‘শাবি কে মহ কমেল শোদ’ নামে নতুন একটি চলচ্চিত্রের শুটিং করতে চলতি সপ্তাহে ঢাকায় এসেছেন তিনি। রোববার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকারে উঠে এলো ইরাক-ইরানের যুদ্ধের ক্ষত নিয়ে বেড়ে উঠা নার্গিস আবইয়ারের নির্মাতা হয়ে উঠার গল্প; সেই সঙ্গে তার কণ্ঠে বাংলাদেশ নিয়ে মুগ্ধতাও ঝরল।
নার্গিস আবইয়ার পড়াশোনা করেন ফার্সি সাহিত্যে। চলচ্চিত্রে মনোনিবেশ করার আগেই শুরু করেছিলেন সাহিত্যচর্চা। ১৯৯৭ সালে তার প্রথম বই প্রকাশ হয়। বিশেষ করে শিশু ও তরুণদের জন্য লিখেছেন তিনি; প্রকাশ হয়েছে ৩০টিরও বেশি বই। নির্মাণে হাত দিয়েছেন প্রথম দশকের মাঝামাঝির দিকে।
শুরুটা কিভাবে?
এ নির্মাতা বলেন, “প্রথমদিকে হলিউডের ছবি দেখতাম। চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে একসময় নিজেও নির্মাণের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। তবে আমার নির্মাতা হয়ে উঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে নির্মাতা বাহমান গবাদির ‘টার্টল্স ক্যান ফ্লাই’ চলচ্চিত্রটি।”
নির্মাণ-ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ‘কাইন্ড ডে এন্ড’, ‘দ্য এন্ড ডে’, ‘ওয়ান ডে আফটার দ্য টেন ডে’সহ বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেন তিনি। পরে হাত দেন চলচ্চিত্রে; একে একে নির্মাণ করেন ‘ট্রেঞ্চ ১৪৩’, ‘ব্রেথ’-এর মতো দর্শকনন্দিত চলচ্চিত্র।
কারণ হিসেবে তিনি জানান, ইরান-ইরাকের যুদ্ধ দেখেই শৈশব কেটেছে তার। শৈশবের সেই দিনগুলো এখনও তার মনে দাগ কেটে আছে। সেই ক্ষত থেকেই চলচ্চিত্রে যুদ্ধকে তুলে আনেন।
সাক্ষাৎকারে উঠে এলো তার শৈশবের যুদ্ধদিনের স্মৃতি, “যুদ্ধের সময় জীবনকে কঠিনভাবে উপলব্ধি করেছি। ওই সময় মানুষ মৃত্যুকে ক্ষণে ক্ষণে উপলব্ধি করেছে। জীবনের বাস্তবতাটা মূলত তখনই বোঝা গেছে।”
চলচ্চিত্রের যুদ্ধের বিপরীতে বৈশ্বিক শান্তির বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান এ নির্মাতা।
নির্মাতা হিসেবে ইতোমধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেও চলার পথটা সুগম ছিল না তার। বিশেষ করে একজন নারী হিসেবে এগিয়ে চলাটা খুব কঠিন বলে মনে করেন তিনি।
ইরানের ধর্মীয় বিধি-নিষেধ ও সরকারের চোখরাঙানির মাঝেও নারী হিসেবে কিভাবে কাজ করছেন তিনি?
তার মতে, শুধু ইরানেই নয়, পৃথিবীর সবখানেই নারীর জন্য কাজ করা খুব কঠিন। একজন নারী একজন পুরুষের তুলনায় দশ গুন বেশি পরিশ্রম করেন। তারপরও সমাজে নারীরা পুরুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
“শুরুর দিকে আমি প্রচুর কষ্ট করেছি। আর এখন ইরানের সর্বস্তরের মানুষের কাছে নারী বা পুরুষ হিসেবে নয়, একজন পরিচালক হিসেবে পরিচিত পেয়েছি।” বলেন তিনি।
লোকেশন হিসেবে বাংলাদেশকে কেন বেছে নিলেন?
তিনি জানান, গল্পের প্রয়োজনেই এ চলচ্চিত্রের ১০% দৃশ্যের শুটিং ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আধুনিকতার বিপরীতে নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাংলাদেশে এখনও বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। সেই বিষয়টি উঠে আসবে সিনেমায়। কয়েকদিন ধরে ঢাকায় যা দেখছি তাতেই মুগ্ধ হচ্ছি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনধারা গল্পের জন্য খুব বেশি দরকার ছিল।”
তার চোখে, ঢাকা শহর খুব আকর্ষণীয় জায়গা। এখানকার মানুষের জীবনযাপন, সংস্কৃতি-সবকিছুই মুগ্ধতা ছুঁয়েছে তাকে।
ঢাকায় শুটিং চলা এ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন এলনাজ শাকেরদুস্ত, হুতান শাকিবা, ফেরেশতে সাদরে উরাফায়ি। ছবির বাংলাদেশ অংশের সমন্বয় করছেন ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগের প্রভাষক মুমিত আল রশিদ।