অভিনয় আমার প্রথম দুর্বলতা: আফজাল হোসেন

দীর্ঘ বিরতির পর সিনেমায় ফিরলেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা।

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2022, 03:23 AM
Updated : 7 Dec 2022, 03:23 AM

ছবি আঁকিয়ে, লেখক, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, নাটকের নির্দেশক, এক আফজাল হোসেন পরিচিতি নানা পরিচয়ে; তবে সেই সবের চেয়ে অভিনেতা পরিচয়ই মুখ্য তার কাছে।

জনপ্রিয় এই অভিনেতার জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৯ জুলাই সাতক্ষীরার পারুলিয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট কলেজে পড়াশোনা। গত শতকের সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন। পরে টিভি নাটকে এসেই ছোট পর্দার প্রথম রোমান্টিক নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তার শিখরে।

এক সময় অভিনয় কমিয়ে সমানে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেন। এর মধ্যে ২০১১ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শুধু একটাই পা’।

‘দুই জীবন’, ‘নতুন বউ’, ‘পালাবি কোথায়’সহ কয়েকটি সিনেমা করেছিলেন বহু আগে। ২০২২ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত এ অভিনেতা এখন আবার সিনেমায় ফিরেছেন। সেই সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নিলেন রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে। ‘যাপিত জীবন’ নামের এই সিনেমা দেশ ভাগ ও ভাষা আন্দোলনের সময় তুলে ধরে সেলিনা হোসেনের লেখা উপন্যাস থেকে তৈরি, নির্মাণ করছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। ‘যাপিত জীবন’র শুটিংয়ের ফাঁকে গ্লিটজকে দিয়েছেন সাক্ষাৎকার।

গ্লিটজ: সেই ১৯৯৭ সালে ‘পালাবি কোথায়’, মাঝে ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এ একটু দেখা গেলেও বলা যায় লম্বা বিরতি দিয়ে সিনেমায় ফিরলেন। ফেরার গল্পটা কেমন?

আফজাল হোসেন: গত কয়েক বছরে ওটিটিতে বেশ কিছু কাজ করেছি। তবে সিনেমায় ফিরছি ‘যাপিত জীবন’ দিয়ে। পরিচালক হাবিবুর রহমান হাবিব আমাকে একটা পাণ্ডুলিপি পাঠালেন। বললেন, ‘পড়ে দেখেন, কেমন লাগে।’ পড়লাম। বেশ অবাক লাগল। আমাদের দেশের মানুষ আন্দোলন, সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জানে। এগুলো নিয়ে সিনেমাও হয়েছে। কিন্তু দেশ ভাগ, ভাষা আন্দোলন এগুলো নিয়ে খুব বেশি কাজ হয়নি। দেশ ভাগের যন্ত্রণা, ভাষার জন্য সংগ্রামের যে বিষয়গুলো এ প্রজন্মকে জানানো দরকার, তার সবই আছে এ সিনেমায়। আমাদের দেশ ও ভাষা জন্মের পেছনের গল্পগুলো যত বেশি জানা থাকবে, দেশের প্রতি মানুষের আবেগ, ভালোবাসা প্রকট হবে। সেলিনা হোসেন তার উপন্যাসে দারুণভাবে নতুন দেশে জায়গা নেওয়ার সংকট, যন্ত্রণা তুলে ধরেছেন। সেই সময়ের একটি চরিত্র পেয়ে ভালো লেগেছে। সেই ভালোলাগা থেকেই এই কাজে যুক্ত হওয়া।  

গ্লিটজ: ওয়েব সিরিজ কারাগার পার্ট-টু মুক্তি পাবে ২২ ডিসেম্বর। প্রথম পর্বে আপনাকে নিয়ে বেশ রহস্য তৈরি করা হয়েছে। পার্ট টুতে আপনার চরিত্র কোন দিকে যাবে?

আফজাল হোসেন: সেটা তো বলা যাবে না। কারণ, দর্শক আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। আমি শুধু না, যারা এটার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, কারোরই তাদের চরিত্র নিয়ে ধারণা দেওয়া উচিত হবে না। নির্মাতা চেষ্টা করেছেন শেষ পর্যন্ত দর্শকের আগ্রহ টিকিয়ে রাখার। এই কৌতূহলটা ধরে রাখতে পারলে দেখার আনন্দ বাড়বে। এটুকু বলতে পারি প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও দর্শক চমকপ্রদ কিছু দেখতে পাবেন।

গ্লিটজ: কারাগার এদেশের প্রেক্ষাপটে তো বটেই, উপমহাদেশের আলোকেও ব্যতিক্রমী একটা গল্প। স্ক্রিপ্টটা হাতে পাওয়ার পর কোন ভাবনাটা কাজ করছিল?

