চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অতিতাভ বচ্চনকে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তা হচ্ছে না; বাংলাদেশ কিংবা কলকাতার কোনো অভিনেতাকে নিয়েই বাংলা ভাষায় ছবিটি নির্মাণ করতে চান গাফফার চৌধুরী।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানালেন ছবির আদ্যোপান্ত।
প্রায় ১৫ বছর ধরে চলচ্চিত্র আটকে আছে কেন?
২০০৫ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি নাটক করার পরিকল্পনা করেছিলাম; পরে ফিল্মের স্কিপ্ট লিখলাম। স্ক্রিপ্টটি বাংলায় লেখার পর সবাই বলল, ইংরেজিতে করলে ভালো হবে। ছবির নাম ‘দ্য পয়েট অব পলেটিক্স’ দিয়েছেন লন্ডনের এক সাংবাদিক।
তখন ঢাকায় কিছু কিছু শিল্পপতির সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। আব্দুল আওয়াল মিন্টু, ড. ইকবাল, চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। তারা টাকা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেটা আর বাস্তবায়িত হয়। আমার পক্ষেও এতগুলো টাকা যোগাড় করা সম্ভব ছিল না।
সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা চেয়েছিলেন?
সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে চেয়েছিলাম। পরিচিত মন্ত্রী ও সেক্রেটারিদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলাম কিন্তু তারা খুব একটা উৎসাহ দেখাননি। এর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘দুর্গম পথের যাত্রী’ করার সময়ও সরকার বা আওয়ামীলগের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি।
আমার ব্যক্তিগত টাকায় নয়, ডোনেশনের টাকায় সেগুলো করেছিলাম। তারপর দেখলাম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে সরকার খুব একটা আগ্রহী নয়।
প্রযোজনায় পাশাপাশি ছবির চিত্রনাট্যের কাজও আপনি করেছেন; চিত্রনাট্য কোন পর্যায়ে আছে এখন?
স্ক্রিপ্টটা তখনই পুরোটা লেখা হয়েছিল। সিনেমাটি করার আশা এখনও ছাড়িনি। আমি এখন পঙ্গু হয়ে গেছি। হাঁটাচলা করতে পারি না; হুইলচেয়ারে চলাফেলা করি।
বঙ্গবন্ধুর উপর সরকার একটি ছবির উদ্যোগ নিয়েছেন; সেটা ভালো হবে বলেই আশা করছি। শ্যাম বেনেগালের মতো পরিচালক এটি পরিচালনা করছেন বলে জেনেছি; তবে আমি তার পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক করাটাকে খুব একটা সংগত বলে মনে করি না।
কী কারণে?
তিনি খুবই ভালো পরিচালক; সেগুলো সাধারণ চলচ্চিত্রের জন্য। কিন্তু বায়োপিক করা তার পক্ষে সহজ হবে বলে মনে হবে না। কারণ সুভাষ বসুকে নিয়ে তার নির্মিত ‘বোস-দ্যা ফরগোটেন হিরো’ চলচ্চিত্রটি দেখে আমি হতাশ হয়েছি।
চলচ্চিত্রে বিপ্লবী সুভাষ বসুর চেয়ে প্রেমিক সুভাষ বসুকেই বড় করে দেখানো হয়েছে। সুভাষ বসুর মতো বলিষ্ট চরিত্রের লোককে চলচ্চিত্রে পুরোপুরি তুলে আনতে পারেননি। আর বঙ্গবন্ধু তো বাঙালী; শ্যাম বেনেগাল বাঙালী নন। বাংলাদেশের কাদামাটি থেকে বঙ্গবন্ধু যেভাবে অসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন-সেটা ফুটিয়ে তুলতে পারবে কি না-আমি ঠিক জানি না।
তবে আমার আশা আছে, শেখ হাসিনা খুবই দক্ষ ব্যক্তি। তিনি বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনমচা’ খুব ভালোভাবে করেছেন। উনি তত্ত্বাবধানে থাকলে হয়তো ছবিটা ভালো হবে কিন্তু আমি খুব একটা আশা করি না।
বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে লেজার লাইটের নামে যা দেখানো হলো সেটি অসম্ভব হাস্যকর অনুষ্ঠান ছিল। কার মাথা থেকে এটি বেরিয়েছে-সেটা আমি জানি না। এটা কী এরা দেখেনি নাকি? বঙ্গবন্ধুর ওই সময়ের গাম্ভীর্য ও গুরুত্ব নষ্ট করেছে। এই জন্যই বঙ্গবন্ধুর ছবি করার ব্যাপারে আমলাদের হাত থাকলে খুব ভালো হবে বলে মনে হয় না।
আপনি বলছিলেন, আপনার ছবিটি নিয়ে এখনও আশা দেখছেন; কবে নাগাদ কাজ শুরু করতে পারবেন?
বেঁচে থাকলে সামনে বছর ছবির কাজ শেষ করব। ছবিটি পরিচালনা করবেন গৌতম ঘোষ; এখন আর অমিতাভ বচ্চনকে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বঙ্গবন্ধু করার মতো একজনকে বেছে নিতে হবে। আর বাকি চরিত্রগুলো বাংলাদেশ থেকেই নেবো।
কলকাতায় উনার বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে হাসান ইমামও ছিলেন; উনি এখনও খুবই আগ্রহী। উনি এখনও ফোন করে বলেন, চিত্রনাট্যটি আমাকে দেন; কলকাতায় ছবিটি করবো। এখন আমার ইচ্ছা ইংরেজিতে আর যাবো না; সরকার ইংরেজিতে একটি ছবি করছে, করুক। আমার ছবিটা বাংলায় করবো। এটি সামনের বছরই শুরু করবো।
অর্থের সংস্থানের কীভাবে করছেন?
খুব বেশি টাকা লাগবে না; প্রাথমিক বাজেট ধরেছি ১০ কোটি টাকার মতো। ব্র্যাকের স্যার ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল; উনি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উনি তো মারা গেলেন। পরবর্তীতে ওদের সঙ্গে কথাও হয়েছে।
পাশাপাশি আমার ব্যবসায়ী বন্ধুদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই বছরই ছবির কাজটা শুরুর পরিকল্পনা ছিল। মাঝে আমার ঢাকা যাওয়ার কথা কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য ঢাকায় যেতে পারলাম না; সবকিছু গুছিয়ে সামনের বছর অবশ্যই সিনেমার কাজ শুরু করবো।