শহীদুল্লা কায়সারের পরিবারের প্রতিবাদ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের বক্তব্য 

শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ নিয়ে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছে তার বড় ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের পরিবার।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2019, 04:58 AM
Updated : 20 Sept 2019, 04:58 AM

শহীদুল্লা কায়সারের ছেলে অমিতাভ কায়সার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বারিধারার এক বিঘা এবং গুলশানের তিন বিঘার যে জমি নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেই সম্পত্তির মালিক ছিলেন তার বাবা।

অমিতাভের ভাষায়, জহির রায়হানের পরিবার এখন সম্পত্তি দখলের অভিযোগ করছেন শহীদুল্লা কায়সারের পরিবারকে ‘ছোটো করার জন্য’ ।

চাচা, ফুফুরাও এখন ‘লোভের বশে’ ওই সম্পত্তিতে ‘ভাগ বসাতে চাইছেন’ বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন অমিতাভ।

জহির রায়হানের ছেলে বিপুল রায়হান ও নাতনী ভাষা রায়হানের অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘জহির রায়হানের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ শহীদুল্লা কায়সারের পরিবারের বিরুদ্ধে’।

ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে অমিতাভ কায়সারের পাঠানো বিবৃতি অবিকৃতভাবে প্রকাশ করা হল-

সম্প্রতি বিডি নিউজ ২৪ এ প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবি শহীদুল্লাহ কায়সার এর পরিবার কতৃক, জহীর রায়হানের সম্পত্তি দখল খবরটির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি, আমি অমিতাভ কায়সার, শহীদ বুদ্ধিজীবি শহীদুল্লাহ কায়সারের পুত্র।

১। শহীদুল্লাহ কায়সার, গুলশানের ১ বিঘা জমিটি, ১৯৭১ সালের জুন মাসে তৎকালিন Dhaka Improvement Trust (DIT)এর মাধ্যমে, জনাবা ফাতেমা রিজওয়ানির কাছ থেকে কিনে নেন। এ সন্ক্রান্ত যাবতিয় দলিলাদি আমার কাছে আছে।

২। আমার ছোট চাচা, জনাব সাইফুল্লাহ বলেছেন যে উনি অনেক দৌড়াদৌড়ী করেছেন জমিটি চার ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করার জন্য। যেহেতু জমিটি আমার বাবার ও তার পুত্র সন্তান বিদ্যমান, আমার মা ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে DIT থেকে আমার ও আমার বোনের নামে জমিটি Mutation করেন। এ সন্ক্রান্ত যাবতিয় দলিলাদি ও মহামান্য হাই কোর্টের এফিডেভিট আমার কাছে আছে। আমার জ্ঞানত, আমার কোনো চাচা, ফুফু অথবা আমার কোনো চাচাত ফুফাত ভাই বা বোন আমার সাথে কখনো এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। অথচ আজ এতকাল পরে এসে তারা শুধুমাত্র লোভের বশবতি হয়ে এই সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে চাচ্ছে। আমার মা ৭৯ সালে, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অনেক কষ্ট করে একটি দ্বিতল ভবন নির্মান করেন।

৩। আমার ছোট ফুফু বলেছেন, সমস্ত পরিবারটি চলতো জহীর রায়হানের আয়ে। অথচ এই পরিবারে শহীদুল্লাহ কায়সার ছিলেন সবচেয়ে স্বচ্ছল। তিনি ছিলেন এই পরিবারের বটবৃক্ষ, সবার মাথার উপর ছায়া। এই সময়ের মধ্যে তাঁর দুটো বই বিখ্যাত হয়েছে (সারেং বউ, সংশপ্তক) এবং তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন। তিনি ছিলেন তৎকালিন বিখ্যাত সংবাদপত্র দৈনিক সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তান প্রেস ক্লাবের সভাপতি। তারপরও আমার ভাবতে কষ্ট হয় যে, ছোট বোন হয়ে বড় ভাইয়ের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধাবোধও তিনি দেখালেন না।

৪। শহীদুল্লাহ কায়সার ৩ বার লম্বা সময় জেলে থেকেছেন। তৎকালিন সরকারের জন্য তিনি ছিলেন হুমকিস্বরুপ। অন্য আরো অনেকর মতো তিনি ভারতে চলে যাননি। দেশে থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার। আজ যে কথাগুলো জহীর রায়হান তনয় বিপুল রায়হান এবং তার মেয়ে ভাষা বলছে, তা শুধুমাত্র শহীদুল্লাহ কায়সারের নামটিতে দাগ লাগানোর জন্য এবং তার পরিবারকে ছোট করার জন্য । ভাষা আরো অভিযোগ করেছে আড়ং এর পেছনের জমি নিয়ে। এই জমিটিও আমার বাবার। আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম কাগজপত্রগুলো বের করার জন্য। কিন্তু সেটা আর হয়নি। পরবর্তীতে, হাতীরঝীল প্রকল্পের জন্য সরকার এই জমিটি অধিগ্রহন করে। এর বিনিময়ে আমরা সরকার থেকে কখনোই কোনো কিছু দাবী করিনি বা নেইনি। আসল ঘটনা না যেনে ভাষার এ বিষয়ে কোনো কথা বলা বোকামির নামান্তর।

প্রতিবেদকের বক্তব্য

জহির রায়হানের নাতনী ভাষা রায়হান সম্প্রতি ফেইসবুকে অভিযোগ করেন, গুলশানের বারিধারার এক বিঘা জমি এবং গুলশান আড়ংয়ের পেছনের তিন বিঘা জমি তার দাদার টাকায় কেনা হলেও শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার, মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার ও ছেলে অমিতাভ কায়সার সেই সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন।

ভাষার বাবা বিপুল রায়হানও পরে এক ফেইসবুক পেস্টে মেয়ের অভিযোগে সমর্থন জানান। 

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের ওই অভিযোগ আলোচনার জন্ম দেওয়ার পর ভাষার কাছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে চেয়েছিল, এতদিন পর কেন তারা এই অভিযোগ নিয়ে সামনে আসছেন।

উত্তরে ভাষা বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করলেও অন্যপক্ষ ‘এড়িয়ে গেছেন’। তাই ‘বাধ্য হয়ে’ এখন তারা অভিযোগ তুলছেন।

তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

তার আগে শহীদুল্লা-জহিরের বোন শাহেনশাহ বেগম এবং ভাই সাইফুল্লাহর সঙ্গেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কথা বলেছে এবং তাদের বক্তব্য ওই প্রতিবেদনে ছিল।

তাদের দুজনই বলেছেন, ওই জমি কেনা হয়েছিল জহির রায়হানের টাকায়। পরে শহীদুল্লা কায়সারে দুই সন্তান শমী কায়সার ও অমিতাভ কায়সারের নামে ওই জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন তাদের মা পান্না কায়সার।

সংবাদ মাধ্যমের চর্চিত নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার আগে শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে শমী কায়সারের সঙ্গেও অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। অভিযোগ অস্বীকার করে শমী কায়সারের দেওয়া বক্তব্য ওই প্রতিবেদনেই আছে।