শনিবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা জানান। এ সময় প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের দুই পুত্র আকাশ হোসেন ও মেঘদূত হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার হোসেনের কনিষ্ঠ ভ্রাতা আলি হোসেন বাবু, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও আনোয়ার হোসেনের বাল্যবন্ধু হাশেম সূফী, চলচ্চিত্রকার রাজীবুল হোসেন, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলায়াত হোসেন মামুন, আইনজীবি সুরাইয়া সুমি ও তরুণ চলচ্চিত্রকার অদ্রি হৃদয়েশ প্রমুখ।
আনোয়ার হোসেনের বাল্যবন্ধু ও বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সংসদকর্মী হাশেম সূফী বলেন, “আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের একজন মহানশিল্পী ছিলেন। তার সকল কাজকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। এটা আমাদের নৈতিক ও জাতীয় দায়িত্ব। যে ফাউন্ডেশনটি আজ গঠিত হতে যাচ্ছে তা অবশ্যই খুব জরুরি উদ্যোগ। এই ফাউন্ডেশনের আপাতত প্রধান কাজ হবে আনোয়ার হোসেনের বিগত ৫০ বছরের সকল আলোকচিত্র, লেখা, তাঁর প্রকাশিত বই, তাঁর সাক্ষাৎকারসমূহ উদ্ধার ও সংরক্ষণ করা। এসব খুব দ্রুত করতে হবে। কারণ আনোয়ার হোসেনের আলোকচিত্র কেবলমাত্র শৈল্পিক কারণেই সংরক্ষণ করতে হবে তা নয়। আনোয়ার হোসেনের আমাদের জাতির ইতিহাসের উপাদান রেখে গেছেন তাঁর আলোকচিত্রে। এসব যদি হারিয়ে যায় তবে আমাদের জাতির ইতিহাস হারিয়ে যাবে। তাই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অতি দ্রুত রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব উদ্ধার করা উচিত বলে আমি মনে করি।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আনোয়ার হোসেন ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি থাকবেন আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মরিয়াম হোসেন, তাঁর দুই পুত্র আকাশ হোসেন ও মেঘদূত হোসেন। এই ফাউন্ডেশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন আনোয়ার হোসেনের কনিষ্ঠ ভ্রাতা আলি হোসেন বাবু এবং অন্যান্য ট্রাস্টিগণের মধ্যে থাকবেন নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী, চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম, সিনেমাটোগ্রাফার রাশেদ জামান, চলচ্চিত্রকার রাজীবুল হোসেন এবং ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলায়াত হোসেন মামুন।
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মিরিয়াম হোসেন এবং তাঁর দুই পুত্র আকাশ ও মেঘদূত ফ্রান্সের প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাদের পক্ষে নিয়মিত বাংলাদেশে এসে আনোয়ার হোসেনের সারাজীবনের সৃষ্টিকর্মগুলো সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব নয় বলেই মূলত এমন উদ্যোগ।
আনোয়ার হোসেনের কনিষ্ঠ পুত্র মেঘদূত হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমার বাবাকে আপনারা যেভাবে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাতে আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করুন যাতে আমরা আমাদের বাবার সকল সৃষ্টিকর্মগুলোকে একত্র করে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমাদের দূর্ভাগ্য যে আমরা আমাদের এই মহানশিল্পীকে এভাবে হারালাম। আনোয়ার ভাইয়ের সারাজীবনের সকল কাজ উদ্ধার, সংরক্ষণ এবং তা নিয়ে প্রদর্শনী বা উৎসব আয়োজনের দায়িত্ব তো আমাদের রাষ্ট্রীয় কাজ। এসব করাটা রাষ্ট্রের জন্যই দরকার। কারণ এই মানুষগুলোই তো এই রাষ্ট্র গঠনে শিল্পীত ভূমিকা রেখেছেন। আমরা চাই আনোয়ার হোসেন ফাউন্ডেশন দ্রুত তাঁর কার্যক্রম শুরু করুক এবং আমরা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই তাঁর সৃষ্টিসমূহ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে তৎপর রয়েছি।”
আনোয়ার হোসেনের ৫০ বছরের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও ৪০ বছরের চলচ্চিত্রজীবনের রেট্রোস্পেক্টিভ আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শিল্পকলা একাডেমী। আনোয়ার হোসেন ফাউন্ডেশন এ শিল্পীর সকল সৃষ্টিকর্মের কপিরাইট সংরক্ষণ করবে। এ ব্যাপারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও খুব দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান লিয়াকত আলী লাকি।