এ সময়ের কিছু ক্লাসিক সিনেমার গল্প

সিনেমাপ্রেমী তানবীরা তালুকদার নিজের মত করে ছবির গল্প, চরিত্র এবং চিত্রনাট্যকে বিশ্লেষণ করতে ভালোবাসেন। গ্লিটজের পাঠকতের জন্য তাই এবার করলেন তিনটি সিনেমার বিশ্লেষণ - নিজ বয়ানে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2020, 04:24 PM
Updated : 12 May 2020, 04:24 PM

মহালয়া (২০১৯)

উনিশো একত্রিশ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা শাখা আকাশবাণী মহিষাসুরমর্দিনী নিয়ে একটি গীতি স্ত্রোত্র আলেখ্য তৈরি করে। রচনা করেছিলেন বাণীকুমার, গ্রন্থনা ও শ্লোকপাঠে ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সঙ্গীত রচনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। দেড়ঘণ্টার এই চণ্ডীপাঠের অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হওয়ার পরে তা এত খানিই জনপ্রিয় হয় যে দুর্গাপুজোর আগে পিতৃপক্ষের অবসানের শেষ দিনে অর্থাৎ মহালয়ার দিনে এখনও সেই স্ত্রোত্রপাঠ না শুনলে বাঙালির পুজো শুরু হয়না। কিন্তু একবারই উনিশো ছিয়াত্তর সালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের ওই আলেখ্য না সম্প্রচার করে নতুন একটি আলেক্ষ্য সম্প্রচারিত করে। এই নতুন আলেক্ষ্যয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বদলে স্ত্রোত্র পাঠ করেন মহানায়ক উত্তম কুমার। উত্তম কুমার প্রথমে খুবই দ্বিধায় ছিলেন এই নিয়ে, তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বাড়ি যেয়ে অনুমতিও নিয়ে আসেন। কিন্তু তা সম্প্রচারিত হওয়ার পরেই মানুষ মেনে নিতে পারেননি। আকাশবাণীর কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। আকাশবাণী বাধ্য হয়ে আবার ষষ্ঠীর দিনে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচার করে। পঙ্কজ মল্লিকের সঙ্গে কি লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়? এই বিষয়টিই নিজের প্রথম বাংলা সিনেমায় তুলে ধরছেন সৌমিক সেন। উত্তম কুমারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যীশু সেনগুপ্ত। আরও আছেন, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এই সিনেমার প্রযোজক। বেতারের জগতে বোধহয় এমন ঘটনা আজ অব্ধি কখনও ঘটেনি।

জ্যেষ্ঠপুত্র (২০১৯)

এ সময়ের কিছু ধ্রুপদী সিনেমার পরিচালকের নাম করতে গেলে অনিবার্য ভাবে উঠে আসবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, গার্গী রায়চৌধুরি, দামিনী রায়ের অভিনয়ে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব নিয়ে বলা চলে এই সিনেমা।  বলা হয়ে থাকে প্রসেনজিতের মাতৃবিয়োগের ঘটনা থেকেই ঋতুপর্ণ এই সিনেমার কথা ভেবেছিলেন। জ্যেষ্ঠপুত্র বাংলা চলচিত্রের এক নামকরা নায়ক। যাকে দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) ও ভালোমত চেনেন। তার গ্রামের বাড়িতে থাকে ছোটো ভাই আর তার স্ত্রী, ও পাগল বোন। বাবা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে নায়ক জ্যেষ্ঠপুত্র শুটিং প্যাক-আপ করে বাড়িতে আসে। কিন্তু রাত কাটায় কাছে ডালমিয়াদের বাংলোয়। হাসিমুখে সামলান সুপারস্টার হওয়ার বিড়ম্বনা। পরিচালক মুল যে ভাবনা ভেবেছেন তা হল দুই ভাইয়ের ব্যক্তিত্বের লড়াই। ছোটো নাটক করে, বড় ভাই সিনেমায় অভিনয়। সিনেমা এবং নাটকের ফারাক দেখিয়ে সাধারণের দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন কৌশিক। ছোটো মনে করে দাদার চেয়ে সে অনেক বড় অভিনেতা কিন্তু নাম হয় না। দাদাকে হিংসে করে ও শেষ পর্যন্ত দাদাকে হারাতে চায়। সবাই অসাধারণ অভিনয় করেছেন। সাদা কাপড় জড়িয়ে সুদীপ্তার নাচের দৃশ্যে চোখ জল আসবে।

এক যে ছিলো রাজা (২০১৮)

 বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত ভাওয়াল রাজবাড়ির রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ রায়ের জীবন, জীবনাবসান ও তার প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে তৈরী এই সিনেমা। উত্তম কুমার অভিনীত ‘সন্ন্যাসী রাজা’ এবং হাল আমলের জনপ্রিয় টেলিসিরিয়াল হয়ে যাওয়ার পরও এত চেনা গল্পকে যে সৃজিত নিজের মতো করে বলতে চেষ্টা করেছেন, সেটা নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য। সৃজিতের এই সিনেমায় যীশুকে যেভাবে দেখা গিয়েছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। যীশুর পোশাক, মেক আপ এবং অভিনয় এক কথায় উৎকৃষ্ট। ছবি জুড়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি জয়া আহসানের। মেজ কুমারের বোনের চরিত্রে জয়ার অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়া ছোট চরিত্রে শ্রীনন্দা শঙ্করের অভিনয়ও বেশ ভাল। কোর্টের সওয়াল-জবাব থেকে উঠে আশা অতীত খুঁড়তে খুঁড়তে এগোয় কাহিনি। অঞ্জন দত্ত আর অপর্ণা সেনের চরিত্র দুটো মেলোড্রামাটিক তবে সে কথা পরিচালক স্ক্রিনে লিখে দিয়েছিলেন, কাহিনীর স্বার্থে যদিও আমার মনে হয় না কোন দরকার ছিলো, বরং না থাকলেই আরও ভাল হতো। চলচ্চিত্রটির বেশিরভাগ শুটিং হয় মুর্শিদাবাদের কাঠগোলাতে। ছবিটি ভারতের ৬৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে বাংলা ভাষাতে সেরা কাহিনী-চিত্রের ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জেতে। নিঃসন্দেহে এটি সৃজিতের জীবনের একটি সেরা কাজ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘এ প্রিন্সলি ইম্পস্টার”কে ভিত্তি করে যদিও এ কাহিনী এগিয়েছে তবে বলা যায়, চিত্রনাট্য এমনি তৈরী হয় নি, সৃজিত এর জন্যে যথেষ্ঠ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন।