রাফী বলেন, “আমাদের তুফান নিয়ে তিনটা সিক্যুয়েলের পরিকল্পনা রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় পর্বের ঘোষণা করব।”
Published : 10 Jul 2024, 03:32 PM
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ‘তুফান’ সিনেমা ‘তেমন ব্যবসা করতে পারেনি’ বলে কলকাতার সংবাদমাধ্যমে নানা ধরনের খবর প্রকাশ হলেও, পরিচালক রায়হান রাফী বলেছেন, সিনেমাটি কলকাতার অনেকের ‘ভালোই লেগেছে’।
রাফীর বিশ্বাস, দুই বাংলার সুপারস্টাররা একসঙ্গে কাজ করলে আগামীতে বাণিজ্যিক সিনেমা ‘অন্য রূপ’ নেবে। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সিনেমা পশ্চিমবঙ্গে ‘আরো জনপ্রিয়’ হবে।
কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘তুফান’, ঢাকাই সিনেমা এবং যৌথ প্রযোজনার কাজ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন রাফী। তিনি বলেছেন, প্রচলিত বাণিজ্যিক ধারার কাঠামো ভেঙে, বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা তৈরির পথেই হাঁটছেন তিনি।
এছাড়া ‘তুফান’ দেখিয়ে বাংলাদেশের মুখ থুবড়ে পড়া অনেক হল মালিকই খরচ তুলে নিয়েছে বলেও দাবি করেন রাফী।
পশ্চিমবঙ্গে ‘তুফান’ মুক্তি পেয়েছে গত ৫ জুলাই। প্রতিক্রিয়া কেমন জানতে চাইলে আনন্দবাজারকে রাফী বলেন, “খুবই ভালো। যারা সিনেমাটা দেখছেন, তাদের ভালো লাগছে। এখানে একটা কথা বলে রাখতে চাই। বাংলার সিংহভাগ দর্শক সহজ সরল। তাদের কথা ভেবেই সিনেমার ভাবনা। কারণ প্রচারের শুরুতেই আমি বলে দিয়েছিলাম, ‘কেজিএফ’, ‘পুষ্পা’ বা ‘অ্যানিমাল’ এর মত সিনেমা হবে ‘তুফান’।
পুরনো খবর:
'তুফান' নির্মাতা রাফীর সঙ্গে দেব সত্যিই কাজ করতে চান?
কলকাতায় 'তুফান'র প্রচারেও অপু-বুবলী প্রসঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গে এই সিনেমার ব্যবসা নিয়ে যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে, সে বিষয়ে রাফী বলেন, “আমি জানি চলচ্চিত্র সমালোচকদের কারো কারো হয়তো ‘তুফান’ তেমন ভালো লাগেনি। আমি তাদের মতামতকে শ্রদ্ধা করি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একই সঙ্গে দুই শ্রেণিকে খুশি করা একটু কঠিন। আগামী দিনে আমরা আরো ভালো করব।”
এর আগে ‘হাওয়া’, ‘সুড়ঙ্গ’ ভারতে ব্যবসা করলেও ‘তুফান’ আশানুরূপ ‘ফলাফল আনতে পারেনি’ কেন প্রশ্ন করলে রাফী বলেন, “ বাংলাদেশে ১০-১৫ দিনের মধ্যে আমরা বাজেটের টাকা ফিরে পেয়েছি। অসাধারণ ঘটনা। তার মানে, বাণিজ্যিক সিনেমার চাহিদা এখনও রয়েছে।
“আবার দেখুন, বলিউডের অনেক সিনেমা কিন্তু বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারছে না। পশ্চিমবঙ্গে ‘হাওয়া’র পর ‘সুড়ঙ্গ’র ক্ষেত্রে একটু ভালো ব্যবসা করেছি। ‘তুফান’ সিনেমায় সেটা আরো একটু ভালো হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আগামী দিনে বাংলাদেশের সিনেমা পশ্চিমবঙ্গে আরো বেশি সংখ্যক দর্শককে আকর্ষণ করবে। এক দিনে তো নজির তৈরি হয় না! ছোট ছোট পদক্ষেপে একদিন সাফল্য আসবেই।”
রাফী বলছেন, শাকিব খানের ‘তুফান’ সিনেমা চালিয়ে বাংলাদেশের অনেক প্রেক্ষাগৃহ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:
কলকাতায় মুক্তি পাচ্ছে 'তুফান', প্রচারে গেলেন শাকিব