আফজাল হোসেন: স্ক্রিপ্ট পেয়ে মনে হয়েছিল গল্পটা খুবই আলাদা। শাওকীর ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’ দেখেছিলাম আমি। গল্প বলার বিশেষ গুণ তার আছে। স্ক্রিপ্ট হাতে পেয়ে মনে হয়েছিল আমার এটা করা উচিৎ।

গ্লিটজ: তাকদীর, মহানগর, কারাগার বা এ ধরনের সাম্প্রতিক কাজগুলো দেখলে কি মনে হয় বাংলা কনটেন্ট নতুন পথের সন্ধান করছে বা পেয়েছে?

আফজাল হোসেন: আমার কাছে মনে হয়, নতুন আগ্রহ সৃষ্টিকারী মাধ্যমটাকে (ওটিটি মাধ্যম) বেশিরভাগ কাজ করছে তরুণরা। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক, যারা নতুন একটা ক্ষেত্রে কাজ করছে, তাদের আলাদা চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। সচেতনভাবে আলাদা কিছু করার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টাটা আছে বলেই প্রতিটি কাজ মনযোগ আকর্ষণকারী হচ্ছে। ধারাটা টিকে থাকলে তা সবার জন্যই ভালো হবে।

গ্লিটজ: মাঝে লম্বা বিরতি নিলেন। তখন কি মনে হয়েছে আবার অভিনয়ে ফিরবেন?

আফজাল হোসেন: যে অভিনেতা, সে অভিনয় থেকে সরে খুব ভালো থাকে না। যেহেতু আমার অন্য কাজ করার আছে, করতে পারি সেগুলো করছিলাম। তবে অভিনয় আমার প্রথম দুর্বলতা। একজন অভিনেতা নিত্য নতুন চরিত্রের তৃষ্ণা তার ভেতর থাকে। সেটা না হলে অযথা অভিনয় করার দরকার দেখি না। ওই সুযোগটা ছিল না বলে অভিনয় করছিলাম না। নতুন মাধ্যমটা আসায় দেখলাম বেশ ভালো ভালো চরিত্র, ভালো কন্টেন্ট নিয়ে কাজ হচ্ছে। এক ধরনের উত্তেজনা নতুন করে পেয়েছি এটা বললে ভুল হবে না। ভালো লাগছে। উপভোগ করছি। আশাকরি মাধ্যমটা লম্বা সময় থাকবে।

গ্লিটজ: বড় একটা দর্শকশ্রেণি ছিল আপনার। নতুন মাধ্যমে কাজ করাতে তরুণ প্রজন্মও আপনার কাজে মুগ্ধতা জানাচ্ছেন। এ অবস্থায় পুরনো দর্শকরা আপনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছে?

আফজাল হোসেন: আমরা একটা সময় কাজ করেছে একটা ধরনের। সময় অনেক পাল্টেছে। তরুণরা নতুন ধরনের কাজ করছে। তাদের ধ্যান ধারণা খুবই আলাদা। নিঃসন্দেহে নতুন প্রজন্মের দর্শকরা এগুলো পছন্দ করছে। নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছে (দেখছে)। আবার আগের প্রজন্মও এখনকার কাজগুলো দেখছে। যারা নতুন কোনো ধারার সন্ধান করছিলেন তাদেরও এখনকার কাজগুলো ভালো লাগছে। উভয় প্রজন্মকে একত্রিত করছে এই কনটেন্টগুলো। বিষয়গুলোর প্রতি সকলের আকর্ষণ তৈরি করছে। সেটা খুবই ভালো।

গ্লিটজ: সরকারি অনুদানের সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তির হিড়িক পড়েছে। দুই একটা ছবি বাদে বেশিরভাগ অনুদানের ছবিই দর্শকনন্দিত হয় না। এর কারণ কী?

আফজাল হোসেন: সরকারি অনুদানে বানানো সিনেমা খুব বেশি যে দেখেছি তা না। কিছু কিছু ছবি দেখেছি। আমরা বলি যে, ভালো সিনেমা হয় না; এটা ঠিক দর্শক এক সময় সিনেমার ছিল। এখন দর্শক ওতটা নেই। আমরা যখন দেখি একটা ছবি হিট করেছে, সবাই গিয়ে দেখছে, তার মানে এই না- দর্শক সিনেমার জন্য প্রস্তুত। একটা ছবি যখন সবাই আলোচনা করে, তখন দর্শক গিয়ে দেখে, মনে করে তারও দেখা দরকার। অথচ যে কোনো ভালো ছবির প্রতিই দর্শকের আগ্রহ থাকতে হবে। সেই ছবিটা যদি বাণিজ্যিকভাবে সফল নাও হয়; নির্মাতা যত্ন নিয়ে বানালে সেটা দর্শকের দেখা উচিৎ। দেখার অভ্যাসটা তৈরি হলে আমরা খুব বেশি বলতে পারব না, দর্শক সিনেমা দেখে না। এটা ঠিক, শুধু বানালে হবে না; দেখতেও হবে। দেখাটা একটা দায়িত্ব। সিনেমা বানানো যেমন নির্মাতার দায়িত্ব সেই সিনেমাটা দেখাও দর্শকের দায়িত্ব।