‘ইয়াশ আসলে পরিচালক হতে চায়’- শিল্পী সরকার অপু (ভিডিওসহ)

নাট্য ব্যক্তিত্ব নরেশ ভুঁইয়া এবং শিল্পী সরকার অপুর ছেলে ইয়াশ রোহান এখন মিডিয়ার পরিচিত মুখ। নানা রকমের চরিত্রে অভিনয় করে ক্যারিয়ারের পথ ক্রমেই করে চলেছেন রঙিন। মা-ছেলের এই জুটিকে গ্লিটজ পেয়ে গেল একেবারে মুখোমুখি। হলো, অল্প-স্বল্প- গল্প।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2019, 06:09 AM
Updated : 11 Oct 2019, 06:23 AM

কথায় আছে, মায়েদের আসল প্রেম নাকী নিজের সন্তান। কারণ ছোটবেলা থেকেই মা আর ছেলেদের মধ্যে যে রসায়ন থাকে তার তুলনা কোনও প্রেমের সঙ্গে হয় না। একারণেই হয়তো ইয়াশ রোহানের ব্যাপারে মা শিল্পী সরকার অপু একটু কোমল, অনেক আবেগী, ভিষণ আশাবাদী! আবার তিনি সন্তানকে আগলে রাখা বটগাছের মতই মায়াময়ী।

মা ছেলের চমৎকার এ রসায়ন বোঝা গেল আলাপের শুরুতেই।

বললেন, “ইয়াশ আমার দিলীপ কুমার!” যদিও এটা শুনেই রোহানের মাথা একেবারে বুকের কাছে নেমে আসে। তবুও মায়ের কাছে ছেলে তো হিরো হবেই!

অবশ্য দিলীপ কুমার বলার কারণও আছে। তখন ইয়াশ মাত্র ছোট্ট। ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা দিলীপ কুমার ঢাকায়। শিল্পী সরকার অপুও গেলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু নৈশভোঁজের আগেই ফিরলেন বাড়ি। কারণ বাসায় তার অপেক্ষা করছেন ছোট্ট দিলীপ কুমার। যিনি আজ স্রোতের কালে ভেসে আজ নিজেও সিনেমার পথের পথিক।

মা আর ছেলের সঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রায়ই থমকে যেতে হয়। কারণ ইয়াশ দেখতে হুবুহু মায়ের মতন! কিন্তু মা নিজেকে বেশি ছোট পর্দায় বা মঞ্চে ব্যস্ত রাখলেও ছেলে ইয়াশ কিন্তু আগেই বড় পর্দাতে নিজের অভিষেক ঘটিয়েছেন। আজকালকার হিসাব অনুযায়ী এখনও তারকা ইয়াশ। কিন্তু মা কি চান? তারকা নাকী অভিনেতা। এবার মা ঠিক ঠিক তার চাওয়ার কথা বললেন, “অবশ্যই অভিনেতা হিসেবে দেখতে চাই। ভালো অভিনয় করে তারকা হওয়ার যে আনন্দ- সে তো শুধু ‘তারকা তকমা’র মাঝে পাওয়া যায় না!”

ইয়াশও ভালো কাজই করতে চান। এজন্য গল্পটাই তার কাছে মুখ্য। গল্প পড়ে যদি ভালো লাগে তবেই তিনি সেই কাজটি করেন। আর এ গল্প বাছাইটা নিজেই করেন। ইয়াশের মাও জানালেন যে ছেলে তার যথেষ্ঠ বুঝদার। তাই নিজের কাজের লাগামও যেমন সে ধরতে পারে- তেমনইভাবে পারে নিজেকের মুক্ত করে উড়তে।

অভিনয়ে জগতে ইয়াশের মা এবং বাবার পরিচিতি এবং অভিজ্ঞতা যেখানে চল্লিশ দশকেরও বেশি, সেখানে ইয়াশ রোহানের উপর ভালো কাজ বাছাইয়ের চাপ তো থাকেই। ইয়াশ অবশ্য এই বিষয়টিকে শুধুই চাপ বলতে নারাজ।

ইয়াশ বলেন, “গুনি পরিবারে জন্ম নেওয়া একই সাথে আশীর্বাদও বটে। কারণ তারাই আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষক। তবে তাদের সঙ্গে তুলনা করা এখনই অবান্তর। তাদের অভিজ্ঞতার যে বয়স, সেই বয়সই আমার হয়নি।”

এ পর্যন্ত বলেই ফিক করে হাসলেন ইয়াশ। তবুও বাসার এই ‘স্কুল’কে নিজের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া হিসেবে মনে করেন ইয়াশ। বলেন, “এখনি হয়তো মায়ের মত অভিনয় করতে পারবো না। কিন্তু স্কুল যেহেতু বাসাতেই – ছাত্রর ফলাফল ভালো হবেই।”

অপু অবশ্য ছেলের অভিনয় নিয়ে এখনই বেশ উৎফুল্ল। মা এবং ছেলে একটি নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। অন্ধ সেই ছেলের চরিত্রে। সেই অভিনয় মা’কে ভিষণ স্পর্শ করেন। তিনি জানান, “ছেলের অভিনয় দেখে আমাকের আর অভিনয় করে কাঁদতে হয়নি। এমনি কান্না পেয়েছে। তারমানে ইয়াশের অভিনয়ে সেই শক্তি আছে।”

যদিও ছোটবেলা থেকে ইয়াশের ইচ্ছা অভিনয়ের দিকে ছিলনা। বাবার সঙ্গে কয়েকটা কাজ করলেই মা শিল্পী সরকার অপু নিজের থেকে ইয়াশকে বাইরের কাজ করতে দিতে চাইতেন না। সেখানে ইয়াশ রোহান বড় পর্দায় ব্যস্তই বটে। তবে মা ফাঁস করলেন ইয়াশের সুপ্ত চাওয়াটা। ইয়াশ আসলে পরিচালক হতে চান। ইচ্ছা তো আছেই। প্রস্তুতিও আছে। তবে সেই প্রশ্নে ইয়াশ শুধু রহস্যের হাসিটাই উত্তর হিসেবে উপহার দিলেন।

শিল্পী সরকার অপু এবং ইয়াশ রোহানের সঙ্গে এই আলাপ ছোট্ট হলেও কাজের ক্ষেত্রে তাদের দুজনেরেই পথ বেশ দির্ঘ। মাকে এখনও দর্শক ভালোবাসেন ‘এইসব দিনরাত্রীর’ শাহানা হিসেবে। আবার ‘বিউটি অ্যান্ড দ্যা বুলেট’র মতন সাড়া জাগানো ওয়েব সিরিজেও শিল্পী সরকার অপু এখন ব্যস্ত। ওদিকে স্বপ্নজাল সিনেমার পর মায়াবতী দিয়ে বড়পর্দায় আশার আলো জ্বালানো ইয়াশের ‘মাসুদ রানা’ হয়ে পর্দায় আসারও একটা গুঞ্জন উঠেছিল। সব মিলিয়ে বয়সে ইয়াশ তরুণ হলেও কাজে পরিপক্ক হচ্ছেন বেশ দ্রুত গতির সঙ্গে। আর তার এই যাত্রার পথে অবশ্যই মা শিল্পী সরকার অপুর ভালোবাসার ছায়া আছে সর্বক্ষণ। কারণ বেলাশেষে, সব পরিচয়ের উর্ধ্বে মা হিসেবে ইয়াশকে তিনি ‘ভালো মানুষ’ হিসেবেই দেখতে চান। বাকীটা যোগ্যতা দিয়ে ইয়াশ করে নেবেন বলেই তার বিশ্বাস।