নব্বইয়ের সংগীতের স্বাদ নিয়ে ‘ট্রাইয়্যাড’

তিনজনের সংগীতের প্রোজেক্ট ‘ট্রাইয়্যাড’, শ্রোতাদের দেবে নব্বই দশকের ব্যান্ড সংগীতের স্বাদ।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2021, 12:53 PM
Updated : 24 Jan 2021, 12:55 PM

বলা হয় থাকে নব্বই দশক বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের জন্য সোনালি বছর। সেই সময়ের গানের মধ্যে যে নতুনত্ব শুরু হয়েছিল তা থেকে এখন বিবর্তন হয়ে নানান আকার ধারণ করেছে। তারপরও অনেকেই এখনও নব্বইয়ের স্বাদ খোঁজেন গানের মাঝে।

আর সেই ধারার মধ্যে থেকেই কাজ করছে ‘ট্রাইয়্যাড’। আর হবেই না কোনো, কারণ এই উদ্যোগের উদ্যোক্তা ফয়েজ আব্দুল্লাহ সেই ১৯৯২ সালে দিকে গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ড ‘দি চেইঞ্জ’। পরপর কয়েক বছর সেই ব্যান্ড নিয়ে বিভিন্ন কনসার্টে অংশগ্রহণ করা হলেও নিজেদের কোনো অ্যালবাম আর বের করা হয়নি। ছাত্র জীবন পার করে ব্যান্ডের সদস্যারা হারিয়ে যায় কর্মক্ষেত্রের জোয়াড়ে।

সেই সময়ে ব্যান্ডের লাইনআপ ছিল- কণ্ঠ: চঞ্চল, ড্রামস: ফাহিম, কোবোর্ড: ফয়েজ, লিড গিটার: ছুট্টি ও বেজ গিটার: ওমর। ব্যান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন এই সময়ের অতি পরিচিত মুখ সুমন পাটওয়ারী।

বাস্তবতার বেড়াজালে ব্যান্ড ভেঙে গেলেও সেই সময়ে কয়েকটি গান তৈরি করা হয়েছিল। এত বছর পর তাই ফয়েজ ভাবলেন, এতদিন তো পেটের দায়ে ছুটেছি এবার না হয় মনের খোরাকটা মেটানো যাক।

সেই ভাবনা থেকেই  কাজ শুরু করলেন ফয়েজ।

তার কথায়, “২০১৯ সালের শুরুর দিকে সুমন পাটওয়ারীকে ধরলাম; ভালো একজন মিউজিক অ্যারেঞ্জারের খোঁজ দিতে হবে। সুমন খোঁজ দিল শাইখ সালেকিনের। সে বাংলাদেশের সংগীত জগতের বেশ পরিচিত নাম। গীতিকার, সুরকার, গায়ক এবং গিটারিস্ট। কাজ করেছেন ‘অস্তিত্ব’, ‘লালন’ এবং তার নিজের ব্যান্ড ‘টুয়েল্ভ এএম’য়ে। এছাড়াও তার রয়েছে একক অ্যালবাম।”

“সালেকিনের সঙ্গে আলাপ করে প্রথম গানটা শেয়ার করলাম। তিনি কাজ শুরু করে দিলেন সলিমুল্লাহ রোডে শফিকুজ্জামান শাওনের ‘এস অ্যান্ড আর স্টুডিও’তে। শাওন একাধারে গিটারিস্ট, গীতিকার, গায়ক এবং শব্দ প্রকৌশলী। তিনি ‘উল্লাস’সহ আরও কয়েকটি ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন। শব্দ প্রকৌশলের ওপর চেন্নাইতে কোর্স করেছেন। মিউজিক প্রোডাকশনের ওপর ডিপ্লোমাও করেছেন।”

যাহোক, সংগীত আয়োজনের কাজ এগিয়ে চললো। এ সময় চিন্তা হল কণ্ঠ দেবে কে? সালেকিনের পরামর্শে কয়েকজনের গান শুনে একজনের কণ্ঠ পছন্দ হয় তাদের। কারণ যে ধরনের গান করা হচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই হবে এই গলা। তার নাম সুমন কুমার।

ফয়েজ বলেন, “পরিচিত হওয়ার পর গানের সুর বুঝিয়ে দিলাম। তারপর একদিন নিয়ে নিলাম ভোকাল টেক। এরপর কিবোর্ড প্লে করলাম। সালেকিন বাজাল গিটার। সবশেষে শাওন করলেন মিক্সিং ও মাস্টারিং। অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে শুনলাম আমাদের প্রথম গান। দীর্ঘ বিশ বছরের স্বপ্ন পেল পূর্ণতা।”

