৭১ যেনতেন বিষয় না: আবুল হায়াত

বিজয় দিবসে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের নাটকের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় নির্মাতা ও অভিনেতা আবুল হায়াত। ক্ষোভ থেকেই এ বছরও তিনি নির্মাণ করেননি মুক্তিযুদ্ধের নাটক।

রুদ্র রুদ্রাক্ষবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2017, 10:08 AM
Updated : 16 Dec 2017, 11:11 AM

গ্লিটজ: এ বছরের বিজয় দিবসে আপনি কোনো নাটক বানান নি কেন?

আবুল হায়াত: ক্ষোভ থেকে। ৭১ যেনতেন বিষয় না। এটা বাঙালির জন্য অনেক বড় একটা বিষয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অতীতে অনেক ভাল কাজ হয়েছে, এখন হচ্ছেনা। বিশেষ করে নাটকে তো একদমই হচ্ছেনা। বাজেট এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।

আপনাকে চ্যানেল ২ লাখ টাকা দিয়ে বলবে বানান একটা মুক্তিযুদ্ধের নাটক। এটা কি ফাজলামো নাকি? ২ লাখ টাকায় মুক্তিযুদ্ধের নাটক হয়?

একাত্তরের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে হলে আপনাকে বেশি বাজেটেই বানাতে হবে। এখনকার শাহবাগ বা গুলিস্তান দেখিয়ে আপনি দর্শককে বোঝাতে পারবেন না যে এটা ৭১ সাল। দর্শকের সাথে প্রতারণা এটা।

গ্লিটজ: তাহলে বলতে চাইছেন এখন মুক্তিযুদ্ধের উপরে যে নাটকগুলো হচ্ছে সেগুলো মানসম্মত না?

আবুল হায়াত: প্রায় সব নাটকই মানসম্মত না। কিছু কিছু ভাল কাজ হয় সেগুলো উদাহরণ হতে পারেনা।

যেমন ধরুন ৭১ সালের একটা তরুণকে দেখানো হচ্ছে আর তার গায়ে রয়েছে পোলো লোগো লাগানো টিশার্ট। বাজেট এতই কম থাকে যে  ঠিকঠাক পোশাক দেখভাল করার জন্যও কোনো লোক নিয়োগ দিতে পারেন না একজন নির্মাতা।

গ্লিটজ:কিছু কিছু ভাল কাজ হয় বললেন, সেটাও তো একই বাজেটে হয়। তাহলে তারা কীভাবে ভালো কাজ করছেন?

আবুল হায়াত: নিজের পকেট থেকে দিচ্ছে,লোকসান গুনছে। এভাবে কয়জন কাজ করবে। দিনের পর দিন লোকসানে যাওয়ার সাহস কয়জনের থাকে? আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করবেন এখন  অনেকেই সরাসরি ৭১ না ধরে ৭১ এর চেতনা নিয়ে নাটক বানাচ্ছে। এটাও কিন্তু বাজেট স্বল্পতার কারণে।

গ্লিটজ:স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণ কি শুধুই নিয়ম রক্ষা, নাকি এগুলো প্রভাবক এখনও?

আবুল হায়াত: ৪৬ না, যতদিন বাংলাদেশ নামে একটা দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে, ততদিন জন্মগল্প নিয়ে নাটক সিনেমা নির্মাণ হওয়া উচিৎ।

আপনি যখন টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধের নাটক দেখবেন তখন মনে হবে শুধুই নিয়ম রক্ষার জন্য করা হচ্ছে। বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস এলো এবার এ প্রসঙ্গে কিছু বানাতে হবে তাই বানিয়ে ফেলা। এটা আদৌ ভালো প্রবণতা না।

কারণ একটা নাটক বা সিনেমা দলিল হয়ে থেকে যায়।এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানবে কিন্তু আমাদের তৈরি নাটক বা সিনেমা দেখে। বলতে পারেন এ বিষয়ে তো অনেক কাজ হয়েছে। হ্যাঁ স্বীকার করছি হয়েছে।

কিন্তু আজ যে জন্ম নিল সে কিন্তু বিশ বছর আগে নির্মিত কোনো কাজ খুঁজে দেখবেনা। তার সামনে উপস্থাপন করতে হবে তার সময়ের মত করে সেই সময়ের গল্প।

বাজেট স্বল্পতার কারণে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি সে প্রয়াসে। যা বানাচ্ছি তার প্রায় সবই হাস্যকর কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে। অথচ ৭১ সাল আমাদের ভিত্তি। তাই এটা নিয়ে সবারই বিশেষ নজর দেওয়া দরকার ছিল।

গ্লিটজ: মোটাদাগে সবার বলতে আপনি ঠিক কাদের ইঙ্গিত করলেন?

আবুল হায়াত: এখানে আমি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কথা বলছি, সরকারের কথা বলছি।

গ্লিটজ: নাটকের ক্ষেত্রে সরকার কি ভূমিকা রাখতে পারে?

আবুল হায়াত: নাটকের ক্ষেত্রে না, মুক্তিযুদ্ধের নাটকের ক্ষেত্রে। এখানে সরকারের উচিৎ অনুদান দেওয়া। শুধু মাত্র মুক্তিযুদ্ধের নাটকের জন্য বছরে সরকার পরীক্ষিত কিছু নির্মাতাকে অনুদান দেবে। যাদের হাত ধরে ফুটে উঠবে যুদ্ধ দিনের আসল চিত্র।

এটা সত্যি খুব জরুরি। কারণ এদেশে বারবার ইতিহাস বিকৃত হয়। একেকজন একেকরকম ব্যাখ্যা দেয়। এতে করে প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়।

৭১ সাল খুব কাছ থেকে দেখা কিছু মানুষ এখনও বেঁচে আছে। তাই স্বাধীনতার সপক্ষের এই সরকারের উচিৎ সিনেমার মত নাটকেও অনুদান দেওয়া। এতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র আরও বেশি করে ধারণ করা সম্ভব হবে। আর প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে দলিল হিসেবে থেকে যাবে।