অড্রে হেপবার্নের কাছে ‘মানবতার মন্ত্র’ পেয়েছিলেন ববিতা

বিশ্ব চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের সঙ্গে তিন দশক আগে সাক্ষাৎ হয়েছিল ঢালিউডের অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার ববিতার; সেই সাক্ষাতে ‘রোমান হলিডে’র রাজকুমারীর কাছ থেকে পাওয়া ‘মানবতার মন্ত্রকে’ আজও জীবনের পাথেয় হিসেবে নিয়েছেন ববিতা।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2021, 04:40 AM
Updated : 23 April 2021, 04:40 AM

‘রোমান হলিডে’, ‘ব্রেকফাস্ট অ্যট টিফানি’স’, ‘সাবরিনা’, ‘দ্য নান’স স্টোরি’, ‘মাই ফেয়ার লেডি’র মতো চলচ্চিত্রে অড্রে হেপবার্নের মোহনীয় হাসি ও দ্যুতিময় চাহনি অনুরণন তুলেছে কোটি দর্শকের হৃদয়ে।

হলিউডি চলচ্চিত্রে সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি হিসেবে বিবেচিত হেপবার্ন ক্যারিয়ারের শেষ দশকে চলচ্চিত্রকে বিদায় জানিয়ে আমৃত্যু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে শরীরে ক্যান্সার নিয়ে এশিয়া থেকে সোমালিয়ায় ছুটেছেন।

ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ১৯৮৯ সালের ১৮-২৪ অক্টোবর এক সপ্তাহের সফরে বাংলাদেশেও এসেছিলেন তিনি; সফরের ফাঁকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) ঝর্ণা স্পটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অড্রে হেপবার্ন; শিশুদের পোলিও টিকা খাওয়ান তিনি।

সেই আয়োজনে এ কিংবদন্তীকে আড্ডায় পেয়েছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের শাবানা, ওয়াসীম, ববিতারা।

সেই আড্ডায় অড্রে হেপবার্নের কাছ থেকে ‘মানবতার মন্ত্র’ পেয়েছিলেন বলে জানালেন ববিতা; যে মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে ববিতা আজও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন।

সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে ববিতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “আমি হেপবার্নকে প্রশ্ন করেছিলাম, পৃথিবী বিখ্যাত অভিনেত্রী হয়েও তুমি অভিনয় ছেড়ে দিলে কেন? উনি বলেছিলেন, ‘দেখো, আমার মনে হয় ফিল্মে অভিনয় করা অনেক সহজ। কিন্তু এখন আমি যেটা করছি এটা অনেক কঠিন।’

“তারপর তিনি একটা কথা বললেন, যেটা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তিনি বললেন, ‘পৃথিবীতে যত আর্ট আছে তার মধ্যে সেরা হলো মানবতা। সেই জন্যই আপাতত ফিল্ম ছেড়ে এগুলো করে বেড়াচ্ছি।’ হেপবার্ন আমাকে বললেন, ‘যদি পারো তুমিও এগুলোর চেষ্টা করো “

বাংলাদেশে সফরকালে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে হেপবার্ন।

সেইদিনই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করার মনস্থির করেছিলেন বলে জানালেন ববিতা।

হেপবার্নের ডাকে সাড়া দিয়ে ক্যারিয়ারের তুমুল ব্যস্ততার মধ্যেও ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন ববিতা; বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য রেখেছেন ববিতা।

ববিতা জানান, তারুণ্যে অড্রে হেপবার্ন কাছ থেকে যেমন অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তেমনি শৈশবে তার মায়ের কাছ থেকেও মানবতার দীক্ষা পেয়েছিলেন।

‘নিজের সামর্থের মধ্যে যতটুকু সম্ভব আজীবন শিশুদের জন্য কাজ করে যাবো।”

১৯২৯ সালের ৪ মে বেলজিয়ামে জন্ম দেওয়া অড্রে হেপবার্নের শৈশব কেটেছে বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডে।

নেদারল্যান্ডে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের ক্ষত খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি; সেই থেকেই তিনি মানবহৈতষী কর্মকাণ্ডে আরও বেশি আত্মনিয়োগ করেন হেপবার্ন।

ক্যান্সারে আক্রান্ত এ অভিনেত্রী ১৯৯৩ সালে ২০ জানুয়ারি ৬৩ বছর বয়সে মারা গেছেন।