মুনীর চৌধুরী সম্মাননা পেলেন লাকী ইনাম, জাকারিয়া পদক পেলেন সায়িক

জাতীয়ভাবে মুনীর চৌধুরীর জন্মদিন পালনের দাবিও উঠেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2022, 06:41 PM
Updated : 27 Nov 2022, 06:41 PM

নাট্যদল থিয়েটার প্রবর্তিত মুনীর চৌধুরী সম্মাননা ও মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতি পদক প্রদান অনুষ্ঠান হয়ে গেল।

রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট ও স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

এ বছর মুনীর চৌধুরী সম্মাননা পেয়েছেন লাকী ইনাম; আর মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতি পদক পেয়েছেন পালাকার সায়িক সিদ্দিকী।

পদক পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে লাকী ইনাম বলেন, “মুনীর চৌধুরীর নামাঙ্কিত এই সম্মাননা পাওয়া আমার জন্য বিশেষ ভালো লাগার। মুনীর চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করতে পারা কিংবা তার ক্লাসে ছাত্রী হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কিন্তু আমাদের একটা থিয়েটার স্কুল আছে, সেখানে নিয়মিত ছেলেমেয়েদের মুনীর চৌধুরীর নাটক পড়ানো হয়।”

সায়িক সিদ্দিকী বলেন, “পালানাট্য নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি। একদিন প্রতিটি জেলা-উপজেলায় পালানাট্য মঞ্চস্থ হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই পালাকার। আমাদের মায়েরা সন্তানকে ঘুম গান শুনিয়ে কিংবা গল্প বলে ঘুম পাড়ান।

“তখন সেই মা মূলত পালাকারই হয়ে উঠেন। নিজেই বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেন। সন্তানও মায়ের মুখে পালা শুনতে শুনতে পালাকার হয়ে উঠেন। পালার সাথে নিবেদিত থাকতে পারায় আমাকে এই পদক দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ রামেন্দু মজুমদারের প্রতি। তিনি আমাকে নানাভাবে উৎসাহ যুগিয়ে চলেছেন।”

থিয়েটার নাট্যদলের পরিচালক (সাংগঠনিক) রামেন্দু মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত মুনীর চৌধুরীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছরই এই সম্মাননা দেওয়া হয়। কিন্তু কোভিড মহামারীর কারণে ২০২০ সালে অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি।

“পরের বছর মুনীর চৌধুরীর ৯৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই বছরের সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্তদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা দুই প্রজন্মের দুই গুণীজনকে সম্মাননা ও পদক দিতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে।"

অনুষ্ঠানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর বলেন, "জাতীয়ভাবে মুনীর চৌধুরীর জন্মদিন পালন করা উচিত। তিনি কেবল একজন নাট্যকার নন। সাহিত্যসহ নানা মাধ্যমে তিনি সফল একজন মানুষ।

“আমাদের শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা, গবেষণায় যে কজন মানুষ বীজতলা তৈরি করে গেছেন, তাদের অন্যতম মুনীর চৌধুরী। মোহাম্মদ জাকারিয়াও আমাদের আরেক গুণীজন। তাদের স্মরণ করার জন্য থিয়েটারকে ধন্যবাদ।"

রামেন্দু মজুমদার তার বক্তব্যে বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগেই মুনীর চৌধুরীকে আমরা হারিয়েছি। আমার সৌভাগ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাহচর্য পেয়েছিলাম। আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আরেক নাট্যজন আবদুল্লাহ আল মামুনকে। মনে পড়ছে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে, যিনি আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন থিয়েটারের।

"মুনীর চৌধুরীর ক্লাস যারা করেছে, সেই ছাত্ররা তাকে কখনো ভোলেনি। জাকারিয়াকে আমরা বলতাম দাদা ভাই। তিনি বেশ কিছু মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। শিল্পীকে যে ভালো মানুষ হতে হয়, সেটা শিখেছি তার কাছ থেকে। তিনি শুদ্ধ বাচনরীতির ওপর সবসময় জোর দিতেন।"

