’জল’ থেকে জোছনা হওয়ার কাব্য- তাজিন আহমেদ

টেলিভিশন মিডিয়ার জনপ্রিয় মুখ তাজিন আহমেদের চলে যাবার আজ দুই বছর। তার প্রাণ খোলা হাসি এবং অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি ছিলেন দর্শকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2020, 02:46 PM
Updated : 22 May 2020, 02:46 PM

আজ তাকে স্মরণ করে লিখলেন সমালোচক আরাফাত শান্ত, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের গ্লিটজের পাঠকদের জন্য।

অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের কথা আজ অনেকের মনে এলো। মৃত্যুবার্ষিকী বলেই হয়তো। তাঁর অকালে চলে যাওয়াটা খুবই অবাক হবার মতো ব্যাপার। একা উত্তরার এক বাসায় থাকতেন। যে কেয়ারটেকার মেকআপ আর্টিস্ট ছিল সেই উনাকে হাসপাতালেও নিয়ে যান। পাশে ছিল না কোনো স্বজন অথবা বন্ধু। চলে যাওয়ার খবর পেয়ে সবাই ছুটে আসে। নাট্যঙ্গনের লোকজনদের সহায়তায় এই গুণী শিল্পীর শেষ বিদায়ের আয়োজন হয়।

এই শোবিজ মিডিয়া বড় নিষ্ঠুর। একটু কাজ কমিয়ে দিলে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে দর্শক শ্রোতা কেউই মনে রাখেনা। আড়ালে কেউ চলে গেলে তাঁকে আরো আড়াল করাই যেন নিয়তি৷ অথচ দিলার জলি ও কামাল আহমেদের ঘরে জন্ম নিয়েছিল এক উজ্জল কন্যা, নাম রাখা হলো- 'জল'। বড় হয়ে এই মেয়েটাই হয়ে উঠলো প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী। জলের মতই স্বচ্ছ এক মানুষ ছিলেন তাজিন আহমেদ। চিন্তা চেতনা, অভিনয়, কথা বলা, বন্ধুত্ব  সবকিছুতেই তিনি স্বচ্ছ। তাঁর অভিনয়ের প্রধান শক্তি ছিল ন্যাচারাল স্বতঃস্ফূর্ততা।

১৯৯৬ সালে দিলারা জলির লেখা ও শেখ নিয়ামত আলীর পরিচালিত নাটকেই তাঁর  যাত্রা শুরু অভিনয়ে। তারপর ১৫ বছর তিনি কাজ করেছেন অবিরাম। টানা অনেক বছর এনটিভিতে উপস্থাপনা করেছেন, টিফিনের ফাঁকে। স্কুলের বাচ্চাদের বিভিন্ন কথায় মৃদু একটা হাসি দিতেন। কি যে মিস্টি সেই হাসি। ডজন খানেকের উপর  নাটক লিখেছেন তিনি। একটা দৈনিকের সাংবাদিক ছিলেন। গণসংযোগ কর্মকর্তার হিসাবেও কাজ করেছেন। থিয়েটারেও ছিলেন সিরিয়াস সংগঠক। একজন পুরোদস্তুর নাট্যব্যক্তিত্ব হতে যা যা করা দরকার সব কিছুই করেছেন।

তবে দর্শক মনে রাখবে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদকেই। একটা সময় বিটিভির সাপ্তাহিক নাটক মানেই তাজিন আহমেদ। শামস সুমন, টনি ডায়েস, মীর সাব্বির, নাজিম জয়, জাহিদ হাসানদের সাথে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। তার হাসির মতোই সাবলীল ছিল তার অভিনয়। ২০১০ সালের পর থেকে অভিনয় কমিয়ে ফেলেন। তাও তখন এক বেসরকারি রেডিওতে কথা বন্ধু হিসাবে ছিলেন, টুকটাক উপস্থাপনা করতেন। ব্যাক্তিগত জীবনে টানাপোড়েন ও তাঁর মায়ের হুট করে এক মামলায় জেলে যাবার পর থেকে নিজেকে আরো সরিয়ে নেন। একাকী থাকার কারণেই হয়তো একদিন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই চলে যান।

 চলে গেলেও তিনি আমাদের মাঝেই থাকবেন জোৎস্না হয়ে। শামস সুমনের সাথে তাঁর একটা একক নাটকের ডায়লগ মনে পড়লো আজ, 'মনে রেখেছি বলেই মনে থাকবে।' তাজিন আহমেদকে আমরাও মনে রাখবো।