“এরপর ভাবলাম, কী নাম দেওয়া যায় এই প্রজেক্টের। প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো ব্যান্ড নয়, যেহেতু লাইন আপ নির্দিষ্ট ছিল না। গানের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন গায়ক নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। অনেক ভেবে চিন্তে নাম দিলাম ‘ট্রাইয়্যাড’ (TRIAD)। সংগীতে তিনটি মিউজিক্যাল নোটের কর্ড’কে একত্রে ‘ট্রাইয়্যাড’ বলে। আবার যেহেতু এই প্রজেক্টের পেছনে মূলত তিনজন কাজ করেছি (ফয়েজ, সালেকিন ও শাওন), তাই এই নামই যথাযথ মনে হয়েছে।”

তাদের ট্যাগলাইন হল ‘ব্যাক ইন টাইম’। যেহেতু শ্রোতাদের তারা নিয়ে যাচ্ছেন সেই ৯০ দশকে। ‘ট্রাইয়্যাড’য়ের ব্যানারে প্রথম গান ‘জানিনা’ মুক্তি পায় ২০১৯ সালের ১৫ মে।

এরপর কর্পোরেট চাকরির পাশাপাশি একের পর এক গানের কাজ চলতে থাকে। ২২ মাসের পথচলায় মুক্তি পায় ৮টি গান। ২০১৯ সালে ৩টি, ২০২০ সালে ৫টি। আর সবগুলো গান সমন্বয় করে গত ডিসেম্বরে মুক্তি পায় ‘ট্রাইয়্যাড’য়ের প্রথম অ্যালবাম ‘বিস্মৃত’।

৮টি গানের মধ্যে ৫টি গানের (জানিনা, প্রেরণা, বিস্মৃত, ইচ্ছে, স্বপ্ন) সংগীত আয়োজন করেছেন সালেকিন। ‘ভোর’য়ের সংগীত আয়োজন করেছেন গোলাম রাব্বি সোহাগ (মাকসুদ ও ঢাকা)। আর বাকি দুটি গান ‘আকাঙ্ক্ষা’ এবং ‘আমি যাই’য়ের সংগীত আয়োজন করেছেন ফয়েজ আব্দুল্লাহ।

প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে লকডাউনের সময় বেশিরভাগ কাজই ঘরে বসে করা হয়েছে।

ফয়েজের কথায়, “আমি যাই’ এবং করোনার এই ক্রান্তিকাল নিয়ে গান ‘ভোর’ শতভাগ বাসায় বসেই সম্পন্ন করা হয়েছে।”

‘আকাঙ্ক্ষা’ ও ‘আমি যাই’য়ের রচয়িতা-সুরকার ‘অগোচরে’ ব্যান্ডের মানিক জসিম। তিনি এই গান দুটিতে কণ্ঠও দিয়েছেন। এই গানেই লিড/রিদম গিটার বাজিয়েছে ফয়েজের আরেক বন্ধু পিংকু হক।

ফয়েজ বলেন, “এই দুই গানের জন্য ‘ট্রাইয়্যাড’ অগোচরে ব্যান্ডের কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ।”

প্রতিটি গানেই বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে সুরের প্রতি। সংগীত আয়োজনেও রাখা হয়েছে ৯০ দশকের ছাপ। এই ৮টি গানের মধ্যে ৫টি গান এরমধ্যেই জি-সিরিজের ব্যানারে জি-সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে। বাকি গানগুলোও মুক্তির অপেক্ষায়।

ফয়েজ জানান, এর পাশাপাশি দ্বিতীয় অ্যালবামের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।

যারা কাজ করেছেন:

কথা: ফয়েজ আব্দুল্লাহ, আল ফারাবী, মানিক জসিম (অগোচরে)।

সুর: ফয়েজ আব্দুল্লাহ, মানিক জসিম।

ভোকাল: সুমন কুমার, মুত্তাকী হাসিব (রঙ), শাওন গানওয়ালা, চঞ্চল মাহমুদ, মানিক জসিম।

গিটার: শাইখ সালেকিন, মাসুম ওয়াহিদুর রহমান (দলছুট), পিংকু হক(অগোচরে)।

কিবোর্ড: ফয়েজ আব্দুল্লাহ।

সংগীত আয়োজন, মিক্স ও মাস্টারঃ শাইখ সালেকিন, ফয়েজ আব্দুল্লাহ, গোলাম রাব্বি সোহাগ (মাকসুদ ও ঢাকা), শফিকুজ্জামান শাওন।