সভাপতির বক্তব্যে অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, "লাকী ইনামকে পছন্দ করি তার সততা, শ্রম ও নিষ্ঠার জন্য। পুরস্কারের জন্য নয়, কাজের আনন্দে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সায়িক সিদ্দিকীর প্রতিভা আমাদের ভালো লেগেছে। তাদের সম্মানিত করে আমরা সম্মানিত হয়েছি।

“এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুনীর চৌধুরী, কবীর চৌধুরী, মোহাম্মদ জাকারিয়া, আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অনেককেই আমরা স্মরণ করি। এজন্য এই অনুষ্ঠানটি আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।"

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে পালানাট্য পরিবেশন করে 'বঙ্গলোক'। সায়িক সিদ্দিকীর রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় 'রূপচাঁন সুন্দরীর পালা'।

শহীদ মুনীর চৌধুরী স্মরণে ১৯৮৯ সাল থেকে একজন করে প্রবীণ গুণীকে সম্মাননা এবং মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মরণে ১৯৯৭ সাল থেকে একজন তরুণ গুণীকে পদক দেওয়া হয়ে আসাছে।

আইএফআইসি ব্যাংকের সৌজন্যে মুনীর চৌধুরী সম্মাননার অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা ও মোহাম্মদ জাকারিয়া পদকের অর্থমূল্য পঁচিশ হাজার টাকা।

এ পর্যন্ত মুনীর চৌধুরী সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন- মোহাম্মদ জাকারিয়া (১৯৮৯), অমলেন্দু বিশ্বাস (মরণোত্তর, ১৯৯০), আবদুল্লাহ আল-মামুন (১৯৯১), নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় (১৯৯২), সৈয়দ জামিল আহমেদ (১৯৯৪), রামেন্দু মজুমদার (১৯৯৫), প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারা (১৯৯৬), সাঈদ আহমদ (১৯৯৭), ফেরদৌসী মজুমদার (১৯৯৮), সৈয়দ শামসুল হক (১৯৯৯), আতাউর রহমান (২০০০), মামুনুর রশীদ (২০০১), নাসির উদ্দীন ইউসুফ (২০০২), সেলিম আল দীন (২০০৩), আলী যাকের (২০০৪), নিখিল সেন (২০০৫), আসাদুজ্জামান নূর (২০০৬), জিয়া হায়দার (২০০৭), মলয় ভৌমিক (২০০৮), পার্থপ্রতিম মজুমদার (২০০৯), অধ্যাপক আবদুস সেলিম (২০১০), আরণ্যক নাট্যদল (২০১১), লিয়াকত আলী লাকী (২০১৩), মৃত্তিকা চাকমা (২০১৪), ম. হামিদ (২০১৫), কেরামত মাওলা (২০১৬), ইসরাফিল শাহীন (২০১৭), দেবজিত বন্দোপাধ্যায় (২০১৮), অধ্যাপক শফি আহমেদ (২০১৯), সারা যাকের (২০২০), তারিক আনাম খান (২০২১), লাকী ইনাম (২০২২)।

মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদকে ভূষিত হয়েছেন- আহমেদ ইকবাল হায়দার (১৯৯৭), মান্নান হীরা (১৯৯৮), শিমুল ইউসুফ (১৯৯৯), ঠান্ডু রায়হান (২০০০), খালেদ খান (২০০১), দেবপ্রসাদ দেবনাথ (২০০২), আলোক নির্দেশক নাসিরুল হক খোকন (২০০৩), মাসুম রেজা (২০০৪), আমিনুর রহমান মুকুল (২০০৫), ফয়েজ জহির (২০০৬), জগলুল আলম (২০০৭), শুভাশিস সিনহা (২০০৮) বাবুল বিশ্বাস (২০০৯), অসীম দাশ (২০১০), নাট্যপত্রিকা থিয়েটারওয়ালা (২০১১), সুদীপ চক্রবর্তী (২০১২), সামিনা লুৎফা নিত্রা (২০১৩), আইরিন পারভীন লোপা (২০১৪), আকতারুজ্জামান (২০১৫), অভিজিৎ সেনগুপ্ত (২০১৬), রুমা মোদক (২০১৭), পান্থ শাহরিয়ার (২০১৮), শিশির রহমান (২০১৯), সম্বিত সাহা (২০২০), জ্যেতি সিনহা (২০২১), সায়িক সিদ্দিকী (২০২২)।