ওই দুই ব্যক্তি হলেন ওয়েড রবসন (৩৬) এবং জেমস সেফচাক (৪০)।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তারা বলেন, সাত ও ১০ বছর বয়স থেকে মাইকেল জ্যাকসন তাদের শতাধিকবার যৌন নিপীড়ন করেছেন।
মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নতুন নয়, যা নিয়ে সম্প্রতি ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে।
ওই তথ্যচিত্রে এক সময় দুনিয়া মাতানো একই শিল্পীকে ‘শিশু যৌন নিপীড়নকারী’ হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে জানায় বিবিসি।
আগামী সপ্তাহে তথ্যচিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, মাইকেল পরিবার শুরু থেকে ওই তথ্যচিত্র ‘কুরুচিপূর্ণ’ এবং এই তারকার নাম ব্যবহার করে জনপ্রিয়তা পাওয়ার ‘অপচেষ্টা’ বলে বর্ণনা করেছে।
ওই তথ্যচিত্রে রবসন এবং সেফচাকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
বিবিসিকে রবসন বলেন, মাইকেল জ্যাকসন তাকে সাত বছর বয়স থেকে যৌন নিপীড়ন করেন এবং ১৪ বছর বয়সে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন।
সেফচাক বলেন, তার ১০ বছর থেকে শুরু করে প্রায় ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত মাইকেল জ্যাকসন তাকে যৌন নিপীড়ন করেন।
শত শত বার যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন দাবি করে রবসন বিবিসিকে আরো বলেন, “আমি সবসময় তার সঙ্গে থাকতাম। সবসময় রাতে আমি তার সঙ্গে থাকতাম। তিনি আমাকে নিপীড়ন করতেন।
“তিনি আমার সারা শরীর স্পর্শ করতেন এবং তার যৌনকর্ম দেখতে বাধ্য করতেন। যখন আমার বয়স ১৪ বছর তখন তিনি আমাকে ধর্ষণের চেষ্টাও করেছিলেন।”
ভালোবাসার নামে এবং ভয় দেখিয়ে মাইকেল জ্যাকসন তাকে যৌন নিপীড়ন করতেন দাবি করে রবসন বলেন, “তিনি আমার মনে এই বিশ্বাস জাগাতে চেয়েছিলেন যে, আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি এবং আমরা এভাবেই নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি।
“তার পরপরই তিনি বলতেন, ‘তবে আমরা যেটা করছি সেটা যদি অন্য কেউ জেনে যায় তাহলে তোমাকে এবং আমাকে আজীবনের জন্য কারাগারে যেতে হবে এবং আমাদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে’। ওই সবকিছুই আমাকে আতঙ্কিত করে তোলে।
“তিনি আমাকে বলতেন, আমি তার সেরা বন্ধু এবং একমাত্র ব্যক্তি যার সঙ্গে তিনি যৌনকর্ম করেন। তখন আমি ভাবতাম….বিশ্বের সব বালকদের মধ্যে আমি সেই একজন, যাকে তিনি বেছে নিয়েছেন।”
অন্যদিকে বিবিসিকে সেফচাক বলেন, তার ১০ বছর বয়স থেকে মাইকেল জ্যাকসন তাকে যৌনকর্ম শেখাতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, “সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলোর প্রক্রিয়া চলে। মাইকেল এক সময় আপনার পরিবারের মধ্যে ঢুকে পড়বেন এবং নিজেকে পরিবারের অংশ বানিয়ে ফেলবেন।
“তিনি সময় নিয়ে বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করেন। এটা রাতারাতি হয় না। তারপর তিনি আপনার এবং আপনার পিতা-মাতার মধ্যে আড়াল তৈরি করেন এবং অন্য সবার থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।”
মাইকেল জ্যাকসনকে ‘মাস্টার ম্যানিপুলেটর’ হিসেবে বর্ণনা করে সেফচাক আরো বলেন, “যখন আপনি নিপীড়নের শিকার হওয়া শুরু করেন, একই সঙ্গে আপনার একটি অংশ মরে যেতে শুরু করে।
“তিনি আমার এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে ওই আড়াল ধরে রেখেছিলেন। যেটা আমাকে বারবার নিপীড়ন করা সহজ করে দিয়েছিল।”
‘লিভিং নেভারল্যান্ড’র প্রদর্শনী নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে মাইকেল জ্যাকসনের ভাই টিটো, মারলন, জ্যাকি এবং ভাতিজা তাজ জ্যাকসন তথ্যচিত্রের দাবি অস্বীকার করেছেন।
তাজ বলেন, তার চাচার আচরণ মাঝেমধ্যে অভদ্র মনে হলেও তিনি আসলে ‘খুবই নিষ্পাপ’ ছিলেন।
“তার সারল্যই তার দূর্বলতা ছিল।”
মারলন বলেন, যারা তার বিরুদ্ধে শিশু যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছে তাদের হাতে দাবির পক্ষে ‘একটি প্রমাণও নেই’।
মাইকেল জ্যাকজন এস্টেটের পক্ষ থেকে বলা হয়, রবসন বা সেফচাক কেউই তাদের অভিযোগের পক্ষে আলাদা আলাদা ভাবে কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। যে কারণে এর আগে তারা এ ধরনে অভিযোগ আর না করার শপথ নিয়েছিলেন। যা তারা ভঙ্গ করেছেন। অর্থাৎ, তথ্যচিত্রটি সম্পূর্ণরূপে দুই শপথভঙ্গকারীর কথার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে।
মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগে ২০০৯ সালের ২৫ জুন কোটি ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মাইকেল জ্যাকসন।