১৫ মিনিটও হলের ভেতর থাকতে পারিনি: চম্পা

দীর্ঘ বিরতির পর আবারো চলচ্চিত্রে নিয়মিত হচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী গুলশান আরা চম্পা। রোববার সন্ধ্যায় গ্লিটজের মুখোমুখি হয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সংকট, প্রেক্ষাগৃহের দুরবস্থাসহ নানা বিষয়ে কথা বললেন তিনি।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2018, 03:35 PM
Updated : 7 Oct 2018, 05:31 PM

গ্লিটজ: মাঝে দীর্ঘদিন অভিনয়ের বাইরে ছিলেন। সম্প্রতি একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ফের নিয়মিত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। মাঝের বিরতির কারণ কী?

চম্পা: বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকতাম। মেয়ের বিয়ে, সন্তান হওয়ায় ওদের পেছনে সময় দিতাম। সেকারণেই একটু গ্যাপ ছিল।

আবার যদি বলি, আমি হয়তো ভালো কাজের সুযোগও পাইনি। এখনও যে ধরনের সিনেমা করছি সেগুলো নিয়ে খুব একটা তৃপ্ত নয়। মূলত দীর্ঘদিন ধরে গ্যাপ ছিল বলেই সিনেমাগুলো করছি।

আরো ভালো ভালো চরিত্র আসা উচিত বলে মনে করি। কারণ অভিজ্ঞতা ও সময়ের দাম আছে। ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইয়ের মতো বড় আর্টিস্ট, রুবেলের মতো সুপারহিট আর্টিস্ট, আলীরাজের মতো আর্টিস্টরা এখন কোথায়?

গ্লিটজ: ববিতার মতো আর্টিস্টরাও তো এখন অভিনয়ের বাইরে…

চম্পা: চিন্তা করেন। যদি বলি, শাবনূর, মৌসুমী, পূর্ণিমা-এরা কোথায়? ছবিতে এ ধরনের শিল্পীদের রাখা মানে অ্যাক্টিংয়ের দিক দিয়ে ছবিটা অনেক ভারী হওয়া। কিন্তু সমস্যা হল-আমরা ভালো অ্যাক্টিং চাই না, আমরা কাজের মান চাই না।

গ্লিটজ: এই মুহূর্তে আপনার হাতে সম্ভবত একাধিক চলচ্চিত্র আছে…

চম্পা: ইদ্রিস হায়দারের ‘নীল ফড়িং’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ করেছি। শোভা টেলিভিশনের ব্যানারে নতুন আরেকটি ছবি করব। এ মাসেই ছবিটার মহরত হওয়ার কথা।

ফায়ারের উপর ছবির গল্প, গল্পটা সুন্দর। এটি যে শুধু বিনোদনই দেবে তা নয়, শিক্ষামূলক বার্তাও থাকবে। শুধু বিনোদন নয়, এখন এমন ধরনের ছবি নির্মাণ করা উচিত যেগুলো দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে আমরা আমাদের ভুলগুলোকে সংশোধন করতে পারব।

কিছুদিন আগে কলকাতা থেকে ফিরেছি। খেয়াল করলাম, নাচ-গানের ছবি খুব একটা চলছে না ওখানে। ছবি নির্মাণ হলেও দর্শক হলে ভিড় করছে না। তার বিপরীতে অফট্রাকের চলচ্চিত্রের প্রচুর চাহিদা তৈরি হয়েছে।

গ্লিটজ: সেক্ষেত্রে আমাদের চলচ্চিত্রের সংকট কোথায় দেখছেন?

চম্পা: আমাদের সিনেমার গল্প একটা জায়গায় আটকে আছে। গল্পে পরিবর্তন আনা উচিত। তাহলেই আস্তে আস্তে দর্শকের ‍রুচিটা পরিবর্তন করতে পারব আমরা। গল্পগুলোতে বাস্তবের সঙ্গে মিলাতে পারব। আমরা এখনও অবাস্তবের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

প্রেম জিনিসটা তো চিরকালীন। কিন্তু প্রেমটাকে একটা জায়গায় কেন বেঁধে রেখেছি? টিনএজ মানেই প্রেম, অল্প বয়স মানেই প্রেম? প্রেম তো বয়স্ক লোকেরও হতে পারে। প্রেম তো ভাই-বোনেরও হতে পারে। ছোট বাচ্চাকে নিয়েও হতে পারে। প্রেমটাকে আমাদের গল্পে আটকে দিয়েছি। সেটা ভাঙলে সুন্দর ছবি হবে।

গ্লিটজ: কিন্তু অনেক নির্মাতার ভাষ্য, হাতে ভালো গল্প আছে কিন্তু যথোপযুক্ত প্রডিউসার মিলছে না।

