সালমান শাহ’র জন্মদিনে বুধবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ সেন্টারে আয়োজিত মহরত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
জন্মদিনটিকে স্মরণ রাখতে চলচ্চিত্রটি সালমান শাহকে উৎসর্গের ঘোষণা দেয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নুজহাত ফিল্মস।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
একটি চলচ্চিত্রের মহরতকে ঘিরে এক মঞ্চে চারজন মন্ত্রী উপস্থিতি এর আগে খুব কমই দেখা গেছে। তবে তাদের এ উপস্থিতি ওবায়দুল কাদেরের জন্য নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের প্রতি ভালোবাসার টানেই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন বলে জানান তারানা হালিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, “বঙ্গোপসাগরের একটি ছোট্ট দ্বীপের কাহিনি নিয়ে নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্রটি। মানুষের ভালোবাসার কথা, চেতনার কথা উপন্যাসে আছে। পরিচালক কীভাবে ফুটিয়ে তুলবে সেটা উনার উপর নির্ভর করছেন। ..আশা করি দর্শকরা ভালোভাবে গ্রহণ করবেন।”
চিত্রনায়ক ফেরদৌসের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নুজহাত ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করছেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। এতে অভিনয় করছেন তিন বন্ধু- ফেরদৌস, পূর্ণিমা ও কলকাতার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা তারিক আনাম খান, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রনায়ক মান্নার স্ত্রী শেলি মান্না, অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতিসহ আরো অনেকে।
রাজনীতিবিদ পরিচয়ের বাইরে ওবায়দুল কাদেরকে একজন ‘সংস্কৃতিকর্মী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন হাসানুল হক ইনু।
রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সংস্কৃতিকর্মীদের তুলনামূলক পার্থক্য টেনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “...আমি বিনয়ের সঙ্গেই বলছি, রাজনৈতিক কর্মীরা বহু সময় ক্ষমতার পেছনে ছুটতে গিয়ে হোঁচট খায়। লোভ আর অর্থের পেছনে পা পিছলে ছিটকে যায়। রাজনৈতিক কর্মী আপোস করে এবং নীতিভ্রষ্ট হয়। কিন্তু আমার দেখায় সংস্কৃতিকর্মী কখনোই নীতিভ্রষ্ট হয় না।”
যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও আন্দোলনেও সংস্কৃতিকর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানান মন্ত্রী।
তার মতে, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যখন রাজাকারদের সবাই ভুলতে বসেছে তখন নাটক-সিনেমা দেখেই সচেতনতা ফিরেছে জনসাধারণদের মাঝে।
নির্মাতা, উপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের ‘বহুব্রীহি’ নাটকের উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, “সেই আশির দশকে নাটকে ‘তুই রাজাকার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তারপরই রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতিকর্মীদের ঘুম ভাঙে। এর পর থেকে ‘রাজাকার’ শব্দটা গালিতে পরিণত হয়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান হয়। পরবর্তীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।”
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তার বক্তব্যে ওবায়দুল কাদেরকে শুভেচ্ছা জানান।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, “অনুষ্ঠানে এসে ওবায়দুল কাদের সাহেবের আরেকটি প্রতিভা আমরা আবিস্কার করলাম; উনি একজন লেখকও বটে। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের মধ্যেই অনেক সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে আছে।... সংস্কৃতিকর্মী পরিচয়টি কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
তথ্য প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে সিনেমা হলগুলোকে ঢেলে সাজানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, ই-টিকেটিং ব্যবস্থার দিকে নজর দিচ্ছে সরকার ও পাইরেসি নিয়ে নতুন আইন করা হয়েছে।
অনুদানের ক্যাটাগরিতে শিশুতোষ, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের বাইরে শিক্ষার্থীদের জন্য আরেকটি নতুন ক্যাটাগরি যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি; যা পরের বছর থেকেই কার্যকর করা হবে।
অনুষ্ঠানে কোনো কথা না বললেও সাংবাদিকদের অনুরোধে অনুষ্ঠান শেষে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
‘গাঙচিল’ উপন্যাস নিয়ে তিনি বলেন, “জীবন ঘনিষ্ঠ উপন্যাস লিখতে চেয়েছি। যারা বার বার জলোচ্ছ্বাসের কারণে স্থানচ্যুত হয়, নতুন করে ভেঙে যাওয়া সংসার গড়ে তোলে, জীবনের এই ভাঙা-গড়া চিত্র নিয়েই উপন্যাসটা লিখেছি।”
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশন।
উপন্যাসটি আদৌ পাঠকরা গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন বলে জানান তিনি। তবে তার দাবি, প্রকাশের পর বইমেলার বেস্ট সেলার বই ছিল ‘গাঙচিল’।
“এটা আবার সিনেমা হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। এদেশে কোনো পলেটেশিয়ানের উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র হয়নি। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।” বলেন ওবায়দুল কাদের।
শিগগিরই ছবির শুটিং শুরু হবে বলে জানান প্রযোজক ও নায়ক ফেরদৌস।
তিনি বলেন, “আমরা ছবিটি নিয়ে আমরা অনেক আশাবাদী। এই চলচ্চিত্র করার সময় আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করে শুটিং করতে হবে এটা আমাদের মাথায় আছে। তারপরও বিশ্বমানের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের চেষ্টা করব।”