এলআরবি’র ভবিষ্যত কী?

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর ‘এলআরবি’তে দুই-তিনে বিভক্তির পর ব্যান্ডটির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2019, 07:23 PM
Updated : 24 June 2019, 07:23 PM

ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে বেজিস্ট সাঈদুল হাসান স্বপন ও বর্তমান সদস্য ড্রামার রোমেল এক গ্রুপে ‘এলআরবি’র ব্যানারে পারফর্ম করছেন। অপর গ্রুপে আছেন বর্তমান সদস্য গিটারিস্ট আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ভোকাল বালাম ও ম্যানেজার শামীম আহমেদ। বিভক্তির পর থেকেই কথার লড়াই চলছে তাদের মধ্যে; একজন আরেকজনের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ছেন।

একপক্ষ জানিয়েছেন, অপর পক্ষের সঙ্গে কোনোভাবেই মঞ্চে পারফর্ম করবেন না। ফলে সংগীতাঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে, ২৮ বছরের পুরোনো ‘এলআরবি’র ভবিষ্যত কী?

বিষয়টি নিয়ে দলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এলআরবির ভবিষ্যত হচ্ছে আপাতত আমি আর রোমেল। পেশাদারভাবে কাজ করতেই থাকব।”

এলআরবির বর্তমান লাইনআপের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্য স্বপন ‘এলআরবি’র প্রতিষ্ঠার সময় থেকে গত ২৮ বছর ধরে যুক্ত আছেন। ১৯৯১ সালে ব্যান্ডটি তাকে নিয়েই প্রতিষ্ঠা করেন আইয়ুব বাচ্চু। তাদের সঙ্গে ছিলেন হাবিব আনোয়ার জয় (ড্রামস), এস আই টুটুল (কিবোর্ড)।

ব্যক্তিগত কারণে জয় ও টুটুল বেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে আইয়ুব বাচ্চু ও স্বপন নতুন সদস্যদের নিয়ে পরিচালনা করেন ব্যান্ডটি। গত বছরের ১৮ অক্টোবর হঠাৎ আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর ব্যান্ডটি খেই হারায়। নেতৃত্বশূন্য ‘এলআরবি’র সুসংগঠিত করতে একাধিক উদ্যোগ নিলেও অপর গ্রুপের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে নিজেই ব্যান্ডের কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনার কথা জানালেন স্বপন।

তিনি বলেন, “এলআরবির ফাউন্ডার মেম্বার বাচ্চু ভাই আর আমি। বাচ্চু ভাই তো নাই। বাকিরাও রিজাইন দিয়েছেন। বাচ্চু ভাইয়ের অবর্তমানে ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে ডেফিনেটলি এলআরবি আমারই করার কথা। বাচ্চু ভাইও তো সেটাই বলে গেছে। আমি সবাইকে নিয়েই কাজ করছিলাম কিন্তু কেউ যদি কাজের আগ্রহ না দেখায় তাহলে ‘একলা চলো রে’ রীতিতে চলতে হবে। বাচ্চু ভাইও এটাই বলে গেছেন।”

নতুন সদস্যদের নিয়ে ব্যান্ডটি পরিচালনার কথাও জানালেন তিনি।

তিনি ছাড়া ব্যান্ডের বর্তমান বাকি চার সদস্যদের মধ্যে ২০০৩ সালে এসআই টুটুল এলআরবি ছাড়ার পরে যোগ দেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, রোমেলও আসেন একই বছরে। ম্যানেজার শামীমও প্রায়ই কাছাকাছি সময়েই যুক্ত ব্যান্ডের সঙ্গে। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর সবশেষ সদস্য হিসেবে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল ‘এলআরবি’তে যুক্ত হন বালাম।

বিষয়টি নিয়ে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার সাড়া মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজার শামীম আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনাদের বিপরীতে আরেকটা ‘এলআরবি’ করব সেটা তো হতে পারে না। এলআরবি একটাই হবে এবং একটাই হওয়া উচিত। উনারা যদি মনে করেন, উনারাই এলআরবি ভালো করবেন তাহলে সবার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিক।

“…আমাদের যদি বাদ দিয়েও করতে চান সেটাও কথাবার্তার মাধ্যমেই করতে হবে। জিনিসটার সুন্দরভাবে সমাপ্তি টানতে হবে এবং যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে। আমাদের যদি কোনো দোষ-ত্রুটি হয় তাহলে আমরা বলবো আপনারাই করেন।…”

সোলস থেকে বেরিয়ে ১৯৯১ সালে ব্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেন আইয়ুব বাচ্চু। শুরুতে নাম ছাড়াই কনসার্টে পারফর্ম শুরু করে ব্যান্ডটি। পরে এক কনসার্টের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ব্যান্ডটির নাম দেন, ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’। বছর খানেকের মাথায় ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’র বেশ নাম-ডাক হলো। দেশের বাইরে বিদেশ থেকেও আমন্ত্রণ পেতে শুরু করলো ব্যান্ডটি। ১৯৯২ সালে দেশের বাইরে একটি কনসার্টে অংশ নিতে জানলেন, ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যান্ড। পরে সেই নাম বদলে করা হলো- ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।

প্রথমবারের মতো ‘এলআরবি’ ছাড়েন জয়; ১৯৯৩ সালে লন্ডনে থিতু হন তিনি। তার জায়গায় যোগ দেন মিল্টন আকবর। বছর খানেক বাজিয়ে মিল্টন আকবরও লন্ডনে গেলে ড্রামসে আসেন চট্টগ্রামের তরুণ রিয়াদ। এর মাঝে বেশ কয়েকটি অ্যালবাম প্রকাশ হয়। এর মধ্য আছে সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের (১৯৯৮), বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০১)।

২০০৩ সালের দিকে ‘ব্যক্তিগত কারণে’ ব্যান্ড ছাড়েন রিয়াদ ও এসআই টুটুল। কিবোর্ডিস্ট টুটুল যাওয়ার পর এখন অব্দি আর কোনো কিবোর্ডিস্ট নেওয়া হয়নি এলআরবিতে। স্বপন জানান, আইয়ুব বাচ্চুর ভাবনা ছিল, মেটালিকা কিবোর্ড ছাড়াই এগিয়ে যেতে পারলে এলআরবিও পারবে। মাঝে অতিথি সদস্য হিসেবে আরিফ শিশির ও সুমন পারফর্ম করেছেন।

২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হঠাৎ দলনেতা আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর খেই হারায় ‘এলআরবি’। বেশ কিছুদিন কোনো শো’তে দেখা যায়নি ব্যান্ডটিকে। মাঝে আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে তাজওয়ার আইয়ুব বাবার গিটার কাঁধে মঞ্চে উঠে এলআরবি ভক্তদের মনে আশার আলো জাগালেও তার বেশিদিন টেকেনি। তাজওয়ার বিদেশে পাড়ি জমানোর পর চলতি বছরের ৫ এপ্রিল ভোকাল হিসেবে অন্তভূক্ত হন সংগীতশিল্পী বালাম। এতে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের তরফ থেকে শুরুতে আপত্তি এলেও পরে তারা জানান, আইয়ুব বাচ্চুর গান যে কেউ গাইতে পারবেন। তবে পরে আর  ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি ব্যান্ডটি।