উনার উপস্থিতি ভীষণ মিস করছি
ফারুক আহমেদ
নব্বইয়ের দশকে বিটিভির ‘অচিন বৃত্ত’ নামে একটি নাটকে কাজ করতে গিয়ে উনার সঙ্গে সম্পর্কটা পোক্ত হয়। তারপর একসঙ্গে অনেক কাজ করেছি। দেখাও হয়েছে অনেকবার। অল্প কিছুদিনের জন্য আমেরিকা থেকে যেবার ফিরে এসেছিলেন সেবার উনার সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা হয়।
শুনলাম পরদিন আবার চলে যাবেন নিউইয়র্কে। আগের রাতেই উনার বাসায় গেলাম। তিনি সবাইকে বললেন, ফারুককে নিয়ে একটা ঘটনা আছে।
ঘটনাটা হলো, ‘ছোট ছেলের জন্মদিনে ভুলে ফারুককে আমি দাওয়াত দিইনি। না বলার পরও ফারুক চলে এসেছে। এসে বলে আপনি তো দাওয়াত দিলেন না। আমি দাওয়াত ছাড়াও চলে এসেছি। এটাই হলো প্রকৃত ভালোবাসা।’
বলতে বলতেই উনার দুচোখ ছলছল করে উঠছিল। সেবারই তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। উনি চলে যাওয়ার পরও আমি অনেক নাটকেই কাজ করছি। কিন্তু নাটকে উনার উপস্থিতি ভীষণ মিস করছি।
দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করতেন
মনিরা মিঠু
হুমায়ূন স্যার অনেকটা বারো বছরের শিশুর মতো। তিনি জাদু দেখাতেন আমাদের। আমি একবার প্রশ্ন করলাম, স্যার মশা কামড়ালে ফুলে যায় কেন? উনি বললেন আরেকদিন বলব।
পরে উনি অনেক বই ঘাটাঘাটি করে একদিন বুঝালেন। মনে হবে যেন মশার উপর হাজার হাজার বই পড়েছেন! আর তিনি খুব সুন্দর ছবি আঁকতেন। আমাদেরও বলতেন ছবি আঁকা শিখতে চাইলে ওমুক বই পড়ে প্র্যাকটিস করো।
আর তিনি অসহায় দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করতেন। নুহাশ পল্লীর কেয়ার টেকার নুরুল হকের মেয়ের বিয়ের সময় তিনি কী এক কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন। পরে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বললেন, নুরুলের মেয়ের জন্য সুন্দর দেখে দুল কিনবা। দুল নিয়ে জুয়েলের সঙ্গে বিয়েতে যাবা। গিয়েছিলাম সেবার।
পরে আরেকবার প্রোডাকশন ম্যানেজার জুয়েলের ছেলে খুব অসুস্থ হয়েছিল। আমার সামনে তাকে চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছেন। আসলে এগুলো অনেকেই জানে না। উনি প্রচারও করেন নি।
স্যারের সঙ্গে ভালো কাজের স্মৃতিগুলো নিয়েই বাঁচব
ডা. এজাজ
এখনকার নাটকের সংলাপ দেখলেই উনার কথা মনে পড়ে। তিনি কত সু্ন্দর করে লিখতেন। উনি কত সুন্দর করে আমাদের ভেতর থেকে অভিনয়টা বের করে আনতেন। তিনি আমাকে যেমন স্নেহ করতেন আর কাউকে করেনি।
এখন হরদম কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এগুলোর কথা দর্শকরা বলে না। স্যারের যে কাজগুলো করেছি সেই কাজগুলোর কথা সবার কাছ থেকে শুনি এখনও।
স্যার চলে গেছেন আর আমাদের সমস্ত ভালো কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন। স্যারের সঙ্গে ভালো কাজের স্মৃতিগুলো নিয়েই বাঁচবো।