‘আমি ফুরিয়ে যাইনি’

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ঢালিউডের নায়িকা বলতে ছিলেন শুধু অপু বিশ্বাস। কিং খানের সঙ্গী হয়ে রানীর আসনটা ধরে রেখেছিলেন বেশ কয়েক বছর। তারপর হঠাৎ ছন্দপতন। ফিটনেস হারালেন, হারালেন বিগ বাজেটের বেশ কয়েকটি সিনেমা। তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজেকে ফেরাতেই হবে। 

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2014, 05:43 AM
Updated : 29 July 2014, 05:43 AM

অপু ফিরেছেন। এক বছর বিরতি নিয়ে নিজেকে পাল্টে পেলেছেন আদ্যোপান্তই৤ । 

গ্লিটজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অপু জানালেন, ঈদের সিনেমা ‘হিরো- দ্য সুপারস্টার’ দিয়ে শুধু ফিরছেনই হারানো আসনটাও পুনরুদ্ধার করবেন। আড্ডায় অপু বিশ্বাসের ছবি তুলেছেন তানভীর আহমেদ।

গ্লিটজ: ঈদে মুক্তি পাচ্ছে ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’। বিরতির পর ফিরে এসে বিগ বাজেটের সিনেমাতে অভিনয় করলেন। সিনেমাটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?

অপু :
সিনেমাতে আমি ভীষণ নরম মনের মানুষ। প্রেমের ব্যাপারটি তখন আমার মাথাতে নেই। কিন্তু হিরো এসে সবকিছু কেমন পাল্টে দেয়। আমাদের প্রেমকাহিনি দেখে দর্শক ভীষণ মজা পাবে এবার। শাকিব- অপুর জুটির যে সিনেমাগুলো আগে দর্শক দেখেছে, সেগুলো থেকে একদমই আলাদা এবারের সিনেমাটি। সিনেমাতে ববিও আছে। আমি না ববি- কে শাকিবকে পাবে, তা জানতে হলে দর্শককে হলে যেতে হবে। দুই নায়িকার লড়াইয়ে কে জয়ী হয়- এখানেই চমক রেখেছেন পরিচালক।

গ্লিটজ: প্রযোজক শাকিবকে কেমন দেখছেন?

অপু:
শাকিব সিনেমাটি নিয়ে প্রচুর খেটেছে। প্রেম, ভালোবাসা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ- এসব নিয়েই তো আমাদের সিনেমা। কিন্তু শাকিব চেনা গল্পেই ভিন্নতা এনেছে। পুরো সিনেমার ব্যবস্থাপনাই পাল্টে দিয়েছে সে। গান ও অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে নতুনত্বের স্বাদ পাবে দর্শক। আমার কখনও মনে হয়নি শাকিব প্রথমবারের মতো সিনেমা প্রযোজনা করছে।

গ্লিটজ: শুটিং শুরুর আগেই সিনেমাটি বেশ আলোচনায় ছিল। আপনার প্রত্যাবর্তনের পাশাপাশি আপনার এবং ববির দ্বন্দ্বের বিষয়টি বার বার গুঞ্জন তুলেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

অপু:
সিনেমাতে কাজ করতে গেলে কত কিছুই হবে। মাঝে সমালোচকরা বলেছিল যে আমি নাকি ববিকে সিনেমাতে না নিতে শাকিবকে অনুরোধ জানিয়েছি। ববির সঙ্গে শাকিবকে শেয়ার করতে চাই না আমি। আমি এসবের মধ্যে নেই। ববিকে নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। ববিও ভালো অভিনয় করছে। সেও নিজের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে। আমার সাফ জবাব, ববির সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

গ্লিটজ: এবার ঈদে মাহি, ববির আরও দুটি সিনেমা মুক্তি পাবে। কার সিনেমা কেমন ব্যবসা করবে, এ নিয়ে এখন জটিল হিসাব নিকাশ চলছে। তিন অভিনেত্রীর প্রতিযোগিতা নিয়েও ঢালিউড সরগরম। প্রতিযোগীদের ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন?

অপু:
আসলে আমার মনে হয় যদি প্রতিযোগিতা না থাকে, তাহলে সে কাজের কোনো মূল্যায়নই হয় না। আমি খুবই আনন্দিত যে মাহি এবং ববি দুইজনই ভালো কাজ করছে। আমি তাদের কাজের প্রশংসাও করি।

এখন মাঠে তিনজন খেলোয়াড় আছে। তারা একটি বল নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। আমি চাইছি, কাড়াকাড়ির মধ্যে যেন আমি গোলটা দিতে পারি।

মাহি,ববি, আঁচলদের আমি কখনও প্রতিযোগী মনে করি না। আমার কোনো প্রতিযোগী ছিল না বলে একসময় নিজের কাজগুলো ভালো না মন্দ তা বুঝতে পারতাম না। এখন ওরা আছে বলে আমি নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে পারব। ওদের সিনেমাগুলোর সঙ্গে নিজের সিনেমার তারতম্য করতে পারব।

আমি খুব করে চাইতাম ঢালিউডে নতুন নায়িকা আসুক। ওরা পাকাপোক্ত হোক। এতে চলচ্চিত্র শিল্পেরই লাভ হবে। একে অন্যের কাজ থেকে নিজেকে যাচাই বাছাই করতে পারব।

গ্লিটজ: ‘কাল সকালে’র পার্শ্বঅভিনেত্রী থেকে একসময় সিনেমার প্রধান নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ এল। কিন্তু কেন্দ্রীয় চরিত্রে আপনাকে কখনও দেখা যায়নি। এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই?