“অনেক হল মালিক ব্যবসায় খুশি। তারা জানিয়েছেন, এই টাকায় তারা আগামী এক-দেড় বছরের হলের খরচ তুলে নিয়েছেন।”
নাচ, গান ও অ্যাকশন দিয়ে বাণিজ্যিক সিনেমার প্রচলিত কাঠামো ভেঙে নতুন ধারা তৈরিরও চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন রাফী।
“বাংলাদেশেও এখন আগের বাণিজ্যিক ফর্মুলার সিনেমা চলে না। আমরা সেটা থেকে বেরিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ গল্প বলার চেষ্টা করেছি। গল্প বলার মধ্যে নতুন একটা স্টাইল আনার চেষ্টা করেছি। ‘রকি ভাই’ বা ‘পুষ্পা’র মত আমরাও বাংলায় একটা চরিত্র তৈরি করতে চেয়েছি। সিনেমা অনেকে হয়ত দেখবে না। কিন্তু আমার ধারণা, ‘তুফান’ নামটা কিন্তু মানুষের মাথায় ঢুকে গেছে।”
রাফী বলেছেন, ভারতের সেন্সর বোর্ড থেকে তার কাছে ‘তুফান’ এর সিক্যুয়েল কবে আসবে সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে।
“আমাদের তিনটা সিক্যুয়েলের পরিকল্পনা রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় পর্বের ঘোষণা করব।
বাংলাদেশে সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে নির্মাতাদের কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রশ্ন করলে পরিচালক বলেন, “শিল্পসত্তার নিরিখে আমরা কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে রয়েছি। সেন্সর বোর্ডের একটু কড়াকড়ি রয়েছে। তবে তার থেকেও বড় বিষয়, প্রযুক্তি।
“কলকাতায় শুটিং করতে হলে প্রয়োজনে সহজেই একটা ক্যামেরা মুম্বাই থেকে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু, বাংলাদেশ হলে, ক্যামেরার জন্য ভিসা করাতে হয়! আবার দেখুন, ‘তুফান’র শুটিংয়ে প্রায় ১৫০টি পিস্তল ব্যবহার করেছি। এটা বাংলাদেশে করতে হলে কিন্তু খুব কঠিন হত। পাশাপাশি, এগুলো যে ‘শুটিংয়ের বন্দুক’, তা বোঝানোর জন্য কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমতির প্রয়োজন।”
সাক্ষাৎকারে বাংলা সিনেমা দেখতে বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানান রাফী।
আরও পড়ুন:
তার ভাষ্য, “বাংলা সিনেমা নিয়ে নাক সিঁটকানোর অর্থ কিন্তু নিজেকেই অপমান করা। শুনেছি, কলকাতার নির্মাতারা নাকি সবাই বলিউডে চলে যাচ্ছেন। কেন সেটা হবে? আমাদের মেধা আমাদের কাছেই থাকা উচিত। ভারতে তামিল, তেলুগু, মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে আগে তাদের সিনেমাকে অগ্রাধিকার দেয়। তাহলে আমরা কেন পারব না?””
সাক্ষাৎকারে ফের প্রশ্ন ওঠে, কলকাতার অ্যাকশন হিরো জিৎকে নিয়ে রাফী সত্যিই কাজ করছেন কী না।
উত্তরে রাফী বলেন, “দেখুন, কলকাতার সব শিল্পীর সঙ্গেই আমার কথা হয়। আমি তাদের ভক্ত। কেন কাজ করব না! আমি আগে গল্প লিখি। তার পর অভিনেতা নির্বাচন করি। যেমন শাকিবের সঙ্গে চঞ্চল ভাই (চঞ্চল চৌধুরী) আমার সিনেমায় আসার পর যেন একটা বিস্ফোরণ হল। কলকাতার সুপারস্টারেরা একসঙ্গে কাজ করলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাণিজ্যিক ছবি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। অনুরাগী এবং দর্শকদের বলতে চাই, দয়া করে কোনো গুঞ্জনে কান দেবেন না। ঠিক সময়ে সব জানতে পারবেন।”
আরও পড়ুন:
স্টার সিনেপ্লেক্সে ও যমুনা ব্লকবাস্টারে 'তুফান' এর শো বেড়ে দ্বিগুণ