মন খারাপ লাগছে।”

অনুষ্ঠানে ‘এমন যদি হত’, ‘বকুল ফুল’, ‘শুয়া যাও রে’ এবং ‘দূরে থাকা মেঘ’সহ বেশ কয়েকটি গান করেন শিল্পীরা।

শিল্পী কনক আদিত্য বলেন, “জলের গানের সাথে এখন নিয়মিত গান করা হয় না। মাঝে মাঝে গান করি। এই অনুষ্ঠানটি আমাদের বন্ধুদের, শিল্পীদের একটা মিলনমেলা।”

‘লাল খাতা’ পরিবেশনা শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান দিয়ে। এরপর দলটি নিজেদের লেখা ও সুর করা তিনটি গান পরিবেশন করে। লাল খাতার সদস্যদের মধ্যে তোতা, মুগ্ধ, স্ফিয়েতা, প্রহর ও স্পর্শ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।

খান সারওয়ার মুরশিদের নাতনী নাভিন মুরশিদ গ্লিটজকে বলেন, “এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন আমার দাদা-দাদি। তারা দ্বিতীয় তলায় থাকতেন, আর আমরা থাকতাম নিচ তলার পেছন দিকটায়। সামনে বড় উঠান। সেখানে প্রদর্শনী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত।

“আমার মা শামীম সুব্রানা একজন চিত্রশিল্পী, তিনি চারুকলায় লেখাপড়া করেছেন। ১৯৯৬ সালের দিকে তিনি ‘গ্যালারি ২১’ নামে একটি চিত্রশালা প্রতিষ্ঠা করেন। শিশির ভট্টাচার্য্য, তৈয়বা বেগম লিপিসহ দেশের অনেক খ্যাতিমান শিল্পীর প্রথম চিত্র প্রদর্শনী এ গ্যালারিতে হয়েছে।”

নাভিন মুরশিদ বলেন, “এই গ্যালারি যখন হয়, তখন ঢাকায় বেসরকারি উদ্যোগে তেমন গ্যালারি ছিল না। এই বাড়িটি সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন সৃজনশীল মানুষের আড্ডায় মুখর থাকত।”

নতুন ভবনেও কি আর্ট গ্যালারি থাকবে? নাভিন মুরশিদ বললেন, “সেটা এখনও নিশ্চিত না।”