‘বালা নাচো তো দেখি’ গানে শুরু করে ভাবনা নৃত্যদল। পরপর তিনটি পরিবেশনায় তাদের দলীয় নৃত্যে পরিবেশিত হয় আদিবাসী ও রাঁয়বেশে নৃত্য। তাদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনার সাথে সাথে লোকসমাগমও বাড়তে শুরু করে অনেকটাই ফাঁকা আর্মি স্টেডিয়াম।
তাদের পরপরই মঞ্চে আসেন বাউল আবদুল হাই দেওয়ান। মাতাল কবি রাজ্জাক দেওয়ানের শিষ্য এই শিল্পী তার পরিবেশনা শুরু করেন ‘মাগো মা ঝি গো ঝি’, ‘রঙের বাড়ই’, ‘খুব চলেছে বেচাকেনা’, ‘তুমি কোন বা দেশে’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় লোকগান।
এরপরপরই তিনদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় মঞ্চে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা দক্ষিণের মেয়ার সাঈদ খোকন।
স্বাগত বক্তব্যে সান ফাউন্ডেশন ও সান কমিউনিকেশনস লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী বলেন, “লোকসংগীত আমাদের শেকড় ও অন্তরের সুরকে তুলে আনে। আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে হাজার বছর ধরে গভীরভাবে বহন করছে আমাদের সকলের প্রিয় এই লোকসংগীত। সান ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশে লোকসংগীতের শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা এবং শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মান ও রয়্যালটি নিশ্চিত করা। সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে গত তিন বছরের ন্যায় এবারও আপনাদের সকলের জন্য এই আয়োজন। সকলের অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতার মাধ্যমেই লোকসংগীতকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা সম্ভব তাই আসুন শেকড়ের টানে সবাই এক হয়ে যাই।”
উপস্থিত সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এম. পি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, “‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব’ প্রতি বছরই আমাদেরকে দেশী-বিদেশী নতুন নতুন শিল্পীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এটা আমাদের জন্য সান ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিশেষ প্রাপ্তি। লোকসংগীত- মানুষ, মাটি ও প্রকৃতির গভীর থেকে অন্তরের শুদ্ধ সুর তুলে আনে এবং এর চর্চা ও প্রসারের মধ্যদিয়েই আধুনিক ও উন্নত সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, “আমরা প্রতি বছরই অপেক্ষা করে থাকি এ উৎসবের জন্য। অনুষ্ঠানের তিনদিন আনন্দের সাথে সবাই শেকড়ের সুরে মিশে যাই। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক বাংলার লোকসংগীত।”
স্টেডিয়ামে তখন দর্শক-শ্রোতাদের ভীড় জমে উঠেছে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে গান পরিবেশন করেন ভারতের জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী সাত্যকি ব্যানার্জি ও প্রথম দিনের প্রধান আকর্ষণ ওয়াদালি ব্রাদার্স। দর্শক-শ্রোতাদের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণে প্রথম দিনের লোকসংগীত উৎসব যেন প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের লোকসংগীতের মেলবন্ধন হয়েই ধরা দিলো।
হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ও সংগীতা আহমেদের উপস্থাপনায় মঞ্চ থেকে জানানো হয়, নিরাপত্তার স্বার্থে এবার উৎসবস্থল থেকে একবার বের হলে আর প্রবেশ করার অনুমতি মিলছে না। রাত দশটার পরও কোন নিবন্ধিত দর্শক নতুন করে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শকরা। এছাড়াও নিরাপত্তার কারণে সঙ্গে কোনও ব্যাগ, ফোনের চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক বা হেডফোন নেওয়া যাবে না।
অনুষ্ঠানটির টেলিভিশন সম্প্রচারের দায়িত্বে রয়েছে মাছরাঙা টেলিভিশন। এ ছাড়াও গ্রামীণফোনের অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস-বায়োস্কোপ লাইভে থাকছে অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখার সুযোগ। এই উৎসবের আয়োজক সান ফাউন্ডেশন।