ভাষার লড়াইটাই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় লড়াই: যশপাল শর্মা

ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিতব্য ‘ফাগুন হাওয়ায়’চলচ্চিত্রে পাকিস্তানি পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করছেনবলিউড অভিনেতা যশপাল শর্মা । ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে বললেন অনেক কথা ।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2018, 09:47 AM
Updated : 19 March 2018, 10:03 AM

ঢাকা থেকে ২৭০ কিমি রাস্তা মেপে, খুলনার পাইকগাছায় নেমে আসা ভরা সন্ধ্যায় দেখা মিলল বলিউডি অভিনেতা যশপাল শর্মার। ততক্ষণে তিনি ডুবে গেছেন ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ধারণ করা পাকিস্তানি পুলিশ অফিসার জামশেদের চরিত্রে।

চরিত্রের পরনে খাকি পোশাক, চোখে কালো রোদ চশমা, পায়ে বুট। চরিত্র থেকে খানিকটা সময়ের জন্য বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যোগ দিলেন তিনি।

আমির খানের সঙ্গে ‘লগান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসা এ অভিনেতা পরবর্তীতে ‘গঙ্গাজল’, ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’সহ বেশ ক’টি চলচ্চিত্রে সহজাত অভিনয় করে উপমহাদেশের দর্শকদের কাছে বেশ পাকাপোক্তভাবেই পরিচিতি পেয়েছেন।

তৌকির আহমেদের হাত ধরে এবার তার আবির্ভাব হলো বাংলাদেশি চলচ্চিত্রেও। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে তার আগ্রহের কারণও নাকি নির্মাতা তৌকির আহমেদ।

তার ‘হালদা’ আর ‘অজ্ঞাতনামা’ চলচ্চিত্র দুটি দেখেই বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহী হন এ বলিউডি অভিনেতা।

ছবি: সাইমুম সাদ

তিনি বলেন, “তৌকির নিঃসন্দেহে একজন মেধাবী নির্মাতা। আমার প্রিয় নির্মাতা ইরানি পরিচালক মাজিদ মাজিদি। আমি বলতে চাই, তৌকির বাংলাদেশের মাজিদ মাজিদি।

তৌকির ইজ গ্রেট। আগে বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পীদের আমি খুব একটা চিনতাম না। আর ওই ছবি দুটি দেখেই ফজলুর রহমান বাবু, তিশার ভক্ত হয়ে গেছি।”

টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পের অনুপ্রেরণায় ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘ফাগুন হাওয়ায়’।

পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্য ও সংলাপ তৌকির আহমেদের। প্রযোজনা করছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।

এতে একজন পাকিস্তানি পুলিশ অফিসার হিসেবে যশপাল শর্মাকে আবিষ্কার করবেন দর্শকরা। বেশ কাঠখড় পুড়িয়েই তৌকিরের চোখে পড়েছেন তিনি।

যশপালের কথায় বিষয়টি সহজেই অনুমেয়, “কলকাতার একজন নির্মাতার সঙ্গে কথা বলেন তৌকির। উনি আমার ব্যাপারে উনার সঙ্গে কথা বলেন।

ছবি: সাইমুম সাদ

পরে জানলাম, তৌকির আমাকে একজন পাকিস্তানি লুকে খুঁজে পেয়েছেন। শুরুতে নিশ্চিত ছিলাম না। পরে ঢাকায় এসে পুরেপুরি নিশ্চিত হয়েছি।”

চিত্রনাট্য পড়ে তিনি জানলেন, ছবির প্রেক্ষাপট ১৯৫২।

তার সরল স্বীকারোক্তি, “সত্যি বলতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন নিয়ে উল্লেখ করার মতো কিছু জানতাম না।

চিত্রনাট্য পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বই-পুস্তক ও ভিডিও দেখে আমি ভাষা আন্দোলন নিয়ে জেনে সত্যিই স্তম্ভিত হয়েছি।”

ভাষা আন্দোলন পাল্টে দিয়েছে তার জানার দুনিয়া, খুলে দিয়েছে ভাবনার দুয়ার। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, দেশে দেশে বিদ্রোহ দেখে বেড়ে উঠা যশপালের ভাবনায় ঘুণাক্ষরেও উঁকি দেয়নি, নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে বুকের তাজা রক্ত বিসর্জন দিতে পারেন বাঙালিরা।

ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বললেন, “এখন আমি মনে করি, ভাষার লড়াইটাই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় লড়াই।”

যে লড়াইয়ে ভাষার দাবিতে রাজপথে নামা বাঙালিদের উপর নির্বচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি পুলিশ অফিসাররা। তেমনই একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি।

চিত্রনাট্য থেকে ছেঁকে এনে পরিচিত করালেন জামশেদকে, “জিন্নাহ আমাকে চন্দন নগরে মোতায়েন করেন। আমার কাজই হলো বাংলাদেশে উর্দুকে ছড়িয়ে দেওয়া আর বাংলাকে বন্ধ করে দেওয়া।

সব সময় তটস্থ থাকি, কেউ যেন বাংলা বলতে না পারে। উর্দুতে লিখতে হবে, উর্দুতে ভাষণ হবে, উর্দুতেই বই লিখতে হবে। এমনকি দোকানে চা চাইলেও উর্দুতেই চাইতে হবে।”

বলতে বলতে একবার দম নিয়ে বললেন, “ চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি ও কমেডি হলো, এই যে সবখানে চাপিয়ে দেওয়া উর্দুর বিপরীতে বাংলাদেশের পাখি অবধি বাংলা বলা শুরু করেছে, ‘বউ কথা কও’, ‘বউ কথা কও’!

জামশেদ তো ভাবনায় পড়ে গেল, মানুষের মধ্যে উর্দু জোর করে ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তাই বলেও পাখিকেও উর্দু শিখাবে কী করে?

জিন্নাহে চিঠি পাঠালো, অনুগ্রহ করে নতুন নিয়ম জারি করুন। যাতে প্রত্যেক পশু-পাখিও উর্দুতে কথা বলতে বাধ্য হয়।”

চলচ্চিত্রটির ধারণা, চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ভালো কিছু করার স্পৃহা দেখে মুগ্ধ যশপাল জানালেন, চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশি সহশিল্পীদেরও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, “সহশিল্পীরা যথেষ্ট সহায়তাপরায়ণ। যখন যা লাগছে, যে কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের পাশে পাচ্ছি আমি।

ওদের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো। সঙ্গে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির জন্যও শুভকামনা থাকলো।”