গুরুতর অসুস্থ বারী সিদ্দিকী

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী গুরুতর অসুস্থ। বর্তমানে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2017, 08:42 AM
Updated : 18 Nov 2017, 09:45 AM

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে আছেন সংগীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শুধু হৃদরোগই নয়, দীর্ঘদিন ধরে  কিডনি রোগ ও ডায়বেটিসের জটিলতায় ভূগছিলেন তিনি। বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল ওয়াহাবের তত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

শুক্রবার রাতে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করলে তাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন পুত্র বারী সিদ্দিকী। তিনি বলেন, “আব্বার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো। ডাক্তারদের মতে, এটি মেজর হার্ট অ্যাটাক। তাৎক্ষণিক তাকে লাইফ সাপোর্টে নেন ডাক্তাররা। এখনও তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। তার শারীরিক অবস্থা চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ করছেন। আটচল্লিশ ঘন্টা যাওয়ার আগে আসলে কিছুই বলা যাচ্ছে না। আমরা সবার কাছে দোয়া চাই।”

সাব্বীর সিদ্দিকী জানান, দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি রোগে ভূগছিলেন বারী সিদ্দিকী।  ২০১৬ সাল থেকে তিনি নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে আসছিলেন।  

বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বাঁশিবাদক। মূলতঃ গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করে থাকেন তিনি। 

শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হয় তার। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।

ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারি সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিক এরুপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।

কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে নব্বইয়ের দশকে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছান এ শিল্পী। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বারী সিদ্দিকী এই ‍নির্মাতার ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত “শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তিনি অতিদ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন তিনি। একক গানের পাশাপাশি বারী সিদ্দিকী বেশকিছু চলচ্চিত্রেও কণ্ঠ দিয়েছেন।