ভাগ্য আমাকে ‘নায়িকা’ বানিয়েছে: জাহারা মিতু

ক্যারিয়ার শুরু করতে না করতেই ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান আর কলকাতার তারকা দেবের সঙ্গে জুটি বেঁধে আলোচনায় জাহারা মিতু।

নিজেকে ‘ফ্যাশন ডিজাইনার’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া মিতু তিন বছর আগে শাকিব খানের বিপরীতে ‘আগুন’ সিনেমা দিয়ে এফডিসিতে পা রাখেন। যদিও অভিনয়ে আসার আগ্রহ আগে ছিল না বলে এই নায়িকার ভাষ্য।

এরপর কোভিড মহামারীর কারণে কাজের ‘খরার’ ভেতরেও প্রায় আধডজন সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন মিতু। সেগুলোর মধ্যে ‘শত্রু’ ও ‘কুস্তিগির’ মুক্তি পাচ্ছে নভেম্বরে। আর ‘জয়’ সিনেমা বড় পর্দায় দেখা যাবে বিজয়ের মাসে। দেশে শাকিব ছাড়াও নায়ক বাপ্পী চৌধুরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন মিতু। 

সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বও পেয়েছেন ২০১৭ সালের ‘মিস সুপারমডেল’ আসরের এই বিজয়ী। টেলিভিশনের জন্য নাটক রচয়িতা মিতু অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করেছেন। এসবের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আরেকটি পরিচয়, সিনেমার জন্য তিনি গান লিখেছেন। 

‘নায়িকা’ হওয়ার গল্প জানতে চাইলে গ্লিটজকে মিতু বলেন, “আমি মূলত ফ্যাশন ডিজাইনার। ছোটবেলা থেকে নাচ, অভিনয়, গান, লেখালেখি, আবৃত্তি এসব করতাম। কিন্তু কোনোদিন ভুলেও নায়িকা হতে চাইনি। আব্বুর খুব ইচ্ছা ছিল আমি যেন খেলা নিয়ে কিছু করি। তাই প্রস্তাব পেয়ে ক্রীড়া উপস্থাপকের কাজ শুরু করি।”

শাকিব আর দেবের সিনেমায় ‘নায়িকা’ হওয়ার প্রস্তাব পেলে মায়ের কথাতেই মিতুর সিনেমায় আসা।

“এক সময় অনেক সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ, নায়িকা হতে চাইনি। কিন্তু যখন শাকিব খানের সঙ্গে কাজের অফার এল- আম্মু বললো, ‘করো’। দেবের সঙ্গে কাজের প্রস্তাব আসার পরও আম্মু কাজটা করতে বললো।

“আমি যে নায়িকা, সেটা বুঝেছি ভারতে শুটিং করতে গিয়ে। ওখানকার সবাই অনেক প্রশংসা করেছে। তখন মনে হয়েছে, আমার ভেতর নায়িকা হওয়ার মত কিছু একটা অবশ্যই আছে।“

মিতুর ভাষ্য, এরপর পরিচালক কাজী হায়াতের ‘জয় বাংলা’ সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে তিনি ‘অভিনেত্রী’ হয়ে ওঠেন। নিজেকে ‘নায়িকা’ হিসেবে গড়ে তুলতে মিতুর পড়াশোনাও চলে।

“নায়িকা হওয়ার জন্য কী কী দরকার তা পড়তে শুরু করলাম। জয় বাংলার আগে কখনোই অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করিনি।”

শাকিব খানের বিপরীতে মিতুর প্রথম সিনেমা ‘আগুন’ এর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু মহামারীর থাবায় শুটিং সেই যে বন্ধ হয়েছে, এতোদিনেও আর শুরু হয়নি। মিতুর আশা, ‘আগুনের’ কাজ আবার শুরু হবে এবং মুক্তিও পাবে।

এর মধ্যে মহামারীর নাজুক পরিস্থিতি কেটে গেছে, শাকিব খানও দশ মাস যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন।

‘আগুন’ এর শুটিং শুরুর কোনো খবর হল কি না জানতে চাইলে মিতু বলেন, “শুটিং হওয়ার কথা ছিল চলতি মাসেই। কিন্তু আমি ৮ তারিখে দিল্লি যাব, আর ২০ অক্টোবর ফিরব। তাই শুটিংয়ের ডেট দিলেও এখন সময় পাব না। কী করব কে জানে!”

টালিগঞ্জের নায়ক দেবের সঙ্গে ‘কমান্ডো’ সিনেমায় কাজ করছেন মিতু। বাংলাদেশের প্রযোজনা সংস্থা শাপলা মিডিয়া সিনেমাটির প্রযোজনা করছে। ‘কমান্ডোর’ কাজও দেবের শিডিউল জটিলতায় আটকে আছে।
মিতু বললেন, “কমান্ডোর আরও কিছু অংশের শুট করতে হবে। দুইবার দেবের শিডিউল নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই দেশের টেকনিশিয়ানদের ভিসা জটিলতায় কাজটা শুরু হয়নি। দেব সবসময় কোঅপারেটিভ। কিন্তু জানেন তো, ইন্ডিয়ার সুপার স্টারদের প্রায় এক বছরের শিডিউল ঠিক করা থাকে। দেখা যাক কী হয়।”

মিতুর ভাষ্য, তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচ ধরনের চরিত্রে কাজ করেছেন। নিজেকে ভেঙেচুড়ে সব ধরনের চরিত্রেই খাপ খাওয়ানোর ইচ্ছা তার আছে। তবে সেখানে একটা ‘কিন্তু’ আছে।
“সমস্যা হল, অনেকে বলেন, আমাকে নাকি খুব বেশি গ্ল্যামারাস লাগে। ফলে গ্রামীণ চরিত্রে কাজ করা নিয়ে কষ্টে আছি।“

মিতু এখন পর্যন্ত ‘আগুন’ সিনেমায় বোকা মেয়ে, ‘কমান্ডো’তে গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ‘জয় বাংলা’য় মেকআপ ছাড়া ষাটের দশকের কলেজছাত্রী, ‘কুস্তিগির’-এ গ্রামের মেয়ে, ‘শত্রু’তে পার্টিবাজ, নেশাখোর, উচ্ছৃঙ্খল তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

“সবগুলো চরিত্রই দারুণ লেগেছে আমার,” বললেন মিতু।

তিনি জানালেন, নির্মাতা সুমন ধরের ‘শত্রু’ সিনেমায় থাকছে তার লেখা ‘পাখি পাখি’ গানটি। এর মধ্য দিয়ে সিনেমার গীতিকার হিসাবে মিতুর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।

ওই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আসিফ আকবর ও কলকাতার কণ্ঠশিল্পী অঙ্কিতা। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন সাহা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর এফডিসির ১ নম্বর ফ্লোরে গানটির দৃশ্যধারণও হয়েছে।

গীতিকার হয়ে উঠলেন কীভাবে? মিতুর উত্তর: “আগে থেকেই তো লিখি। এর আগে নাটকে আমার গান গিয়েছে। আমার লেখা স্ক্রিপ্টে নাটকও হয়েছে। তবে সেসব ছদ্মনামে। এই সিনেমার নায়ক বাপ্পি চৌধুরী জানত বিষয়টা। যখন আমরা আলোচনা করছিলাম যে গানটায় কী কী উপাদান থাকবে তখন বাপ্পি বলল, ‘তোমার আইডিয়া যেহেতু, তুমিই অন্তত রাফ কিছু একটা লিখে দাও।’ আমি পাঁচ মিনিটের কম সময়ে শুধু রাফটা লিখলাম। বাকিটা ডিরেক্টর, প্রডিউসার, হিরো… আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছে গানটা রেডি করে।”  

চলচ্চিত্র নিয়ে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরে মিতু বললেন , “আমার ভাগ্য আমাকে চলচ্চিত্রের নিয়ে এসেছে। ফলে আমি নিজেও বিশ্বাস করি, এই ইন্ডাস্ট্রির হয়ত আমাকে দরকার ছিল। হাতে পর্যাপ্ত প্রযোজক থাকলে ভালো কিছু কাজ করতাম। সিনেমায় নিজেই অবদান রাখার চেষ্টা করতাম। সেটাই চেষ্টা করছি।“

কথায় কথায় মিতু জানালেন, ‘মিস সুপারমডেল ওয়ার্ল্ডওয়াইড ২০২২’ প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসনে বসতে আগামী শুক্রবার দিল্লি যাচ্ছেন তিনি।

“বিশ্বের ৪০ জন সুন্দরীর মধ্য থেকে বেছে নেওয়া হবে সেরা একজনকে। মূল আসর ছাড়াও পুরো প্রতিযোগিতার মোট আটটি ইভেন্টে আমাকে বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে হবে, পাশাপাশি মেন্টর হিসেবে প্রতিযোগীদের ক্লাস পরিচালনা করব। আমার সঙ্গে বলিউডসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কয়েকজন তারকাও থাকবেন। ভারতের রুবারু গ্রুপ ২০০৪ সাল থেকে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।”

আগামী ১৭ অক্টোবর প্রতিযোগিতার সমাপনী দিনে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।