‘ভুল’ ছিল, ক্ষমা চাইলেন ফেরদৌস

ভারতে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ায় ভিসা বাতিলের দণ্ডে ভক্তদের প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার মুখে ক্ষমা চাইলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2019, 02:52 PM
Updated : 17 April 2019, 03:02 PM

ঢাকায় ফিরে আসার পর বুধবার আত্মপক্ষ সমর্থনে গ্লিটজকে পাঠানো এক লিখিত বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আবেগের বশে’ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে তার অংশ নেওয়াটা ‘ভুল’ ছিল বলে এখন বুঝতে পারছেন তিনি।

কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ফাঁকে ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির রোষের মুখে পড়েন বাংলাদেশের এই অভিনেতা।

ওই কাজের জন্য এখন ক্ষমা চেয়ে ফেরদৌস বলেন, “আমি স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে অন্য একটি দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ কোনভাবেই উচিত নয়।

“আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সকলে আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”

ফেরদৌসের পূর্ণ বক্তব্য

আমি চিত্রনায়ক ফেরদৌস। অভিনয় শিল্প আমার একমাত্র নেশা ও পেশা। অভিনয় শিল্পের মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী সকলের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরিতে সর্বদা কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার ভাবতে ভাল লাগে আমি দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয়। দুই বঙ্গের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনাচারে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। আবার ভারত বহু কৃষ্টি-কালচারের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ একটি দেশ। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতের অবদান আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। পাশাপাশি ভারতের জনগণের ত্যাগ-তিতিক্ষা আমাদের চিরঋণী করে রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে আমার সম্পর্ক বহুদিনের। এখানের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক আমার বন্ধু। যাদের সাথে আমি সবসময়ে হৃদ্যতা অনুভব করি। এজন্য বিভিন্ন সময় কারণে অকারণে আমি এখানে চলে আসি।

ভারতে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের এই নির্বাচন পূর্বের মতো সাড়া বিশ্বে সাড়া ফেলেছে। এই সময়ে আমি ভারতে অবস্থান করছিলাম। সকলের মতো আমারও আগ্রহের জায়াগায় ছিল এই নির্বাচন। ফলে ভাবাবাগে তাড়িত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের একটি নির্বাচনী প্রচারণায় আমি আমার সহকর্মীদের সাথে অংশগ্রহণ করি। এটা পূর্বপরিকল্পনার কোন অংশ ছিল না। শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে আমি অংশগ্রহণ করেছি। কারো প্রতি বিশেষ আনুগত্য প্রদর্শন বা কোন বিশেষ দলের প্রচারণার লক্ষ্যে নয়, আবার কারো প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করাও আমার উদ্দেশ্য নয়। ভারতের সকল রাজনৈতিক দল এবং নেতার প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। আমি ভারতের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

আমি আগেও বলেছি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা অগাধ। সেই ভালোবাসা আমাকে আবেগ তাড়িত করেছে। আমি বুঝতে পেরেছি, আবেগের বশবর্তী হয়ে সহকর্মীদের সাথে এই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করাটা আমার ভুল ছিল। যেটা থেকে অনেক ভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং অনেকে ভুলভাবে নিয়েছেন। আমি স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে অন্য একটি দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ কোনভাবেই উচিত নয়। আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সকলে আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

গত রোববার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন ফেরদৌস।

ভোটের প্রচারের সরঞ্জামে সজ্জিত একটি হুডখোলা গাড়িতে ফেরদৌসের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে তার পাশে কলকাতার দুই অভিনয়শিল্পী পায়েল সরকার ও অঙ্কুশকেও দেখা যায়।

বিদেশি শিল্পীর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আপত্তি তুলে সোমবার নির্বাচন কর্মকর্তা আরিজ আফতাবের কাছে যান বিজেপি নেতা জয় প্রকাশ মজুমদার ও শিশির বাজোরিয়া।

অভিযোগ আমলে নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেরদৌসের ভিসা বাতিল করে এ অভিনেতাকে দেশ ছাড়ার নির্দেশের পাশাপাশি তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।

ফলে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে ফেরদৌসকে।