চিকিৎসকদের দৃষ্টিতে দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিই বেশি ছিল মনীষার।পাঁচ বছরের চিকিৎসায় সেই লড়াই জয় করে তিনি ফিরেছেন কোটি ভক্তের সামনে।
নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় বলিউডের অভিনেত্রী মনীষা শনিবার ঢাকা লিট ফেস্টের মঞ্চে এসে বললেন সেই যুদ্ধ জয়ের গল্প, জীবন-মৃত্যুর লড়াই থেকে জীবনের মূল্য উপলব্ধির কথা।
বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনে ‘হিলড ‘ শিরোনামের একটি সেশনে নিজের আত্মজীবনী ‘হিলড’ নিয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেন মনীষা।
২০১০ সালে নেপালের ব্যবসায়ী সম্রাট দাহালকে বিয়ে করেছিলেন মনীষা। দুই বছর পর ভেঙে যায় সংসার। সে সময়ই এক পরীক্ষায় ধরা পড়ে ক্যান্সার।
সে দিনের স্মৃতিচারণে মনীষা বলেন, “আমাকে বলা হল, আমার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৪৪ শতাংশ, কিন্তু এটাও সত্যি যে ৫৬ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। আমার মনে হল, মৃত্যু দূত যেন অপেক্ষায়।
“আমার আকাশ ভীষণ কালো হয়ে আসছিল। কিন্তু নিজেকে বললাম, আমাকে পারতে হবে। আমাকে বাঁচতে হবে। কেমোথেরাপির ধকল সামলাতে হবে। নিজেকে আশ্বস্ত করলাম, আমাকে এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”
“তবে কী? ক্যান্সার আমাকে ভীষণভাবে বদলে দিয়েছে, পাল্টে দিয়েছে একদম ভেতর থেকে।
মনীষা যখন তার জীবন যুদ্ধের গল্প বলেন, তখন বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনের দর্শক সারিতে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। নারীদের কেউকে কেউকে চোখও মুছতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, “আমার ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। কী যে এক কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে! আমি বিষণ্ণ ছিলাম, খুব অস্বস্তি লাগত, শারীরিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলাম।”
পরীক্ষায় মনীষার পাকস্থলী অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। ক্যান্সার লিড স্টেজে এসে ছড়িয়ে পড়ছিল সারা শরীরে।
মনীষা বলেন, “অনেক পরে আমাকে জানানো হল, আমার জরায়ুর ক্যান্সার এবং সেটা কেটে ফেলে দিতে হবে। এটা শোনার পর মনে হল, আমার জীবনের নিঃসঙ্গ রাত শুরু।
“আমার বন্ধু, পরিবার সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতে বসল কোথায় আমার অপারেশন করাবে। কেউ বলল যুক্তরাষ্ট্র, কেউ ব্যাংকক, কেউ বা মুম্বাই। তবে আমার জন্য কষ্টের সংবাদ ছিল, আমি আর কখনো মা হতে পারব না।”
মনীষা পরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতাল থেকে ক্যান্সারের চিকিৎসা নেন। মনীষার চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন, দুই বছর পর্যন্ত আবার ক্যান্স্যারের ঝুঁকি থাকে শতকরা ৯০ ভাগ।
তবে জীবনের এই কঠিন অভিজ্ঞতা থেকেও শিখেছেন জানিয়ে মনীষা বলেন, “জীবনের নানা ঘটনা আমাদের কত কিছু শিখিয়ে যায়! ক্যান্সারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সে আমাকে জীবনের মূল্য শিখিয়েছে।”
জীবনের প্রচণ্ড বাজে সময়ে কিছু মানুষের বন্ধুত্ব চাইলেও মনীষা তা পাননি বলে জানান এই সভায়।
“ভেবেছিলাম অনেকে এগিয়ে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে আমার জীবনে অনেকের দেখা পেয়েছি। তারা ছিল দেবদূত। আমি বলতে পারি, এখনও অনেক ভালো মানুষ আছে। জীবনে অনেক ইতিবাচক গল্প আছে।”
গত ৯ নভেম্বর সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘ব্রেকিং ব্যাড’ শিরোনামের সেশনে মনীষা শোনান তার অভিনয় জীবনের গল্প। এক আলাপচারিতায় উঠে আসে বলিউডি সিনেমা, বলিউডে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং যৌন নিগ্রহ নিয়ে তার নিজস্ব ভাবনার কথা।