খল অভিনেতা হওয়ার দিকে এখন পূর্ণ মনযোগ রাশেদ মামুন অপুর।
Published : 29 Oct 2022, 10:22 AM
‘এত খারাপ কেন?’ কিংবা ‘সেই জানোয়ারটা না?’- এমন কথাগুলোতে মনস্তাপ নয়, বরং নিজের ভালো অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে নিচ্ছেন রাশেদ মামুন অপু। তিনি জানালেন, এখন খল অভিনেতা হওয়ার দিকেই তার পূর্ণ মনোযোগ।
সিটিবাস নাটকে ‘তোতা মিয়া’ চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পাওয়া রাশেদ মামুনকে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বেশক’টি সিনেমায় দেখা গেছে ভিলেন বা খল চরিত্রে।
অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপাতত খল অভিনেতা হওয়ার দিকে পূর্ণ মনযোগ দিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, খল অভিনেতা হতে গেলে আগে তাকে অভিনেতা হতে হয়। অভিনেতা হওয়ার পর নিজেকে ভাঙার সুযোগ তৈরি হয়। অভিনেতা হয়ে গেলে সে খল চরিত্র করতে পারে, কমেডি চরিত্র করতে পারে।
“সাধারণ ও কমেডি চরিত্রেই আমাকে বেশি দেখা গেছে। তবে এখন আপাতত খল অভিনেতা হওয়ার দিকে সম্পূর্ণ মনযোগ দিচ্ছি আমি।”
‘কাঠগোলাপ’ সিনেমার শুটিং সেটে বসে কথা বলছিলেন রাশেদ মামুন। নতুন সিনেমার প্রসঙ্গে বলেন, “অপূর্ণ রুবেলের গল্পে সাজ্জাদ খানের পরিচালনায় নির্মিত হচ্ছে ‘কাঠগোলাপ’। এখানে খুব ইন্টারেস্টিং একটা চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি চরিত্রের আগে দেখি কনটেন্ট। এখানে আমার চরিত্রটা কনটেন্টের সাথে দারুণভাবে মিশে যায়। আমার চরিত্রে বাঁক আছে, উত্থান-পতন আছে, চমক আছে।”
গত এক-দেড় বছরে মুক্তি পাওয়া বেশ কয়েকটি সিনেমা এবং ওয়েব কনটেন্টে অপু হাজির হয়েছেন খল চরিত্রে।
‘নেগেটিভ’ চরিত্রে অভিনয়ের ফলে বাস্তব জীবনে কী ধরনের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন সবাই দেখা হলেই আমাকে বলে, ‘দোত্তো কী অবত্তা, ভালো? থিকথাক?’ পরাণ সিনেমার তোজোর মতো করে তারা আমার সঙ্গে কথা বলে। পরাণ মুক্তির পর অনেকেই সামনে এসে বলে, ‘আপনি এত খারাপ কেন বলেন তো? বন্ধুকে গুলি করে দিলেন?’
“একই অবস্থা হয়েছে ওয়েব ফিল্ম জানোয়ার মুক্তির পর। “জানোয়ার দেখে অনেকে ঘৃণায় আমার সাথে ঠিকমতো কথাই বলেনি? কেউ কেউ তো দেখা হলে সরাসরি বলেই ফেলত, আপনি সেই জানোয়ারটা না?”
শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ‘দামাল’। এই সিনেমায় রাজাকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাশেদ মামুন ।
দামাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এর আগে রাজাকারের চরিত্রগুলো ফানিভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো ফানি জিনিস না। যদি ফানি হত, তবে এরা ৭১ সালে এত নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করত না। দর্শক ‘দামাল’ দেখুক। আমার চরিত্রটিকে মানুষ ঘৃণা করুক। মানুষ যদি আমার চরিত্রটিকে ঘৃণা করে তাহলেই সার্থকতা আসবে।”
রাশেদ মামুন বলেন, ‘দামালের রাজাকার চরিত্রটিতে অভিনয়ের আগে চরিত্রটি নিয়ে স্টাডি করেছি। ফাইনালি স্ক্রিনে সেরাটা দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। দর্শক প্রথম দিন দেখে প্রশংসা করেছে। তখন মনে হয়েছে কষ্ট স্বার্থক।’
বর্তমানে বাংলা সিনেমার ভিলেন বলতেই ভেসে আসে মিশা সওদাগরের নাম। তাকে দেখেই ভিলেন হওয়ার স্বপ্ন কি না- জানতে চাইলে রাশেদ মামুন বলেন, “মিশা ভাই আমার গুরুস্থানীয় একজন মানুষ। তার অভিনয় সব সময়ই দেখতাম। এত বছর ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নেগেটিভ চরিত্রকে তিনি একা টেনে নিয়ে গেছেন। এখন আমরা চেষ্টা করছি। তারাও যথেষ্ট সাহায্য করছেন আমাদের।”
“তবে আমি নেগেটিভ চরিত্রে ভেরিয়েশন আনার চেষ্টা করেছি। এতদিন দেখেছি নেগেটিভ চরিত্রগুলো একইভাবে খুন করে, একইভাবে নায়িকার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই জায়গা থেকে বের হয়ে এসে নেগেটিভ চরিত্রকে অন্যভাবে দেখার চেষ্টা কতটুক সফল হয়েছে জানি না। তবে দর্শকের কাছ থেকে যে সাড়া পাচ্ছি তাই আমার পাথেয়,” যোগ করেন তিনি।
অভিনয় নিয়ে নিজের লক্ষ্য জানিয়ে রাশেদ মামুন বলেন, “এক সময় তো কাজ ছেড়ে দেব। কাজ করা হয়ে উঠবে না। তখন যেন নিজেকে বলতে পারি, রাশেদ মামুন অপু নেগেটিভ চরিত্রে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছিল। এই চেষ্টা সফল হবে কি না তা সময় বলে দেবে।”
এখন তো একের পর এক ধরা দিচ্ছে সফলতা। তবে শুরুর পথটা কি এমনই মসৃণ ছিল? জবাবে রাশেদ মামুন বললেন, “২০১২ সালে নোমান রবিনের কমন জেন্ডার করেছিলাম। তারপর কেউ সেভাবে আমাকে ডাকেনি। আমাকে প্রয়োজনই বোধ করেনি কেউ। আমি তেমন কোনো স্ক্রিপ্টও পাইনি। দুই একটা স্ক্রিপ্ট এসেছিল, আমার পছন্দ হয়নি। সমস্ত শক্তি নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। এখন অপেক্ষার ফল পাচ্ছি।”
ফল বেশ ভালোই পাচ্ছেন বলা যায়। সম্প্রতি একইদিনে ‘লাল শাড়ি’, ‘চাদর’ ও ‘প্রহেলিকা’ নামের তিনটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এ অভিনেতা। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘বাঘে খায়’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ। এছাড়া ‘কর্পোরেট’, ‘বর্ডার’, ‘মুক্তি’ সিনেমায় কাজ করছেন।
বাংলা সিনেমায় এখন জোয়ার এসেছে বলে মনে করেন এই অভিনেতা। এটা একে নতুন মাত্রায় পৌঁছে নেওয়ার সুযোগও মনে করছেন তিনি।
“এখন বাংলাদেশের সিনেমা যেভাবে জেগে উঠেছে, এই সুযোগে এমন কিছু কনটেন্ট হওয়া উচিৎ, যাতে চরিত্র অভিনেতারা বের হয়ে আসতে পারে। ওটিটিতে যেমন ছোট চরিত্র অভিনেতারা ছেড়ে ফুঁড়ে বেড়িয়ে আসছেন। আমি আশাবাদী, চলচ্চিত্রের এমন দিন আসবে। কারণ আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের যারা চরিত্র অভিনেতা আছেন, তারা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মার।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ই থিয়েটারে যুক্ত ছিলেন রাশেদ মামুন। পড়াশোনা করছেন আইনে। কিছু দিন আইন পেশায়ও ছিলেন, কিন্ত পরে চলে আসেন ভিন্ন জগতে।
তিনি বললেন, প্রথমে বিজ্ঞাপনের কপি রাইটার হিসেবে কাজ করেন কিছুদিন। এরপর নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। নিজেও নাটক বানিয়েছেন। কাজ করেছেন এনজিওতে।
মিডিয়া যখন ছেড়ে দেবেন কি না ভাবছিলেন, তখনই সিটিবাস নাটকে কাজের সুযোগ আসে। এই নাটকে তার চরিত্রের নাম ছিল তোতা মিয়া। রাজশাহীর ভাষায় সংলাপ সে সময় দর্শকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখে পরিণত হন রাশেদ মামুন। এরপর আর অভিনয় তো ছাড়া হয়ইনি, বরং আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে গেছেন।
আইন পেশায় ফিরে যাবেন কি না- জানতে চাইলে রাশেদ মামুন বলেন, “ফিরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। দর্শকের ভালোবাসায় যতদিন শক্তি আছে, সিনেমায় কাজ করে যেতে চাই।”