ফেইসবুক পোস্ট: কোথা থেকে টুকছেন শাকিব খান? কতটা ঠিক?

বেশ কয়েকজন বিদেশি লেখকের নাম কিংবা কোনো উদ্ধৃতি চিহ্ন ছাড়াই তাদের কয়েকটি উক্তি নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে পোস্ট করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খান।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2021, 11:24 AM
Updated : 30 August 2021, 11:24 AM

শনিবার রাতে শাকিব খানের ফেইসবুক পাতায় তার একটি স্থিরচিত্রের সঙ্গে লেখা হয়- “সব সময় মনে রাখবেন, বর্তমান পরিস্থিতিই আপনার চূড়ান্ত গন্তব্য নয়। সবচেয়ে সুন্দর সময় আসার এখনও বাকি। সুতরাং শান্ত থাকুন।”

উৎসের নাম কিংবা কোনো উদ্ধৃতি চিহ্ন ছাড়াই লেখাটি পোস্ট করায় অনেকে সেটিকে শাকিব খানের লেখা ভেবে প্রশংসাও করতে শুরু করেন।

তবে সেই উক্তিটি শাকিব খানের নয়, আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার জিগ জিগলারের।

লেখকের নাম না দেওয়া নিয়ে সেই ফেইসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে প্রশ্ন তোলায় ‘অকথ্য’ ভাষায় আক্রমণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস বলছে, অন্যের নাম ছাড়া লেখা ফেইসবুকে দেওয়াকে ‘অপরাধে পর্যায়ে ফেলা না গেলেও’ এটি একটি ‘অনৈতিক’ কাজ।

রোববার দিনভর সমালোচনার মধ্যে দেশের শীর্ষ এ নায়কের ফেইসবুক পেইজে অন্তত চারটির মতো অনুপ্রেরণাদায়ী উক্তি পাওয়া গেছে যেগুলোর কোনোটিই তার লেখা নয়; সেখানেও আসল লেখকের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ছবি: ফেইসবুক থেকে।

সেসব বক্তব্য শাকিবের খানের ধরে নিয়ে বিভিন্ন সময় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশ করা হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তরফ থেকে কয়েক দফা শাকিব খানকে ফোন করলেও তার সাড়া মেলেনি। হোয়াটস অ্যাপে প্রশ্ন পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি।

গত ২৩ মার্চ ফেইসবুক পেইজে নিজের হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবির পোস্ট করে শাকিব খান লিখেছেন, “আগামীকালের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতির জন্য আজকেই নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করুন।”

লেখার আগে-পরে কোনো লেখকের নাম না থাকায় আপাত দৃষ্টিতে লেখাটিকে শাকিব খানের মনে হলেও আসলে তা নয়; উক্তিটি আরেক আমেরিকান লেখক জ্যাকসন ব্রাউন জুনিয়রের। কিন্তু তা উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন বোধ করেননি শাকিব খান।

এরপর ২২ অগাস্ট আরেকটি ছবি পোস্ট করে একই কায়দায় ‘দ্য লাইট ইন দ্য হার্ট’ বইয়ের লেখক রয় টি. বেনেটের একটি উক্তি চালিয়ে দিয়েছেন ভক্তদের মাঝে।

২০২০ সালের ৪ নভেম্বর আরেকটি ছবির ক্যাপশন লিখতে গিয়ে আমেরিকান লেখক সুজান ব্রুকমানের কাছ থকে উক্তি ধার নিলেও ঋণ স্বীকার করেননি শাকিব খান।

ছবি: ফেইসবুক থেকে।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রায়হানুল হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কপিরাইট আইনের সঙ্গে নৈতিকতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কতগুলো বিষয় আছে যেগুলো অনৈতিক কিন্তু আইনে সেটা কাভার করা নেই। সেক্ষেত্রে বলায় যায়, তিনি এটার মিসইউজ করলেন মানে নৈতিকতাবিরোধী আচরণ করলেন; বিষয়টা সেরকম।

“সোশাল মিডিয়াতে প্রতিনিয়তই একজন আরেকজনের লেখা চালিয়ে দিচ্ছেন। এটাকে আসলে কোনো অপরাধের পর্যায়ে ফেলা যাবে না কিন্তু পুরোটাই তো অনৈতিক।”

এর আগে ২০২০ সালের জুনের জনপ্রিয় গান ‘পাগল মন’ এর সুরকার, গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পীর অনুমতি ছাড়াই গানটি ‘রিমেক’ করে নিজের ‘পাসওয়ার্ড’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করে আইনি জটিলতার মুখে পড়েছিলেন চিত্রনায়ক ও প্রযোজক শাকিব খান।

গানের গীতিকার কায়সার আহমেদ, সুরকার আশরাফ উদাস ও শিল্পী দিলরুবা খানের পক্ষে গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে জিডির পর জরিমানা গুনে বিষয়টি মীমাংসা করেছিলেন এ চিত্রনায়ক।

শাকিব খানের ভুল ধরিয়ে দিয়ে ‘আক্রমণের শিকার’ ওমর সানী

শাকিব খানের পোস্টে আমেরিকান লেখক জিগ জিগলারের নাম উল্লেখ না থাকায় তার ওই পোস্টের থ্রেডে চিত্রনায়ক ওমর সানী মন্তব্য করেন: ‘লেখা তো তোর না, কে লিখেছে, ভাই ভালো থাকিস’। এরপর তাকে ‘অকথ্য’ ভাষায় আক্রমণের শিকার হতে হয় শাকিবভক্তদের কাছ থেকে।

ছবি: ফেইসবুক থেকে।

শাকিবভক্তদের এমন আচরণে হতাশা প্রকাশ করে এক সময়ের এই চিত্রনায়ক বললেন, “ভুল ধরিয়ে দিয়ে কি আমি অপরাধ করলাম?”

অনেকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছেন জানিয়ে রোববার রাতে সানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মা-বোন তুলে গালাগালি করছে। কিছু বাজে বাজে কমেন্টস দেখে আমার চোখে পানি এসেছে। আমি বললাম যে, ভুল ধরিয়ে দিয়ে কি আমি অপরাধ করলাম?

“মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। ওর (শাকিব খান) অ্যাডমিন চরমতম বেয়াদবের মতো কাজ করেছে। এত বড় একজন লেখকের নামটা লিখতে হয় না? সেখানে উচ্ছৃঙ্খল মানুষ আমাকে যা-তা লেভেলে গালাগালি করছে।”

মন্তব্যে শাকিব খানকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করায় ওমর সানীর সমালোচনা করছেন কেউ কেউ। বিষয়টি নিয়ে ওমর সানী বলছেন, ছোট হিসেবে শাকিব খানকে ব্যক্তিগত জীবনেও ‘তুই’ বলে সম্বোধন করেন তিনি।

ওমর সানী বলেন, “শাকিব খান নিজেই লিখুক আর অ্যাডমিন লিখুক, লেখকের নামটা দিতে হবে তো। আমি রবীন্দ্রনাথের কোনো বাণী নিজের নামে চালিয়ে দিলাম, তাহলে তো সেটা ক্রাইম।”

রোববার দিনভর এ নিয়ে নেটে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, “এটাকে ইস্যু বানিয়ে জাহান্নাম করুক, আমার তো বলার কিছুই নেই। একজনের বক্তব্য দিতে গেলে তাকেই কোট করতে হয়। কমেন্টে সেটাই আমি বলার চেষ্টা করেছি।”