শ্রেয়া বলেছেন, তিনি কেবল ভারতে নয় বিশ্ব সংগীতে নিজের জায়গা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং সেটা ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত দিয়েই।
Published : 25 Feb 2024, 01:11 PM
সিনেমায় প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে পাঁচবারের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ভারতের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল গুরু মানেন একজনকেই, তিনি প্রয়াত সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর।
নানা ধরনের হিন্দি-বাংলা গানে বছরের পর বছর কনসার্ট মাতালেও শ্রেয়া সবচেয়ে বেশি করেন লতার গান। লতাকে তার গানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার ‘দায়’ অনুভব করা শ্রেয়া মনে করেন, লতা মঙ্গেশকরের সংগীত ঐতিহ্য উদযাপন করা উচিত।
বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্রেয়ার কথায় ফুটে ওঠে লতা বন্দনা।
শ্রেয়া ঘোষালকে গানের বড় পরিসরে প্রথম পাওয়া যায় ঠিক দুই দশক আগে ২০০৩ সালে। নির্মাতা সঞ্জয় লীলা বানসালীর ‘দেবদাস’ সিনেমায় প্লেব্যাক করেছিলেন তিনি। রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’র মঞ্চ থেকে শ্রেয়াকে আবিষ্কার করেছিলেন বানসালী।
‘দেবদাস’ সিনেমায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় শ্রেয়ার ‘ব্যারি পিয়া’ গানটি, এরপর থেকে হিন্দি ও কলকাতার বাংলা ফিল্মি গানে শ্রেয়ার জয়রথ ছুটছে।
হিন্দি ও বাংলা ছাড়াও নেপালি, তামিল, ভোজপুরি, তেলেগু, উড়িয়া, গুজরাতি, মালয়ালম, মারাঠি, কন্নড়, পাঞ্জাবি ও অসমীয়া ভাষায় গান করেন এই শিল্পী।
জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পাওয়া শ্রেয়ার ভাষ্য, “বহুদূর যেতে হবে। অনেক কিছুই করা বাকি আছে।“
৩৯ বছর বয়সী এই গায়িকা নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য কিছু করতে চান।
সেই কাজের পরিকল্পনা নিয়ে কথা কথায় শ্রেয়া বিবিসিকে বলেন, “আমি একজনকেই অনুসরণ করেছিলাম, এখনো তিনি অনুসরণীয়, তিনি ৩৬টি ভাষায় গান করতে পারতেন, তিনি লতা মঙ্গেশকর।”
শ্রেয়া বলেন, “আমি নিশ্চিত যে এখন একটি প্রজন্ম তৈরি হয়ে গেছে, যারা লতাজির কথা শোনেননি, তার গান তাদের কাছে পৌঁছায়নি। আমি চেষ্টা করছি সেই ব্যবধান ঘোচানোর। এ কারণেই আমি লতাজির গান বেশি করি, তাকে নিয়ে কথা বলি। কারণ পূর্বসূরীদের কাজ আমাদের বয়ে নিয়ে যেতে হবে।“
কিছুদিন আগে শ্রেয়া তার গানের ট্যুর করেছেন। ‘অল হার্টস’ ট্যুরের যুক্তরাজ্য পর্বে লন্ডন এবং ম্যানচেস্টারের কনসার্টে লতা, আশা ভোঁশলের মত শিল্পীদের গান গেয়েছেন শ্রেয়া।
লতার পাশাপাশি তার বোন আশা ভোঁশলেকেও গুরুস্থানীয় মনে করেন শ্রেয়া। তিনি বলেন, “আমি মনে করি আমার সংগীত চর্চায় কিছুটা হলেও তাদের (লতা ও আশা) ধারণ করেতে পেরেছি এবং সেই চেষ্টা চলছে। তাদের যতটুকু ধারণ করতে পেরেছি তা পরের প্রজন্মের কাছে অর্পণ করতে যাই। লতাজি এবং আশাজি আমাদের সংগীতের যে জাদু দেখিয়েছেন, সেটি যাতে আগামীর ছেলেমেয়েরা অনুভব করতে পারে সে চেষ্টা করে যাচ্ছি।“
শ্রেয়া বলছেন, তিনি তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ লতা এবং আশার মত কিংবদন্তিদের কাজে অনুপ্রাণিত হন।
“তবে এটি সত্যি যে এই শিল্পীদের গান নিয়ে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।“
ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীতের ইতিহাস যে অনেক পুরনো, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শ্রেয়া বলেন, “ধ্রুপদী থেকে শুরু করে পল্লীগীতি এবং আমাদের চলচ্চিত্রে সংগীতের বিরাজমান ধারা এই উপমহাদেশের সংগীতের ঐতিহ্যকে ধারণ করে। তরুণ সংগীতপ্রেমী এবং হালের সংগীত শিল্পীরা যাতে সংগীতের শেকড় ভুলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের কাজে ভারতীয় কিংবদন্তি শিল্পীদের প্রভাব বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের ২২ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে শ্রেয়া বলছেন, তিনি কেবল ভারতে নয়, বিশ্ব সংগীতে নিজের জায়গা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং সেটা ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত দিয়েই।
মাত্র চার বছর বয়স থেকে সংগীতচর্চা শুরু করেছিলেন শ্রেয়া, হাতেখড়ি মায়ের কাছে। পরে ছয় বছর বয়স থেকে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
১৬ বছর বয়সে ভারতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’-তে বিজয়ী হন।
ফোর্বসের বিচারে পাঁচবার ভারতের শীর্ষ ১০০ তারকার তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন শ্রেয়া। ২০১৭ সালে মাদাম তুসো জাদুঘরে এই গায়িকার মোমের ভাস্কর্য স্থাপিত হয়।