‘হুমায়ুন ফরীদি বললেন, ধরো, ক্যাচ ইট’

ফরীদির মৃত্যুর ১১ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের শিক্ষক ও নাট্যনির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী জানালেন তাকে নিয়ে কিছু স্মৃতিকথা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2023, 07:43 AM
Updated : 16 Feb 2023, 07:43 AM

প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির মূল পরিচিতি অভিনয়ে; তিনি যে অভিনয়ের ক্নাসেও দাঁড়াতেন শিক্ষক হিসেবে, সেটা অনেকেরই অজানা। মৃত্যুর এক দশকের বেশি সময় পর ‘শিক্ষক’ ফরীদি উঠে এলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্মৃতিতে।

পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে ফরীদি বিদায় নেন ২০১২ সালে, দিনটি ছিল বসন্তের প্রথম দিন। এই শিল্পীর মৃত্যুর ১১ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের শিক্ষক ও নাট্যনির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী ফেইসবুকে জানালেন ফরীদিকে নিয়ে কিছু স্মৃতিকথা।

ফরীদিকে দেশের ‘ছায়াহীন অভিনয় প্রতিভা’ হিসেবে বর্ণনা করে সুদীপ লিখেছেন, “এক দশক আগে পহেলা ফাল্গুনে তার প্রয়াণ ঘটে। তার সাথে ক্ষণকালের দারুণ এক স্মৃতি আমাকে উদ্বেলিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ২০০৭ সালে তিনি স্নাতক তৃতীয় বর্ষে তাৎক্ষণিক অভিনয়ের ক্লাস নিতেন। ক্লাস পরিচালনায় তাকে সহযোগিতার দায়িত্ব এসে পড়ে আমার উপর। ক্লাস চলাকালীন পূর্বে ঘটে নাই এমন সব অভিজ্ঞতায় তিনি পূর্ণ করে তোলেন আমাদের।

“ফাল্গুনের এক বিকেলে হুমায়ূন ফরীদি ক্লাস শেষে নাটমণ্ডলের বাইরে বসে গল্প করতে করতে হঠাৎ বললেন, ‘জানো, আজ আমার কোন কাজ নাই, ব্যস্ততা নাই।’ বলেই কী এক খেয়ালে সিগ্রেট জ্বেলে বললেন, ‘আজ আসি। পরের ক্লাসের আগে মনে করিয়ে দিও’।

সুদীপ লিখেছেন, “ফরীদি ভাই গাড়িতে উঠতে যাবেন, তখন লক্ষ্য করি, সে দিনের সেই বিকেলের আকাশ এবং তার গায়ের জ্যাকেটের বর্ণ কী বিস্ময়করভাবে মিলে গেছে। আকাশ এবং জ্যাকেট উভয়েই ধূসর, মাঝে কেবল একজন হুমায়ূন ফরীদি। কী করে এমন হয়! বললাম, আপনার জ্যাকেট ভীষণ সুন্দর, দারুণ মানিয়েছে আপনাকে।”

“শোনামাত্র ফরীদি ভাই যা করলেন, তাও আমার জীবনে পূর্বে ঘটে নাই! তিনি এক মূহুর্তে গা থেকে জ্যাকেট খুলে বললেন, ‘ধরো, ক্যাচ ইট!’ তারপর থেকে প্রতি ফাল্গুনে একবার আমি গায়ে দিই সেই সে জ্যাকেট!”

সুদীপ চক্রবর্তী জ্যাকেটের একটি ছবিও শেয়ার করেছেন ফেইসবুকে।

সুদীপ গ্লিটজকে বলেন, “সেই জ্যাকেটটি আমার কাছে এক অমূল্য স্মৃতি। প্রতি ফাল্গুনেই জ্যাকেটটি গায়ে দিই আমি।”

ঊনিশশ আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে কয়েকজন অভিনয় শিল্পী দেশের মঞ্চ ও টিভি নাটককে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলেন, ফরীদি ছিলেন তাদেরই একজন।

১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকায় জন্ম ফরীদির। পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

মঞ্চে তার ‘ত্রিরত্ন’ , ‘কীত্তনখোলা’, ‘মুন্তাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটক বিখ্যাত। মঞ্চে অভিনয়ের পাশাপাশি দিয়েছেন নির্দেশনাও।

‘নীল নকশার সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’, কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘গুপ্তধন’, ‘সংশপ্তক, ‘ভবের হাট’, ‘কোথাও কেউ নেই’সহ বহু টিভি নাটকে অভিনয় করে ফরীদি পান তুমুল জনপ্রিয়তা। তবে ‘সংশপ্তকে’ ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি নিজেকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়।

পরে সিনেমাতেও আসেন ফরীদি। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘একাত্তরের যিশু’, ‘সন্ত্রাস’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’ ও ‘শ্যামলছায়া’ অন্যতম। বাণিজ্যিক ধারার সিনেমার খল চরিত্র করেও তিনি খ্যাতি পান।

‘মাতৃত্ব’ সিনেমার জন্য ২০০৪ সালে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান হুমায়ূন ফরীদি।

ব্যক্তি জীবনে দুবার বিয়ে করেন ফরীদি। নাটকে ক্যারিয়ার শুরু পর অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফার সঙ্গে সংসার শুরু করেন। তবে ২০০৮ সালে ফরীদি-সুবর্ণার বিচ্ছেদ হয়ে যায়।