অপু:
‘কাল সকালে’ যখন করি, তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। তারপর পড়াশোনার জন্য সিনেমাতে নিয়মিত হইনি। এফ আই মানিক আমাকে ‘কোটি টাকার কাবিন’ এ সুযোগ করে দিলেন। সিনেমার সিমরান চরিত্রটি আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিল। এরপর শাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধেছি। রিয়াজ, ফেরদৌস এমনকি ইমন, সম্রাটের বিপরীতেও আমি অভিনয় করেছি। আমি প্রধান নায়িকার চরিত্রে ছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমি কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলাম না। শাকিবের সঙ্গে যে সিনেমাগুলোতে অভিনয় করেছি, সেখানে শাকিবকে প্রাধান্য দেওয়া হবে সে কথা আমি আগেই জানতাম।

এতে আসলে প্রযোজক, পরিচালক বা চিত্রনাট্যকারদের দোষ দেওয়া যাবে না। আমাদের দর্শকের রুচিই এমন। নায়িকাপ্রধান সিনেমা কিন্তু দর্শক গ্রহণ করবে না। তারা চায়, নায়িকা নায়কের সঙ্গে রোমান্স করবে। রোমান্টিক গানে নাচানাচি করবে। তার কোনো একটা ঘটনাতে মরিয়া হয়ে উঠবে নায়ক।

দর্শকের চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে পরিচালকরা ভিন্ন কিছু ভাবেননি।  এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। যা হয়ে গেছে, তা নিয়ে ভেবে কী হবে।

গ্লিটজ: আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট কোন সিনেমাটি?

অপু : অবশ্যই ‘কোটি টাকার কাবিন’ এবং এখন ‘হিরো-দ্য সুপারস্টার’। ‘কোটি টাকার কাবিন’- এর সিমরান আমাকে পরিচিতি দিয়েছে। ‘কোটি টাকার কাবিন’-হয়তো তেমন কিছু নয়। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর সত্যিই সবকিছু বদলে গেল। পরিচালকরা আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করল।

বিরতির পর ‘ডেয়ারিং লাভার’ মুক্তি পেলেও আমি ‘হিরো-দ্য সুপারস্টার’- এর কথাই বলব। এ সিনেমাটি আমার ক্যারিয়ারের আরেকটি টার্নিংপয়েন্ট। আমি ফুরিয়ে যাই নি, তা প্রমাণ করব এ সিনেমাটি দিয়েই।

গ্লিটজ: আপনার যখন শুরু করেন চলচ্চিত্রের অবস্থা খুব ভালো ছিল না। অশ্লীলতা, নকল করাসহ অনেক অভিযোগ ছিল বাংলা চলচ্চিত্রকে নিয়ে।  এখন দেশে ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছে। আপনার দৃষ্টিতে বাংলা চলচ্চিত্রে আসলে কতটা পরিবর্তন এসেছে?

অপু :
প্রত্যেকটা জিনিসের ভালো মন্দ, জোয়ার ভাটা, পড়ে যাওয়া আবার উঠে আসা, সব সেক্টরেই আছে। দেশের কথাই ধরুন না। দেশেও তো কত সংকট। আমাদের সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, সিনেমাতে শিল্পী সংকট প্রকট ছিল। প্রযুক্তিতে শিক্ষিত লোকজন ছিল না।

এখন সিনেমাতে পরিবর্তন আসছে। ডিজিটাল চলচ্চিত্র সিনেমার বাজার পাল্টে দিয়েছে। ভালো গল্পে ভালো সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। প্রযুক্তিতে অনেক পরিবর্তন আসছে। ধীরে ধীরে বদলে যাবে আমাদের চলচ্চিত্র। আমাদের দেশেও বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মিত হবে,  এমন স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি।

গ্লিটজ: জুনিয়র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?

অপু: এখন যারা কাজ করছে তাদের প্রত্যেকের অভিনয় কিন্তু একেক রকম সুন্দর। কারও সঙ্গে কারও কোনো মিল নেই। আমার প্রত্যেককে আলাদাভাবে সুন্দর মনে হয় । সবাই খুব ভালো করছে।

গ্লিটজ: ঈদের সিনেমার পর বেশকটি সিনেমাতে দেখা যাবে আপনাকে। নিজেকে ফেরানোর প্রস্তুতি কেমন?

অপু: প্রথমত আমি ফিটনেসের প্রতি মনযোগী হয়েছি। এতই মুটিয়ে গিয়েছিলাম যে, আমার সিনেমার গানগুলো দেখে আঁতকে উঠতাম। এ কি আমি! আমি এক বছর বিরতি নিয়েছি। জিমে প্রচুর সময় কাটিয়েছি। আমার পারফরমেন্সের ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সতর্ক হয়েছি। কোন গল্প আর কোন চরিত্রে অভিনয় করছি, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। 

গ্লিটজ: শাকিব খান ছাড়া অন্য নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করবেন?

অপু : অবশ্যই করব।  আমার ব্যাপারটা আসলেই অন্যরকম। শাকিব অসম্ভব ভালো আর্টিষ্ট, তাই শাকিবকে বেছে নিয়েছিলাম। এখন যে নায়করা কাজ করছে তারাও খারাপ করছে না। খুব শীঘ্রই হয়তো আমি তাদের সঙ্গে কাজ করব। কথাবার্তা চলছে। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি।