সিনেমায় যুদ্ধজয়ের গল্প

করোনাভাইরাসের এই সময়ে আশা-নিরাশায় ক্লান্ত সবাই। অদেখা শত্রুর সঙ্গে চলছে এক অবিরাম যুদ্ধ। এই অঘোষিত যুদ্ধে মনোবল ফিরে পেতে তানবীরা তালুকদার এবার লিখেছেন এমন কিছু সিনেমা নিয়ে যাতে আছে জয়-আশা আর সুন্দর দিনের কথা।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2020, 06:14 AM
Updated : 6 June 2020, 07:25 AM

দ্যা মার্শেন (২০১৫)

এটি অবশ্য এন্ডি উইয়ারের সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস অবলম্বনে, পরিচালক রিডলি স্কটের ছবি। অভিনয় করেছেন ম্যাট ড্যামোন। মার্স অর্থাৎ মঙ্গলগ্রহে অভিযান চলার সময় ঝড়ের মধ্যে পড়ে নভচারী-বিজ্ঞানীরা। তাদের মধ্যে একজন মার্ক ওয়াটনি। ঝড় এড়িয়ে মঙ্গলগ্রহ থেকে বেরিয়ে আসতে নভযানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন ওয়াটনি। বায়োমনিটর অচল থাকায় তার সহকর্মীরা তাকে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায়। তারপর শুরু হয় ওয়াটনির একা একা বেঁচে থাকার গল্প, চাষাবাদ করে সে মঙ্গলগ্রহে। পরে তার সহকর্মীরা যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। অন্যরকম সিনেমাপ্রেমীদের জন্য লোভনীয় সিনেমা।

হানড্রেড টোয়েন্টি সেভেন আওয়ার্স (২০১০)

সত্যি ঘটনা অবলম্বনে বৃটিশ পরিচালক ড্যানি বোয়েল বানিয়েছেন এই ছবি। ২০০৪ সালে র‍্যাস্টোন এর স্মৃতিকথা ‘বিটুইন আ রক অ্যান্ড আ হার্ড প্লেস’ ও তিনিই লিখেছিলেন সিমোন ব্যাফুই এর সঙ্গে। সেরা অভিনেতা আর সেরা ছবি-সহ ছয়টি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে এই ছবি। ২০০৩ সালে পর্বাতোরোহী অ্যারোন র‍্যাস্টোন ক্যানিয়নের ন্যাশনাল পার্কে ঘুরতে যায়। স্লট ক্যানিয়নের ভেতর দিয়ে ব্লুজোন ক্যানিয়নে ওঠার সময়, পিছলে পড়ে যেয়ে, আটকে যায় সেখানে। পাঁচ দিনে সে কি অবস্থায় ছিল নিজের ভিডিও রেকর্ডার দিয়ে রেকর্ড করে রাখে। সাহায্য পাওয়ার কোনো আশা ছিল না বলে নিজের হাত বারবার কেটে বের হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন এই পাঁচদিন। অবশেষে হাত কাটতে সফল হয় বের হয়ে আসেন। সাত মাইল হাঁটার পর অন্যদের সঙ্গে দেখা হয় যারা হেলিকপ্টার ডেকে তাকে চিকিৎসার জন্যে পাঠায়। অ্যারোনের চরিত্রে অভিনয় করেছে জেমস ফ্র্যাঙ্কো।

অ্যালাইভ (১৯৯৩)

১৯৭৪ সালে পিয়ার পল রিডের লেখা আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘দ্যা স্টোরি অফ দ্যা অ্যান্ডেস সারভাইভর্স’ এর ওপরে তৈরি করা এই সিনেমা। ফ্র্যাঙ্ক মার্শালের পরিচালনায় এই সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে, ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার পার্সেল মাউনটেন্সে। স্টেলা মারিস কলেজের ‘ওল্ড ক্রিশ্চিয়ান রাগবি টিম’ ১৯৭২ সালের অক্টোবরের ১৩ তারিখ উরুগুয়ে এয়ারফোর্সের ৫৭১ ফ্লাইটে অ্যান্ডেসের ওপর দিয়ে চিলিতে ম্যাচ খেলতে যাচ্ছিলো। মেঘের কারণে পাহাড় দেখতে পায়নি পাইলট, পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে প্লেনের পাখা আর লেজ আলাদা হয়ে ভেঙে চূড়ায় পড়ে যায়। ছয় জন তখনই মারা যায় আর কেউ কেউ ধীরে ধীরে মারা যায়। উদ্ধারকারী প্লেন তাদের খুঁজে পায়নি। খাবার দাবার শেষ হয়ে এলে তারা তাদের সঙ্গীদের মৃতদেহগুলো যেগুলো পাহাড়ে বরফ চাপা দেয়া ছিল, সেগুলো তুলে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারও অনেকদিন পর সিদ্ধান্ত নেয় তিনজন পাহাড় থেকে হাঁটতে হাঁটতে শহরের দিকে যাওয়ার। শহরে যেয়ে যোগাযোগ করে প্লেন নিয়ে এসে বাকি সাথীদের রক্ষা করে। এ ঘটনার বিশ বছর পর, বেঁচে যাওয়া মানুষদের সাক্ষাৎকার নিয়ে আলাদা একটা প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি দেওয়া হয়, যেটার নাম ‘অ্যালাইভ, টোয়েন্টি ইয়ারস লেইটার।’

 কন-টিকি (২০১২)

ইয়োশিম রোনিং আর এসপেন স্যান্ডবার্গের পরিচালনায় ১৯৪৭ সালের কন-টিকি অভিযানের ওপর এই সিনেমা। নরওয়ের সে সময়ের সবচেয়ে ব্যয় বহুল সিনেমা ছিল এটি। প্রথম নওরোজিয়ানের কোনো সিনেমা যেটি গোল্ডেন গ্লোব এবং অস্কারের জন্যে মনোনয়ন পায়। নওরোজিয়ান অভিযাত্রী থর হেয়ারডাল ১৯৪৭ সালে কাঠের তৈরি ভেলা আর পাঁচ জন সঙ্গী নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়। তিনি প্রমাণ করতে চাইছিলেন, প্রি-কলোম্বিয়ান টাইমে দক্ষিণ এমেরিকান মানুষেরা, প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে পলিনেশিয়ান দ্বীপে হয়ত বসতি গড়েছিলেন। ধার আর ডোনেশানের টাকায় সমুদ্র যাত্রার মূলধন যোগাড় করে তারা আট হাজার কিলোমিটারের স্মরণীয় একশো একদিন পার করে সেখানে পৌঁছান। থরের পরিবার মোটেই এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। প্রচণ্ড ঝড় ঝঞ্ঝাময় আবহাওয়া, উত্তাল সমুদ্রের ঘূর্নণ, হিংস্র তিমিকে পাশে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, সত্যিই অভাবনীয়। কন-টিকি’র পরেও থর তার অভিযান থামান-নি। তিনি আরও অনেক সমুদ্র অভিযান চালিয়ে যান।

কাস্ট অ্যাওয়ে (২০০০)

একটি অনুসন্ধান, মানুষের বেঁচে থাকার এবং ভাগ্যের সক্ষমতার এমনকি একটি বড় ঘটনার সঙ্গে জীবনের সজ্জাও পরিবর্তন করতে পারে, চাক নোলানের কাস্ট অ্যাওয়ে এমনই এক গল্প বলে। চাক, ফেডেক্স এর ইঞ্জিনিয়ার যে তার জীবনের প্রায় পুরোটাই খরচা করেছে ট্রাবলশ্যুটিং এর কাজে। কেলিকে সে অসম্ভব ভালোবাসে কিন্তু কাজ পাগল চাক তাকে সেভাবে সময় দিতে পারে না। কিন্তু এক ক্রিসমাস ইভে বড় একটা অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে চলে যাওয়ার প্রাক্কালে চাক তাকে বিয়ের জন্যে প্রপোজ করে। সেদিনই প্লেন দুর্ঘটনায় চাককে তার ভাগ্য নিয়ে ফেলে এক দ্বীপে। তার দ্রুতগতির জীবনটি, কোনো মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া খুব আস্তে আস্তে চলতে শুরু করলো। চাক বেঁচে ফিরেছিলো, উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে একা, নিজের হাতে বানানো ভেলাটি ছিলো তার সম্বল। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৪২৯ মিলিয়ন ডলার আয় করে টম হ্যাঙ্কস অভিনীত এই সিনেমা। এ ছাড়াও ৭৩তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডেসের জন্যে টম হ্যাঙ্কস মনোনীত হন।