চম্পা: নিশ্চয়ই। এটাও তো অনেক বড় ব্যাপার। আগের প্রডিউসাররা রিয়েল প্রডিউসার ছিলেন। তারা ফিল্মটাকে ভালোবাসতেন, ফিল্মটাকে অনেক উঁচু জায়গায় দেখতেন। উনাদের ভেতরে রাজকীয় ব্যাপার ছিল।

ভালো প্রডিউসার দেশে এখনও যে নেই-তা কিন্তু না। নানা চাপে চেপে গেছেন তারা। ভালো ডিরেক্টরও অনেক আছেন; সুযোগ পায় না। ভালো ভালো আর্টিস্ট অনেক আছেন কিন্তু তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হয় না।

গ্লিটজ: অথচ প্রতি সপ্তাহেই প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র মুক্তি পাচ্ছে। এখনকার চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

চম্পা: অ্যাকচুয়ালি বেশ কয়েকবছর ছবি দেখা হয়নি। এখনকার সিনেমাগুলো কেমন হয় সেটা দেখার জন্যই গত ঈদে শাকিব খান-বুবলির একটি সিনেমা দেখলাম। কোনো সিনেপ্লেক্সে না, সাধারণ হলে।

বিশ্বাস করবেন না, ১৫ মিনিটও হলের ভেতরে থাকতে পারিনি। এতো বাজে সাউন্ড, বাজে পিকচার! দু’চারজন মানুষ সিটে বসেছি, গরম লাগছে, সিটটাও আরামদায়ক না। এগুলো ঠিক করতে হবে।

ভালো সিনেমা বানালেও পচা হলে গিয়ে ছবিগুলো খারাপ হয়ে যায়। কয়জন এখন সিনেপ্লেক্সে গিয়ে সিনেমা দেখে? …সিনেপ্লেক্সের একটা টিকিটের দাম তিন’শ থেকে পাঁচ’শ টাকা। সাধারণ মানুষ তো নরমাল হলেই যাবেন। সেই হলের পরিস্থিতি যদি এমন হয় তাহলে মানুষ কিভাবে সিনেমা দেখবেন?

হলগুলো ঠিক করা ভীষণ প্রয়োজন। আমি মনে করি, হলগুলো সুন্দর হোক। আর সিনেমার গল্পে পরিবর্তন আসুক। আর যে অভিনয়শিল্পী যে ধরনের ক্যারেক্টারে মানায় তাকেই সেই ধরনের চরিত্রে নেওয়া উচিত।

গ্লিটজ: অনেকের অভিযোগ, এখনকার চলচ্চিত্রগুলো প্রধানত নায়ক-নায়িকা নির্ভর। বাবা-মা’র চরিত্র খুব কম দেখা মেলে সিনেমায়।

চম্পা: সব ছবিতেই বাবা-মা থাকতে হবে তাও না। আরো তো অনেক চরিত্রে হতে পারে। এখানে আমরা বসে থাকি। আর ইন্ডিয়াতে জুহি চাওলাকে দেখলাম, নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছে।

একটা ছবিতে দেখলাম, জুহি জ্যোতিষীর চরিত্রে কাজ করেছে। চরিত্রটা অপূর্ব। ওদের সুন্দর সুন্দর গল্প আছে। সেখান থেকে সুন্দর সুন্দর চরিত্রও বের হয়। ওরা আর্টিস্টদের ইউটুলাইজ করে। এই দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।

গ্লিটজ: আমাদের এই পিছিয়ে পড়ার প্রবণতাটা কবে নাগাদ শুরু হল বলে আপনার ধারণা?

চম্পা: আমি নিজেও অনেক বড় পলেটিক্সের শিকার হয়ে একসময় কোনঠাসা হয়ে ছিলাম। আমার গল্পগুলো হয়তো অনেকেই জানেন না। এনিওয়ে, ওই পর্যন্ত স্টোরি ঠিক ছিল।

পরে শাবনূর, মৌসুমীও ভালো ভালো ছবিতে কাজ করেছে। ওদের পর থেকে দেখছি যে, একটু যেন কী রকম!

গ্লিটজ: তাহলে শাবনূর-মৌসুমীর পর আর কোনো ভালো মানের অভিনয়শিল্পী পাইনি?

চম্পা: পেয়েছি। খুব ভালো অভিনেত্রী পেয়েছিলোম, অপু বিশ্বাসকে; খুব ভালো একটা অভিনেত্রী। আমরা মাহিকেও বোধহয় পেয়েছি; ও ভালো অভিনয় জানা মেয়ে।

কিন্তু শুধু অভিনয় জানলেই তো হবে না আমাদের ভালো ছবি দরকার, ভালো গল্প দরকার। ভালো ভালো আর্টিস্ট আছে আর বাদবাকিগুলো ঠিক নেই তাহলে কিভাবে হবে? একটা ছবি তো শুধু আর্টিস্ট দিয়ে হয় না।

এফডিসিতে সম্প্রতি কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি আশা করছি, পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে আমাদের চলচ্চিত্রের মান অনেক এগিয়ে যাবে।